সােমবার ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়ের জন্মদিনে এসএসকেএম হাসপাতালে চালু হল তাঁর নামাঙ্কিত লেভেল ওয়ান ট্রমা কেয়ার সেন্টার।
এই সেন্টারের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, একশো কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ট্রমা সেন্টার দেশের প্রথম সারির ট্রমা সেন্টারগুলির মধ্যেও আধুনিকতম। রাজ্যের নামী সরকারি চিকিৎসকরা এখানে পরিষেবা দেবেন।
২৪৪ শয্যার এই ট্রমা কেয়ার সেন্টারে প্রায় সাড়ে সাতশোর মতো ডাক্তার ও নার্সের কর্মসংস্থান হবে। এখানে স্ক্যান এবং এমআরআই মেশিন, ক্যাথ ল্যাব ইত্যাদি পিপিপি মডেলে স্থাপনের জন্য আরও ১৪ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে রাজ্য সরকার।
এতদিন পর্যন্ত এমার্জেন্সি নিউরোসার্জারির জন্য প্রয়োজনীয় যে দ্রুত পরিষেবা পাওয়া যেত এসএসকেএম-এ, এখন থেকে যে কোনও জরুরি অবস্থায় চিকিৎসা পরিষেবা মিলবে এই ট্রমা কেয়ার সেন্টারে।
এর পাশাপাশি এইমস-এর ধাঁচে সরকারি হাসপাতালে অর্থের বিনিয়ে প্রাইভেট চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে রাজ্য সরকার।
প্রাথমিক পর্যায়ে এসএসকেএম-এর উডবার্ন ওয়ার্ডের ১৫০ টি বেডক এই পেইড প্রাইভেট সার্ভিসের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। রাজ্যের সরকারি ডাক্তাররই এই পরিষেবা দেবেন।
এখান থেকে যে টাকা অর্জিত হবে তার ৭৫ শতাংশ হাসপাতালের উন্নয়নের ব্যয় করা হবে। বাকি ২৫ শতাংশ ডাক্তার এবং নার্সদের ইনসেনটিভ হিসেবে দেওয়া হবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন স্বীকার করে নেন, বর্তমান সরকারের আমলে চিকিৎসা পরিষেবায় বহু উন্নতি করা হলেও এখনও তা প্রয়োজনের অপ্রতুল। সেখানে প্রধান প্রতিবন্ধকতা ডাক্তারের অভাব।
সােমবার মমতা এসএসকেএম-এ বলেন, আমরা কেন্দ্রের কাছে দশ হাজার ডাক্তার চাইলেও ছয় হাজার ডাক্তার পাওয়া গিয়েছে। এখনও রাজ্যে চার হাজার ডাক্তারের অভাব রয়েছে।
হাতুড়ে (কোয়াক) ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, প্রাইভেট ডাক্তারদেরও কিছু সময়ের জন্য চিকিৎসার কাজে লাগানো হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে নিখরচয় চিকিৎসা পাওয়ার পরেও বহু মানুষ ছুটছেন প্রাইভেট হাসপাতালে। এখন থেকে সরকারি হাসপাতালগুলিতেও অর্থের বিনিময়ে মিলবে চিকিৎসা পরিষেবা।
বিধায়ক, সাংসদ, স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় থাকা অনেকেই এখন চিকিৎসার খরচ পেয়ে থাকেন। সরকারি হাসপাতালে অর্থের বিনিময়ে প্রাইভেট চিকিৎসার সুযোগ নিতে পারেন তারা।
প্রাথমিক পর্যায়ে উডবার্ন ওয়ার্ডকে এজন্য কাজে লাগার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
কলকাতা পুলিশ হাসপাতালের ৫০ শতাংশ আসন পুলিশদের জন্য রেখে বাকি পঞ্চাশ শতাংশকে পেইড প্রাইভেট হাসপাতালের মতো ব্যবহার করার জন্য স্বাস্থ্য দফতরের সচিবকে নির্দেশ দেন হাসপাতাল।
আগামী দিনে গোটা রাজ্যে ধাপে ধাপে এমন মডিউল তৈরি করা হবে। যেখানে সরকারি হাসপাতালে বিনা পয়সায় চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে টাকা দিয়ে চিকিৎসা করানোরও প্রাইভেট ইউনিট থাকবে।
এসএসকেএম-এর উল্টো দিকে ক্যানসার হাসপাতালটিকে আরও উন্নত মানের পরিষেবার জন্য তৈরি করতে বলেন। থ্রি স্টেজ বা ফোর্থ স্টেজ ক্যান্সার চিকিৎসায় অপারগতার কথা বলেন। ক্যান্সার গবেষণার ক্ষেত্রে আপডেট তথ্য নিয়ে ওয়াকিবহাল থাকার কথা তোলেন।
এছাড়া বর্ষায় সাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যুর মোকাবিলা করতে বিশেষ ধরনের ফুট ক্যাপ আবিষ্কারের জন্যও গবেষক ও চিকিৎসকদের কাছে আর্জি জানান।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে ইলিয়ট পার্কে তিনটি বিষাক্ত সাপের ফণা তুলে দাঁড়ানোর ঘটনা জানান। উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারে বহু মানুষ সাপের কামড়ে মারা যান।
গ্রামেগঞ্জে সর্প দংশনের চিকিৎসার ওষুধ যাতে হাতের নাগালে পাওয়া যায়, তার ব্যবস্থা রাখতে বলেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে ২৮ হাজার বেড বেড়েছে। সরকারি ডাক্তার ও নার্সের সংখ্যা বেড়েছে। তবুও বিভিন্ন বিভাগে ডাক্তারের সংখ্যা এখনও কম। রাজ্যে নিউরো সার্জেনের সংখ্যা যথেষ্ট কম। যেসব ডাক্তার গ্রামে গঞ্জে চিকিৎসা করতে যান, তাঁদের কাজ চলার মতো বাংলাভাষাটাও জানা জরুরি বলে মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী।
ডক্টরস্ ডে’তে বিধানচন্দ্র রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাজ্য সরকারের ছ’জন চিকিৎসককে লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্টস-এর জন্য সম্মানিত করেন মুখ্যমন্ত্রী। দেওয়া হয় দুই লক্ষ টাকা, স্মারক এবং উত্তরীয়।
এঁদের মধ্যে ছিলেন ডা. বৈদ্যনাথ চক্রবর্তী, ধীমান গাঙ্গুলি, রামকৃষ্ণ দত্ত রায়, সুদীপ দত্ত, সুকুমার চন্দ্র, সুকুমার মুখার্জি। এছাড়া কুড়ি জনেরও বেশি সরকারি বেসরকারি চিকিৎসককে বিশেষ সম্মান দেওয়া হয়।