প্রশান্ত দাস
তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে বাংলা হয়ে উঠছে ভারতের অন্যতম গন্তব্য। নিউটাউনের হাতিশালায় ১৭ একর জমির উপর নির্মিত ইনফোসিসের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস উদ্বোধন করে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্তত ৪ হাজার কর্মসংস্থান হবে এই ক্যাম্পাসে। বুধবারের এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে রাজ্যে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বাংলাই এখন শিল্পের জন্য আদর্শ জায়গা।’
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের ছত্রে ছত্রে বাংলার শিল্পায়নের কথা উঠে এসেছে। তাঁর কথায়, ‘একাধিক সংস্থা বাংলায় শিল্প গড়েছে এবং আগামী দিনেও একাধিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা শিল্প গড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। আমরা ইউএসএ-র মতো এখানে দু’হাজার একর জমির উপর সিলিকন ভ্যালি তৈরি করেছি। সেখানে ২৭ হাজার কোটি টাকার লগ্নি হয়েছে। ২৫ হাজার আইটি জব তৈরি হয়েছে। ২৮টি কোম্পানি ইতিমধ্যেই সেখানে কাজ শুরু করেছে এবং আরও ৪০টি কোম্পানি কাজ শুরু করবে। ১১টি কোম্পানি কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। রাজ্যে ২২টি আইটি পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে।’ তবে বাংলাই কেন শিল্পের আদর্শ স্থান? নিজের বক্তব্যের সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বাংলায় বিপুল গ্রাহক সংখ্যা, কাঁচামালের স্বল্পমূল্যতা, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবারহ, নিদারুণ কর্মের পরিবেশ এবং সর্বোপরি এ রাজ্যের ছেলে, মেয়েদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাংলায় শিল্প বিকাশের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। এরপরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা বঙ্গে আরও বিনিয়োগ করুন। সরকার সব রকম সহযোগিতা করবে।’
তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের জন্য অত্যাধুনিক ইন্টারনেটের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘বাংলায় শিল্পের জন্য সরকার ল্যান্ড ব্যাঙ্ক তৈরি করেছে। তাজপুরের মতো সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে কেবল ল্যান্ডিং পলিসি গৃহীত হয়েছে।’ অতীতে প্রতিদিন গড়ে ২৩ ঘণ্টা লোডশেডিং হত বলে অভিযোগ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলায় এখন আর লোডশেডিং হয় না। এটাও বাংলায় শিল্পের অনুকূল পরিবেশ তৈরির অন্যতম কারণ। আগামী ১০০ বছর রাজ্যে বিদ্যুতে ঘাটতির কোনও সম্ভাবনা নেই।’
দেউচা পাচামিতে কয়লাখনির প্রসঙ্গও টেনে আনেন তিনি। মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘অতীতে ধর্মঘটের কারণে ৩৬৫ দিনের মধ্যে অন্তত ৩০০ দিন নষ্ট হত। কিন্তু শেষ ১৩ বছরে ১ দিনও কর্মদিবস নষ্ট হয়নি। এর কৃতিত্ব জনগণের।’ এখানেই শেষ নয়, নির্দিষ্ট খতিয়ান পেশ করে মুখ্যমন্ত্রী গর্বের সঙ্গে জানিয়েছেন, রাজ্যে এই মুহূর্তে ২,২০০টি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা কাজ করছে যার জেরে বাংলার জিডিপিও ঊর্ধ্বমুখী। পশ্চিমবঙ্গ প্রথম সারির তথ্যপ্রযুক্তি রাজ্য।
পাশাপাশি ৩৪ বছরের বাম শাসনকে কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর বলেন, ‘যখন তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় এসেছে, রাজ্যে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের কোনও সুযোগ ছিল না। বর্তমানে প্রতিভার দিক থেকে বাংলা গোটা দেশে প্রথম। এমনকী এ রাজ্যের ছেলে, মেয়েরা দাপটের সঙ্গে পৃথিবীর সর্বত্র কাজ করছে। আমার বহুদিনের স্বপ্ন ছিল, ইনফোসিস এখানে আসুক। আমি আশাবাদী, ইনফোসিসও আমাদের আইটি-র ছেলে, মেয়েদের নৈতিক শিক্ষা প্রদানে সক্ষম হবে।’ ইনফোসিস যেন কলকাতা শহরে সুষ্ঠুভাবে নিজেদের কাজ পরিচালনা করতে পারে, তা তদারকির গুরুদায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রী অর্পণ করেছেন বিধায়ক শওকত মোল্লার উপর। সেই সঙ্গে কলকাতা পুলিশ এবং বিধাননগর কমিশনারেট যেন যৌথভাবে ইনফোসিসকে সহযোগিতা করে, সেই নির্দেশও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
ইনফোসিসের ভূয়সী প্রশংসা করে এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এই সংস্থা বাংলার জন্য নতুন ইতিহাস তৈরি করল। তাঁদের দেখে বাকিরাও বাংলায় আসার জন্য উৎসাহ পাবে। ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব বাণিজ্য সম্মেলন রয়েছে। সব দেশের শিল্পপতি ও প্রতিনিধিদের বলব, আসুন দেখে যান, বাংলার শিল্পের পরিবেশ।’ এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, মুখ্যমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অমিত মিত্র, মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সুজিত বোস, বাবুল সুপ্রিয়, কলকাতা পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার, বিধায়ক শওকত মোল্লা প্রমুখ।