• facebook
  • twitter
Friday, 13 September, 2024

চার দফা দাবি পূরণ না হলে কর্মবিরতি প্রত্যাহার নয়, স্পষ্ট জবাব আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের

সিবিআই-এর দিকে তাকিয়ে আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা

আর জি কর কাণ্ডে আসল অপরাধীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আড়াল করা হচ্ছে দুষ্টচক্র। সেজন্য এখনই কর্মবিরতি প্রত্যাহার নয়। কারণ সর্ষের মধ্যেই ভূত লুকিয়ে রয়েছে। এখনই আন্দোলন প্রত্যাহার করলে সেই দুষ্টচক্র ধামাচাপা পড়ে যাবে। আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, অপরাধীরা ধরা না পড়া পর্যন্ত তাঁরা তাঁদের আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

পাশাপাশি, আর জি কর-এর প্রতিবাদ মঞ্চে সোমবার একটি সংহতি সভার ডাক দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়ারা সেই সংহতি মঞ্চে যোগ দেবেন বলে জানা গিয়েছে। তবে এই সংহতি সভা আর জি কর-এ হচ্ছে না। কারণ সেখানকার নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে আধাসামরিক বাহিনী। সেজন্য আর জি কর-এ অনুমতি নিয়ে সমস্যার কারণে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ প্রাঙ্গনে এই সংহতি সভার আয়োজন করা হয়েছে। সোমবার বিকেল সাড়ে চারটের সময় এই গণ কনভেনশনের ডাক দেওয়া হয়েছে।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ধরা পড়ার ভয়ে একটি দুষ্টচক্র আড়ালে থেকে তদন্তের কাজে বাধা সৃষ্টি করছে। এমনকি প্রভাবশালী এই চক্রের কাছে স্বাস্থ্যভবনও অসহায় বলে দাবি করেছেন তাঁরা। এজন্য আন্দোলনকারীরা পুলিশ ও প্রশাসনের একটি অংশের দিকে আঙুল তুলেছেন। কর্মবিরতি প্রত্যাহারের আগে তাঁরা চার দফা দাবি রেখেছেন। কী সেই দাবিগুলি? চার দফা সেই দাবিগুলি হল:

১) ৯ অগস্টের ঘটনায় জড়িত দোষীদের অবিলম্বে চিহ্নিত করতে হবে। ওই ঘৃণ্য ঘটনার মোটিভ এখনও আমাদের কাছে এখনও অজানা। হয়তো দোষীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, অথচ আমরা জানি না। সেটা হলে আমাদের নিরাপত্তা নেই। অতিদ্রুত দোষীদের সনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

২) তথ্য প্রমাণ লোপাটের ঘটনায় যে বা যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তদন্তে তাদের প্রত্যেককে সনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। স্বাস্থ্য ভবনের প্রত্যক্ষ মদতে যে দুষ্টচক্র সক্রিয় ছিল, তাদের আড়াল করা চলবে না। স্বাস্থ্য ভবনকে অবিলম্বে সন্দীপ ঘোষকে সাসপেন্ড করতে হবে।

৩) সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ অনুষায়ী, কলকাতা পুলিশ প্রশাসন এই ঘটনার তদন্তে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ। এই ব্যর্থতার দায় নিয়ে পুলিশ কমিশনারকে পদত্যাগ করতে হবে। প্রয়োজনে তাঁকেও বিচার ও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।

৪) প্রতিটি কলেজে ভয়ের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। স্বচ্ছভাবে নির্বাচন করতে হবে। সমস্ত কলেজ এবং হাসপাতালে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সমস্ত কমিটিকে জুনিয়র ডাক্তার এবং মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করতে হবে। যাঁদেরকে গণতান্ত্রিকভাবে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন করা হবে।

একটি সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে আর জি কর-এর বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা। তাঁরা সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পুলিশের বিরুদ্ধে। এমনকি তাঁরা পুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে পদত্যাগ দাবি করেছেন। আধা সেনা দিয়ে হাসপাতাল চত্বর মুড়ে দেওয়া হলেও এই দুষ্ট চক্র এখনও প্রকাশ্যে দাপিয়ে বেড়ানোর কারণে নিরাপদ বোধ করছেন না চিকিৎসকরা। আর জি কর-এ হামলার ঘটনায় কলকাতা পুলিশকে দোষারোপ করেছেন তাঁরা।

