রাজ্যে কোভিড সংক্রমণ নিম্নমুখী হওয়ায় চিন্তা কমছিল। এর মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়ে দিল উত্তরবঙ্গের অজানা জ্বর। এই জ্বরের প্রকোপ ছড়াতেই তড়িঘড়ি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে বিষয়টি নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। পূর্ব ঘােষণা মতাে পনেরাে দিন অন্তর বৃহস্পতিবার এসএসকেএম হাসপাতালে যাওয়ার সুচি মেনেই সেখানে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনাের সময় উত্তরবঙ্গে ‘অজানা জর’ এ শিশুদের আক্রান্ত হওয়া নিয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে, মমতা বলেন, এই ব্যাপারে যা বলার স্বাস্থ্যসচিবই বলবেন।
এরপরই পাশে দাঁড়ানাে স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম কিছু বলার আগেই মমতা বলেন, ওটা অজানা জ্বর নয়, এমনি জ্বর। আমি সকালেই এনকোয়ারি করে নিয়েছি। এটা অন্যভাবে লিখেছে। এরপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসএসকেএম চত্বর ছেড়ে যাওয়ার আগে স্বাস্থ্যসচিব সাংবাদিকদের বলেন, শিশুদের জ্বর নিয়ে আমাদের বিশেষজ্ঞ টিম সবটা দেখছে। সমস্ত শিশু সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে অক্সিজেনের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
এদিকে উত্তরবঙ্গ জুড়ে শিশুদের মধ্যে জ্বরের প্রকোপ বাড়ছে। মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে কয়েকটি জেলায়। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বলে এই ব্যাপারে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্যকে চিঠি লিখেছেন বিরােধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে উল্লেখ করেছেন উত্তরবাংলার আটটি জেলায় সাড়ে সাতশােরও বেশি শিশু অজানা জ্বরে আক্রান্ত শুধু মালদহ জেলাতেই দু’শাের বেশি শিশু আক্রান্ত।
প্রসঙ্গত বৃহস্পতিবারই মালদহ জেলাতে তিনজন শিশপ মৃত্যু ঘটেছে। কলকাতাতেও শিশুদের মধ্যে জ্বরের প্রকোপ বাড়ছে এনআরএস, শিশুমঙ্গলসহ বেশ কিছু হাসপাতালে শিশুদের ভর্তি হওয়ার ঘটনা দুম করে বেড়ে গিয়েছে।
তাছাড়া পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরেও শিশুদের মধ্যে জ্বরের প্রকোপ বাড়ছে। একসঙ্গে অনেক শিশুর জ্বর হওয়ায় হাসপাতালেও স্থান সংকুলান হচ্ছে না। দুর্গাপুরে দেখা গিয়েছে একটি বেডে চারজন মা চার সন্তানকে আগলে রেখেছেন। সব মিলিয়ে রাজে শিশুদের অজানা ‘জ্বর’ এ আক্রান্ত হওয়া নিয়ে একটা উদ্বেগ কাজ করছে।
জ্বরের কারণ খতিয়ে দেখে দ্রুত রিপাের্ট তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে এই পরিস্থিতিতে মুখমন্ত্রীর এমনি জ্বর এর তত্ত্ব বিতর্ক তৈরি করতে পারে। এমনিতেও এটা ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গির ভরা মরশুম। যদিও এদিন মুখ্যমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্যসচিব বােঝাতে চেয়েছেন এটা কোনও উদ্বেগের বিষয় নয়। পরিস্থিতি সামলানাের মতাে পরিকাঠামাে রয়েছে রাজ্যে।
বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এসএসকেএম-এ স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে কলকাতার পাঁচটি মেডিকেল কলেও হাসপাতালের পরিকাঠামাের উন্নয়ন নিয়ে আলােচনা সেরেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আরও কীভাবে এসব হাসপাতালের পরিকাঠামাে ঢেলে সাজানাে যায়, শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধি করা যায় এবং মেডিকেল কলেজের আসন সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়েও আলােচনা হয়েছে।
এদিকে প্রশাসনের নির্দেশের পর দ্রুত কাজ শুরু করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। কলকাতা মেডিকেল কলেজে আরও কুড়িটি বেড বাড়ানাে হয়েছে। অন্যান্য জেলা হাসপাতালেও বেড বাড়ানাের তােড়জোড় চলছে। তবে স্বাস্থ্য দফতরের আশ্বাস, পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। উদ্বেগের কিছু নেই।