জেলে যেতে রাজি। জেলে গেলে ভাব্ব দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য লড়ছি, ভাব্ব দেশ পরাধীন হয়ে গেছে। এজেন্সি নিয়ে ভয় দেখানাে হচ্ছে। আজ আমার ভাইকে ডাকছে, কাল আমাকে ডাকবে। বুধবার মেয়াে রােডে গান্ধি মূর্তি সংলগ্ন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে এভাবেই হুঙ্কার দিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমাে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুধবারের সভার শুরু থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর নিশানায় ছিল কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। তিনি বলেন, বিজেপি সকলকে চমকাচ্ছে, ওরা ভাবছে এভাবে আমাদের থামানাে যাবে কিন্তু ওরা জানে না, যারা বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়ে লড়াই করে এই জায়গায় এসেছে, তাদের কোনওভাবেই ভয় দেখিয়ে প্রতিরােধ করা সম্ভব নয়। বিজেপি মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। বন্দুকের নলের সামনে সবাইকে দাঁড় করিয়ে ক্ষমতা লাভের চেষ্টা করছে। সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছে কোনওভাবেই মাথা নত করিনি, কখনও করব না বলে সাফ জানিয়ে দেন তিনি।
মমতা বলেন, দেশ এমার্জেন্সির দিকে যাচ্ছে দেশ দখল করবে বলে রাজনৈতিক দলকে টাকা দিয়ে কিনে নেওয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সংস্থাকে ব্যবহার করে তৃণমূলকে ভাঙানাের চেষ্টা করছে বিজেপি। বিজেপিতে যােগ না দিলে জেলে ভরার ভয় দেখানাে হচ্ছে বলেও অভিযােগ করেন তিনি। নাম না করে বিজেপি নেতা মুকুল রায়কে আক্রমণ করে বলেন, ১০৭ জন বিধায়কের নাম নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে শােনা যাচ্ছে, কন্তু আগে ৭ জনের নাম বের করে দেখাক। সবকিছু এত সস্তা নয়। আমরা বাংলায় লড়ছি, তাই ওদের বাংলা চাই।
আরবিআইয়ের কাছ থেকে ১.৭৬ লক্ষ কোটি টাকা লভ্যাংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকারকে তুলে দিল। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে গচ্ছিত থাকা সােনাও চলে যাচ্ছে। এরপর দেশ কোনও বড় বিপদে পড়লে কে সামলাবে? এ নিয়েও প্রশ্ন তােলেন মমতা। দেশে এখন বেকারের সংখ্যা সর্বোচ্চ। বাংলায় চাকরির ব্যবস্থা করা হচ্ছে, আরও চাকরির চেষ্টা করছি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বহু মানুষের চাকরি চলে যাচ্ছে। ‘বিএসএনএল, এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মীদের পাশে আছেন বলেও বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে বলেন, আমাকে দুটো বছর দিন। রাজ্যের মানুষকে আরও ৫০ বছর দেবেন বলে এদিন অঙ্গীকার করেন তৃণমুল সুপ্রিমাে। আগামী দিনে নেতৃত্ব তৈরির বিষয়ে তিনি বলেন, ১৪ ও ১৫ নভেম্বর নেতাজি ইন্ডাের স্টেডিয়ামে দু’দিন ধরে সভা হবে। প্রতিটি জেলা থেকে নেতৃত্ব গড়ে তােলা হবে। ১৫ নভেম্বর বেলা ১টায় সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সদস্যদের নিয়ে নেতাজি ইন্ডাের স্টেডিয়ামে একটা আলােচনাসভা করবেন তিনি। সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষকরা থাকবেন। তার মধ্য থেকে বেছে ছাত্রছাত্রীদের থেকে নেতৃত্ব তুলে আনা হবে, যারা মানষের পাশে দাঁড়াবে, যাদের ভয় দেখানাে যাবে না।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সবুজ রঙের একটি ফর্ম থাকবে, যেখানে নাম, ছবি, ঠিকানা নিয়ে কোন কাজে তার উৎসাহ আছে, তা নেত্রীকে জানাতে হবে। তাদের নিজে ডেকে কথা বলেন তিনি।
কেন্দ্রীয় সরকারের ফের একবার সমালােচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের নাম বদলাতে দিচ্ছে না কেন্দ্র। বারবার খারিজ করে দিচ্ছে। বাংলাকে ভয় পায়, হিংসা করে। ডানলপ কোম্পানি রাজ্য চালাতে চায়, কিন্তু এখানেও কেন্দ্র দিচ্ছে না।
পাশাপাশি, সরকারি পেনশন ব্যবস্থা সব রাজ্যে বন্ধ করে দিয়েছে। ত্রিপুরায় ছিল, বিজেপি এসে তাও বন্ধ করে দিয়েছে। একমাত্র পশ্চিমবঙ্গে চলছে পেনশন, যা তার সরকারের মানবিকতার ছবি বলেও দাবি করেন তিনি। এদিনের এই সভায় মুখ্যমন্ত্রীসহ উপস্থিত ছিলেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি ত্রিণাঙ্কুর ভট্টাচার্য প্রমুখ।
অভিষেক বন্দ্যোপাধায় এদিনের সভা থেকে বলেন লক্ষ্য একটাই, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ২৫০ আসন পাবে তৃণমূল। ২০১১-তে নেত্রী স্লোগান দিয়েছিলনে ‘বদলা নয় বদল চাই’। সেদিন যদি বদলার রাজনীতি করতাম, তাহলে আজ যাঁরা বড় বড় কথা বলেন, বাজার গরম করেছেন, তাদের টিকি পাওয়া যেত না।
বিজেপি-সিপিএমের বিরুদ্ধে তােপ দেগে ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ বলেন, কিছু লােক অর্বাচীনের মতাে কথা বলছে। তারা জানে না, নেত্রী নির্দেশ দিলে যুব তৃণমূল আর টিএমসিপিই তাদের জন্য যথেষ্ট আগে। আমাদের ডিফেন্স ভেদ করাে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নামতে হবে না।