ডিভিসি–র জলে বাঁকুড়ায় স্থানীয় মানুষের ঠাঁই ত্রাণ শিবিরে

ডিভিসি থেকে জল ছাড়ায় মঙ্গলবার রাত থেকে জল ঢুকতে শুরু করেছে বড়জোড়ার মানাচর এবং সোনামুখী ব্লকের নিত্যানন্দপুর ও সমিতি মানা এলাকায়। দ্রুত দুর্গতদের স্থানীয় ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যায় প্রশাসন। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে রাজ্যের মন্ত্রী ও জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন বন্যাকবলিত এলাকায় গিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী নিজে বুধবার হুগলি ও পশ্চিম মেদিনীপুরের প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। দুপুরে বাঁকুড়ার বড়জোড়ার মানাচর এলাকায় রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক পরিদর্শন করেন। তিনি দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন এবং বাঁকুড়ার সার্কিট হাউসে প্রশাসনিক আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বন্যা মোকাবিলায় বৈঠক করেন। মলয় ঘটক এই পরিস্থিতির জন্য দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি)-এর সিদ্ধান্তকে দায়ী করেন। অন্যদিকে, কেন্দ্রের প্রাক্তন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার এই পরিস্থিতির জন্য রাজ্য সরকারকে দায়ী করেছেন।

মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে ধীরে ধীরে জল ছাড়া বাড়ছিল, এবং মঙ্গলবার দুপুর থেকে ডিভিসি আরও বেশি জল ছাড়ে। সন্ধ্যায় দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ আড়াই লক্ষ কিউসেক ছাড়িয়ে যায়। এর ফলে দামোদর তীরবর্তী বড়জোড়া, সোনামুখী, পাত্রসায়ের এবং ইন্দাস ব্লকের কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। বিশেষত বড়জোড়া ব্লকের মানাচর এবং সোনামুখী ব্লকের নিত্যানন্দপুর, সমিতি মানা ও পাণ্ডে পাড়া এলাকায় পরিস্থিতি সবচেয়ে গুরুতর। দুর্গাপুর ব্যারাজের জল স্থানীয় একটি খালের দুই কূল ছাপিয়ে মানাচর এলাকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ঢুকে পড়ে। পল্লিশ্রী মানা, সীতারামপুর এলাকাসহ বড় এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় নদীবাঁধ উঁচু করার কাজ চললেও শেষরক্ষা হয়নি, এবং মঙ্গলবার রাত থেকে বাঁধ ছাপিয়ে দামোদরের জল প্রবেশ করতে থাকে। ফলে বুধবার সকালেও কিছু মানুষকে ত্রাণশিবিরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

বাঁকুড়ার বড়জোড়ার মানাচর এলাকায় স্থানীয় বিধায়ক অলোক মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে মন্ত্রী মলয় ঘটক পরিদর্শন করেন এবং দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে বাঁকুড়ার সার্কিট হাউসে জেলা শাসক সিয়াদ এন, পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারি-সহ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং স্থানীয় বিধায়কদের সঙ্গে আলোচনা করেন। মলয় ঘটক বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আমি বাঁকুড়ার বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে, ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে এবং ত্রাণ বিলিও চলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ডিভিসি রাজ্যকে না জানিয়েই জলাধারগুলি থেকে লক্ষ লক্ষ কিউসেক জল ছেড়ে দিয়েছে, যার ফলে এই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’ এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বিজেপি নেতা সুভাষ সরকার বলেন, ‘মলয় ঘটক ভুল তথ্য দিচ্ছেন। জল ছাড়ার সিদ্ধান্তে রাজ্যের প্রতিনিধিও অংশগ্রহণ করে, তাই রাজ্য দায় এড়াতে পারে না। এছাড়া, অবৈধ বালি খনন ও নির্মাণের কারণে নদীগুলির জলধারণ ক্ষমতা কমে গিয়েছে, যা বন্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’