ট্যাব দুর্নীতি কাণ্ডে আন্তঃরাজ্য যোগ! দীর্ঘ তদন্তে এমনটাই অনুমান রাজ্য পুলিশের তাবড় গোয়েন্দাদের। রাজ্য পুলিশের সদর দফতর তথা ভবানীভবন সূত্রে খবর, ট্যাব দুর্নীতি কাণ্ডে ইতিমধ্যেই রাজ্যের একাধিক প্রান্ত থেকে গ্রেপ্তার হয়েছে ১১জন। তাদের জেরা করে এমনটাই অনুমান ভবানীভবনের। এদিন ভবানীভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করে এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার বলেন, ‘আমরা শিক্ষা দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। পরিসংখ্যান চেয়েছিলাম। সেই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির মোট ১৬ লক্ষ পড়ুয়ার জন্য ট্যাবের টাকা বরাদ্দ হয়েছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষা দফতর, এফআইআর এবং একাধিক দফতরের নথি খতিয়ে দেখে আমরা যা বুঝেছি, তাতে প্রতারিত হয়েছেন ১৯১১ জন পড়ুয়া। অর্থাৎ, শতাংশের হিসেবে যা ০.১ এর সামান্য বেশি।’ যদিও শতাংশের হিসেবে প্রতারিতদের সংখ্যা কম হলেও তা অভিপ্রেত নয় বলেই মত এডিজির।
তবে টাকা ফেরতের আশ্বাসও দিয়েছেন পুলিশকর্তা সুপ্রতিম সরকার। তাঁর কথায়, ‘দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। যারা প্রতারিত হয়েছেন, তাদের টাকা অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাবে’। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কলকাতা পুলিশ বাদে রাজ্যে ট্যাব কাণ্ডে মোট প্রতারিত হওয়ার সংখ্যা ছিল ৭৮১জন। গত চব্বিশ ঘণ্টায় যে সংখ্যাটা লাফিয়ে বেড়েছে। শুক্রবারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সংখ্যাটা ১৫১১। অন্যদিকে নতুন করে অভিযোগ দায়ের হয়েছে আরও ৩৭টি। মোট ধৃতের সংখ্যা ১১। যাদের জেরা করেই মহারাষ্ট্র, রাজস্থান এবং ঝাড়খণ্ড যোগ পেয়েছে রাজ্য পুলিশ।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাতে মালদহ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রের মালিককে। বৈষ্ণবনগরের চকসেহেরদী গ্রামের বাসিন্দা সুব্রত বসাককে তার বাড়ি গ্রেপ্তার করে পূর্ব বর্ধমান জেলার পুলিশ। ধৃতের বাড়ি থেকে ল্যাপটপ এবং বেশ কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে, মালদহের বৈষ্ণবনগর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় পাঁচ সাইবার ক্যাফে মালিককে। ধৃতেরা হলেন রকি শেখ, পিন্টু শেখ, শ্রবণ সরকার এবং জামাল শেখ। সাইবার ক্যাফেতে বসেই প্রতারণার জাল বুনেছিল ধৃতরা।
অন্যদিকে ট্যাব দুর্নীতি কাণ্ডের তদন্তে নেমে বিরাট সাফল্য পেয়েছে কলকাতা পুলিশ। কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, জোড়াবাগান থানা এলাকার যে ৪২ জন পড়ুয়া প্রতারিত হয়েছিলেন, তাদের টাকা ইতিমধ্যেই উদ্ধার করা গিয়েছে। একই সঙ্গে ফ্রিজ করা হয়েছে সমস্ত অ্যাকাউন্ট। শুধু তাই নয়, সেক্ষেত্রেও মিলেছে বিহার যোগ। তদন্তে লালবাজার জানতে পেরেছে, যে সমস্ত অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে, তার সমস্তটাই বিহারের কিশানগঞ্জের। উল্লেখ্য, তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই ১০ জনের বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠন করেছে কলকাতা পুলিশ। যারা খতিয়ে দেখেছেন বিকাশভবনের দেওয়া একাধিক তথ্য। যা দেখে তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান, স্কুল থেকেই প্রতারকদের হাতে গিয়েছে পাসওয়ার্ড। যার জন্য অবশ্য স্কুলের দুর্বল পাসওয়ার্ডকেই দায়ী করেছেন লালবাজারের গোয়েন্দাদের একাংশ। তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, সাধারণ ট্যাব প্রাপকদের অ্যাকাউন্ট এডিট করার অনুমতি থাকে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছেই। লালবাজারের অনুমান, স্কুল কর্তৃপক্ষ যখন পড়ুয়াদের তথ্য নির্দিষ্ট পোর্টালে আপলোড করে, ঠিক সেই সময়ই কোনও কারণে হ্যাক হয়ে যায় পাসওয়ার্ড। যা পরে নিজেদের মতো করে ব্যবহার করে প্রতারকরা।