আন্দোলনকারী  ডাক্তারদের দাবি, “১৪ আগস্ট মেয়েদের ‘রাত দখল’-এর রাতে আর জি করের হামলার ঘটনায় হামলাকারীদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের ভয় দেখানো এবং হাসপাতালের তথ্যপ্রমাণ লোপাট করা! সিসি ক্যামেরায় আমরা স্পষ্ট দেখেছি, দুষ্কৃতীদের একটি দল জরুরি বিভাগের গেট দিয়ে ঢুকে একটি ফ্লোরে কোনওরকম ভাঙচুর না করে সেমিনার রুম খুঁজতে অন্য ফ্লোরগুলিতে ভাঙচুর চালায়। ওই সময়ে পুলিশ ছিল সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়। যা আমাদের কাছে খুবই যন্ত্রণাদায়ক। একদিকে তারা নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। অন্যদিকে তারা অসংবেদনশীল ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ার উপর গোটা দোষটা চাপিয়ে আসল দোষীদের আড়াল করেছেন। আমদের মতে, কলকাতা পুলিশ সুবিচার পাওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করেছে। ন্যায়বিচারকে বিলম্বিত করার পথে মূল ভূমিকা নিয়েছে।”

এছাড়াও আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা আর জি কর হাসপাতালের ঘটনায় সর্ষের মধ্যেই ভূত রয়েছে বলে দাবি করেছেন। যাঁর ইঙ্গিত প্রশাসনিক দিকেই যাচ্ছে। এবিষয়ে গত ২১ আগস্ট স্বাস্থ্য ভবনে একটি বৈঠকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন তাঁরা। চিকিৎসকরা বলেন, ‘২১ তারিখ আমরা স্বাস্থ্য ভবনে একটি বৈঠক করেছিলাম। সেখানে জানতে চেয়েছিলাম, সন্দীপ ঘোষ-সহ বাকি কর্তৃপক্ষকে প্রশাসনিক ব্যর্থতার দায় নিয়ে কেন এখনও অপসারণ করা হচ্ছে না। তখন প্রশাসনিক জটিলতা ছাড়া আর কোনও সদুত্তর মেলেনি। তাতেই স্পষ্ট হয়ে যায়, এঁদের বাঁচানোর পিছনে এক অশুভ দুষ্টচক্র অতিমাত্রায় সক্রিয়। যারা এতকিছুর পরেও সন্দীপ ঘোষ-সহ কর্তৃপক্ষকে আড়াল করতে ব্যস্ত এবং তাদের চাপের কাছে স্বাস্থ্যভবনও কার্যত অসহায়।’

যদিও ওই বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা পরেই পড়ুয়া চিকিৎসকদের দাবি মেনে আরজি করের অধ্যক্ষ ও বক্ষরোগের বিভাগীয় প্রধানকে অন্যত্র বদলি করা হয়। তবে এবিষয়ে আন্দোলনকারীদের প্রশ্ন, ‘যাঁর বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত শুরু হয়েছে, সেই সন্দীপ ঘোষকে এখনও কেন সাসপেন্ড করা হল না? তাঁকে শুধু হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। সমস্ত অভিযোগে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার আগে পর্যন্ত স্বাস্থ্য ভবন কেন তাঁকে সাসপেন্ড করতে পারছে না? কে বা কারা তাদের বাধা দিচ্ছে?’ এবিষয়ে আন্দোলকারী চিকিৎসকদের স্পষ্ট জবাব, এই প্রশ্নের উত্তর অতি সহজ। তাঁদের দাবি, ‘গত কয়েক বছর ধরে আর জি কর-এ যে ভয়ের রাজনীতি চালানো হয়েছে, সন্দীপের অনুগত একটা অংশ যেভাবে আর্থিক এবং অন্যান্য দুর্নীতি করেছে, তাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য একটি দুষ্টচক্র সক্রিয় ছিল। তারা শুধু আরজি কর নয়, বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজেই এখনও সক্রিয় রয়েছে। এরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই জুনিয়র ডাক্তারদের ফেল করানো এবং চিকিৎসকদের বদলি করানোর ভয় দেখায় ও বদলি করে।’