সংযুক্ত মাের্চার ভবিষ্যত নিয়ে জল্পনা চলছিল অনেকদিন ধরে। বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর বাম ও কংগ্রেস এবার কোনও প্রতিনিধি রাজ্য বিধানসভায় পাঠাতে অক্ষম হওয়ায় সেই জল্পনা আরও জোরদার হয়। এদিকে, ভবানীপুর বিধানসভার উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী দেওয়া থেকে বিরত থাকে। যদিও বামেদের পক্ষ থেকে এই কেন্দ্রে প্রার্থী ঘােষণা করা হয়েছে।
স্বাভাবিকভাবেই আগামী দিনে সংযুক্ত মাের্চার ভবিষ্যত কি তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। এর আগে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান জানিয়েছিলেন সংযুক্ত মাের্চা ভাঙলে এর দায় কংগ্রেসকে নিতে হবে। এমনই এক আবহে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি শুক্রবার জানালেন, ‘মাের্চার এখন আর কোনও অস্তিত্ব নেই। ভােট শেষ মাের্চাও শেষ।
বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য এবার সিপিএম, কংগ্রেস এবং আইএসএফ জোট বেঁধেছিল। যদিও ভােটবাক্সে এবার সংযুক্ত মাের্চা ভালাে প্রভাব ফেলতে পারেনি। একটি মাত্র আসন পেয়ে সংযুক্ত মাের্চাকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। ভাঙড়ের বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকি জয়ী হন।
সিপিএমের রাজ্য কমিটির নির্বাচনী কৌশল নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় রাজ্য নেতৃত্বকে। আইএসএফ-এর সঙ্গে জোট বাঁধা সিপিএমেরই কর্মী-সমর্থকদের একাংশ ভালােভাবে নেয়নি। বিজেপিকে ঠেকাতে বাম ও কংগ্রেসের বড়সড় ভােটব্যাঙ্ক চলে যায় তৃণমূলের দিকে।
কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের দ্বিতীয় দিনে সীতারাম ইয়েচুরি এবং প্রকাশ কারাতরা সংযুক্ত মাের্চার ভবিষ্যত নিয়ে আলােচনা করেন। সেই বৈঠকে দীর্ঘস্থায়ী জোটের ভাবনা ভালাে হবে না বলে উঠে আসে। এরপর শুক্রবার নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করলেন সীতারাম ইয়েচুরি।
তিনি সাফ জানিয়েদিলেন, ‘ভােট শেষ , জোট শেষ। এর কোনও অক্তিত্ব নেই। অতীতের উদাহরণ টেনে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘জনতা পার্টি এসেছিল ইন্দিরা গান্ধিকে হারানাের জন্য। হারিয়েও দিল। তারপর জনতা পার্টি শেষ।
তাৎক্ষণিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ফ্রন্ট তৈরি হয়। তা ফুরিয়ে গেলে তা আর রেখে দেওয়ার কারণ থাকে না। ভােট বিপর্যয় নিয়ে আলুমদ্দিন স্ট্রিট যে পর্যালােচনা করেছিল তা বাতিল করে দিয়েছিল। কেন্দ্রীয় কমিটি। সেই সময় দিল্লি সিপিএমের থেকে বলা হয়েছিল, বাংলা ইউনিট একের পর এক ভুল করে গিয়েছে।
রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্বন্ধে সম্যক ধারণা না থাকায় সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সমালােচনায় মুখর হয়। ভােটে হারার পরও সিপিএমের মধ্যে বেশ কয়েকজন নেতা গা-জোয়ারি মনােভাব নেয় মাের্চার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য। কিন্তু এই অস্তিত্ব যে দীর্ঘস্থায়ীর হবে না তা বুঝে গিয়েছিল সিপিএমের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সিপিএমের সম্মেলন প্রক্রিয়া শুরু হতেই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, মহম্মদ সেলিমদের ভূমিকা নিয়ে রীতিমত সমালােচনার ঝড় ওঠে। এবার সীতারাম ইয়েচুরি সাফ জানিয়ে দিলেন, জোট আর নেই। ভােট শেষ হয়ে গিয়েছে। জোটও (মাের্চা) শেষ হয়ে গিয়েছে।
ভবানীপুরে ভােট ঘােষণা হওয়ার পর সংযুক্ত মাের্চার এই ছন্নছাড়া অবস্থা দেখে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি এই সিদ্ধান্ত নিল বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কংগ্রেস সিপিএমের থেকে দূরত্ব তৈরি করেছে জাতীয় রাজনীতির কথা মাথায় রেখে।
অন্যদিকে আইএসএফ-ও জানিয়েছে তারা তিন কেন্দ্রে নির্বাচনে প্রচার করা থেকে বিরত থাকছে। সব মিলিয়ে ভােটের আগে অনেক কাটখড় পুড়িয়ে যে সাজানাে সংসার তৈরি করা হয়েছিল ভােটের পর আপাতত কপূরের মতাে উবে গেল সেই সংসার, যার আনুষ্ঠানিক ঘােষণাই করে দিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।