কলকাতা, ১১ জানুয়ারি: সন্দেশখালি কাণ্ডে ইডির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এফআইআর-এর তদন্তে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে বসিরহাটের ন্যাজাট থানায় দায়ের হওয়া এফআইআর-এর ওপর ভিত্তি করে কোনও তদন্ত করা যাবে না। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনে ওই এফআইআর-এর ফরেনসিক করানো হবে বলে জানিয়েছে আদালত। আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা এই নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ২২ জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে।
বিচারপতি ন্যাজাট থানার ওসি-র স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, কেন দুটো এফআইআর-এ দুইরকম অভিযোগ? এবিষয়ে রাজ্যের জবাব তলব করেছে আদালত। এবিষয়ে হলফনামা দিয়ে রাজ্যকে জানাতে বলেছে আদালত। তিনি দুটো এফআইআর-এর স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ন্যাজাট থানার ওসি হয় তথ্যগুলোকে খতিয়ে দেখেননি, নাহলে তথ্য গোপন করেছেন। এরপরই তিনি এই দুটো এফআইআর ফরেন্সিকে পাঠানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এদিন আদালতে ইডি বলে, সন্দেশখালিতে তদন্তে গিয়ে আক্রান্ত হলেন ইডির আধিকারিকরা। অথচ ওই দিন ন্যাজাট থানায় প্রথম অভিযোগ দায়ের হয়েছে ঠিক সকাল সাড়ে দশটায়। এফআইআর করেছেন শেখ শাহজাহানের স্বঘোষিত কেয়ারটেকার। তিনি অভিযোগ করেন, বাড়ি থেকে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা চুরি করেছে ইডি। শিশু ও মহিলাদের ওপর মারধরের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া মহিলাদের শ্লীলতাহানি করেছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন শেখ শাহজাহানের কেয়ারটেকার পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তি। তবে ন্যাজাট থানার এসআই পিনাকী সরকার দ্বিতীয় যে অভিযোগ করেছেন, সেই এফআইআর-এ চুরি এবং শিশু ও মহিলাদের ওপর হামলার কোনও অভিযোগ নেই। সেই এফআইআর-এ বলা হয়েছে, প্রায় ৩০০ উন্মত্ত জনতা হামলা চালিয়েছে। উল্লেখ্য, এদিন দুপুর দুটো নাগাদ এসআই পিনাকী সরকার ঘটনার তদন্তে যায়।
এই দুই এফআইআর-এর অসঙ্গতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ইডি। যদিও ২টি FIR-এ ন্যাজাট থানার ওসি শুভাশিস প্রামাণিকের সই রয়েছে। ইডির প্রশ্ন, সকালে শাহজাহান শেখের বাড়ির স্বঘোষিত কেয়ারটেকারের এফআইআর-এ চুরি ও মারধরের অভিযোগ করেছেন। অথচ পুলিশ আধিকারিকের করা এফআইআর-এ তার কোনও উল্লেখ নেই। নিজের বাহিনীর আধিকারিক যখন এই ধরণের কোনও অভিযোগ করেননি, তখন কেন অন্যের করা এফআইআর-এর ওপর ভিত্তি করে ইডি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে একের পর এক জামিন অযোগ্য ধারা দেওয়া হল? এরপরই এই অভিযোগ নিয়ে ব্যাপক সংশয় তৈরি হয়। তখন আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত শাহজাহানের স্বঘোষিত কেয়ারটেকারের করা এফআইআর-এ স্থগিতাদেশ দেন বিচারপতি রাজশেখর মান্থা।
এদিকে আজ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ন্যাজাট থানায় বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। তারা থানা ঘেরাও করে। শেখ শাহজাহানের গ্রেপ্তারির দাবিতে বিক্ষোভ দেখায় তারা। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় বাহিনী নামিয়ে গ্রেপ্তারির দাবি জানায় গেরুয়া শিবির। পুলিশের সঙ্গে শুরু হয় ধুন্ধুমার। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে খন্ডযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তারা। সেখানে হাজির ছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। থানার ১ কিমি আগে থেকে ১৪৪ ধারা থাকলেও ৫ জনের প্রতিনিধি দল নিয়ে থানায় যেতে চান তাঁরা। প্রথমে বাধা দিলেও পুলিশের পক্ষ থেকে পরে সেই দাবি মেনে নেওয়া হয়।