বাংলা ছাড়তে চেয়েও জামিন পেলেন না নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পরিবর্তে জুটলো সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনা। জামিন পেতে মরিয়া পার্থ বুধবার সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবীর মাধ্যমে ‘বান্ধবী’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের নাম করে বলেন, ‘অর্পিতা জামিন পেলে আমি পাব না কেন? প্রয়োজনে বাংলা ছাড়তেও রাজি’। কিন্তু এই কথা বলা মাত্র বিচারপতি সূর্য কান্ত রীতিমত ভর্ৎসনার সুরে পার্থকে পাল্টা বলেন, ‘আপনি মন্ত্রী ছিলেন, সবাই নন। ফলে আপনার দপ্তরে কী হচ্ছে, তার দায় আপনার উপর বর্তায়।” এর পরই বিচারপতি বললেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায় জামিন পেলে তদন্ত কীভাবে প্রভাবিত করতে পারেন, তা আগে খতিয়ে দেখতে হবে।’
পশ্চিমবঙ্গের নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এখনও পর্যন্ত অনেকেই জামিন পেয়েছেন। কিন্তু জামিন মেলেনি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। কলকাতা হাইকোর্ট ছাড়াও তিনি সুপ্রিম কোর্টে জামিন চেয়ে আর্জি জানিয়েছেন। এদিন ফের সেই মামলার শুনানি ছিল দেশের শীর্ষ আদালতে। শুনান চলাকালীন কার্যত ভর্ৎসনা করল শীর্ষ আদালত। বলা হল, বাকিদের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করে লাভ নেই।
এর আগেও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবী মুকুল রোহতগী মক্কেলের জামিন চেয়ে দুর্নীতিতে অন্যতম অভিযুক্তদের প্রসঙ্গ টেনেছেন। বুধবারও তার অন্যথা না করে তিনি অর্পিতা মুখোপাধ্যায়, মানিক ভট্টাচার্যের প্রসঙ্গ তুলে সওয়াল করেন, বাকিদের জামিন হলে তাঁর মক্কেলের কেন হবে না? তাঁর দাবি, প্রায় আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে বন্দি রয়েছেন পার্থ। এমনকী যে জায়গা থেকে টাকা উদ্ধার হয়েছে সেই জায়গার মালিকানাও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নয়। সে ক্ষেত্রে এবার তাঁকে জামিন দেওয়া উচিত বলে মত তাঁর।
পার্থর দুর্নীতি প্রমাণে শুনানির শুরু থেকেই একাধিক যুক্তি দিতে থাকেন কেন্দ্রীয় সংস্থার আইনজীবী অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল এস ভি রাজু। তিনি বলেন, বাকি ধৃতরা সকলেই জানিয়েছেন তাঁরা পার্থর সঙ্গে কাজ করতেন, তাই প্রত্যেকের অবস্থানের সঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অবস্থান এক হতে পারে না। মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত অর্পিতা মুখোপাধ্যায় তাঁদের জানিয়েছেন, নিজের এবং মায়ের কথা ভেবেই তিনি প্রথমে ভয়ে কিছু বলতে পারেননি। তাঁর বাড়িতে পাওয়া নগদ ৫০ কোটি টাকা এবং গয়না নিয়েও তিনি কিছু জানেন না। যা বলার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ই বলতে পারবেন।
এরপরই সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং উজ্জ্বল ভূঁইয়ার পর্যবেক্ষণ, অন্যদের সঙ্গে নিজেকে তুলনার আগে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের লজ্জিত হওয়া উচিত!
এদিন অ্যাডিশনাল সলিসিটর জানান দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে চার্জ ফ্রেম করা হবে। এই মামলায় উঠে আসা বিভিন্ন সংস্থা পরোক্ষে পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে অভিযোগ রাজুর। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জন্য প্রায় পঞ্চাশ হাজার গরিব ছাত্র-ছাত্রী যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও চাকরি পাননি বলে ফের একবার অভিযোগ করেন রাজু। তাঁর দাবি, প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন তাঁরা ওনাকে ভয় পান। তাই জামিন পেলে তথ্য-প্রমাণ নষ্ট করা সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। যদিও দীর্ঘ সময় শুনানি চললেও শেষ পর্যন্ত এদিনের মতো তা স্থগিত হয়ে যায়। কোনও রায়ই দেননি বিচারপতি।