ভবানীপুরে শেষবেলায় নরমে-গরমে তৃণমূল ও বিজেপি। প্রচারের শেষদিনে দেখা গেল বিজেপি যতই আগুন ছিটিয়েছেন, মমতা ততই শান্ত থেকেছেন। সসামবার বিজেপির তরফে দিলীপ ঘােষ, অর্জুন সিং, সুকান্ত মজুমদারদের নির্বাচনী প্রচার অভিযানকে ঘিরে উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে।
অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন ভােটারদরে কাছে নতজানু হয়ে লিফলেট দিয়ে ভােট প্রার্থনা করেছেন। সেই লিফলেটে নিজেকে ‘ঘরের মেয়ে’ হিসেবে তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তৃণমূল সুপ্রিমাের কথায়, “আপনাদের কাছে আমার আবেদন, একটিও মূল্যবান ভােটের আশীর্বাদ, ভালােবাসা, শুভেচ্ছা এবং দোয়া থেকে যেন বঞ্চিত না হই। ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে তিনবারের প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কিন্তু আগের দু’বারের তুলনায় এবারের নির্বাচন অনেকটাই অন্যরকম। এবার ভবানীপুর উপনির্বাচনের প্রথম দিকে বিজেপির তরফে প্রার্থীই মিলছিল না। কিন্তু এই কেন্দ্রে মহিলা বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালকে দাঁড় করিয়ে প্রচারে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছে বিজেপি নেতারা।
এই অবস্থায় আগের দু’বারের সাধারণ নির্বাচনের তুলনায় এবারের উপনির্বাচনে অনেকটা বেশি সময় দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্নের প্রশাসনিক কাজ সেরে প্রায় প্রত্যেকদিনই ভবানীপুরে প্রচারে বেরিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। গিয়েছে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে। একাধিক পথসভা করেছেন।
সেখানে একদিকে কেন্দ্রকে তােপ দেগেছেন, অন্যদিকে ভারতজয়ের ইঙ্গিত দিয়েছেন। প্রচারের শেষ দিনে অর্থাৎ ভবানীপুর ভােটের তিন দিন আগে ভােটের জন্য প্রার্থনা জানিয়ে ভবানীপুরবাসীর প্রতি কাতর আবেদন জানিয়ে লিফলেট প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সেখানে তিনি লিখেছেন, আমার রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই আমি ভবানীপুর কেন্দ্রকে ঘিরে পথচলা শুরু করেছি। দুঃসময়ে, সুসময়ে, উৎসবে আন্দোলনে আপনাদের ভালােবাসা পেয়েছি।
আজ যে আমি মুখ্যমন্ত্রী, সেটা ভবানীপুরের জন্য। আবার উপনির্বাচন আসছে ৩০ সেপ্টেম্বর। আপনাদের শুভেচ্ছা ভােটের মাধ্যমে পেলে তবেই উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে পারব। আপনাদের প্রত্যেকটা ভােটই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সবরকম পরিস্থিতিতে আপনারাই আমার ভরসা। আপনারা ভালাে থাকলে, তবেই আমি ভালাে থাকব।
প্রসঙ্গত, বিরােধীদের মতে ভবানীপুরে মুখ্যমন্ত্রী মরিয়া হয়ে উঠেছেন প্রচারে। দু’দিন আগেই বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি প্রচারে এসে বলে গিয়েছেন, “দিদি ভয় পেয়েছেন। নার্ভাস হয়ে পড়েছেন।
সােমবার শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, প্রিয়াঙ্কা জিতলে তিনি বিরােধী। দলনেতার পদ ছেড়ে দেবেন তাঁকে। সব মিলিয়ে ভবানীপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালকে দিয়ে একটা স্নায়ুর চাপ বাড়াতে চেয়েছে বিজেপি।
ভােটের শেষবেলায় এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভােট প্রার্থনায় কিছুটা অসহায়তা দেখা যাচ্ছে। তবে তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৌশল। ভবানীপুরে ভােটে জেতা নিয়ে কোনও টেনশন নেই মমতার।
তবে, তিনি জানেন, এই ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুধু জয়ী হলেই চলবে না। তাকে রেকর্ড মার্জিনে জিততে হবে। তা না হলে তার চব্বিশের দিল্লি অভিযান কিছুটা হলেও ধাক্কা খাবে। এই কেন্দ্র থেকে প্রায় ৪০ হাজার মার্জিনের লক্ষ্য নিয়ে নেমেছে তৃণমূল। সেই কারণেই নতজানু হয়ে ভােট প্রার্থনা করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।