‘শেষ সিদ্ধান্ত আমিই নেব’, পরিষদীয় বৈঠকে কড়া বার্তা মমতার

পরিষদীয় বৈঠকে মমতা। নিজস্ব চিত্র

এখনও তিনিই শেষ কথা। জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের পর ফের বিধানসভায় পরিষদীয় বৈঠকে মন্ত্রী ও বিধায়কদের এই একই বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবারের এই বৈঠকে ফের দলের শৃঙ্খলা রক্ষার উপর জোর দেন তিনি। কেউ শৃঙ্খলা না মানলে তাঁকে শোকজ করারও হুঁশিয়ারি দেন মমতা। পাশাপাশি তিনি দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর নির্দেশ দেন। অপরদিকে দলের মহিলা সংগঠনের প্রশংসা করতেও দেখা যায় মমতাকে।

সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর দলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুরুত্ব বেড়েছিল। দলের একাধিক নেতা এমনকী মন্ত্রী, বিধায়করাও অভিষেকের গুরুত্ব আরও বাড়ানোর দাবি তুলেছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি দলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে মমতা পরিষ্কার করে দেন, এখনও পর্যন্ত দলে তিনিই শেষ কথা বলবেন। মমতা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, দিল্লিতে সংসদে দল পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনিই শেষ কথা বলবেন। তাঁর কথায়, ‘লোকসভায় যা অবস্থান নেওয়ার, সেটা আমাদের কারও একার বিষয় নয়। এই বিষয়ে অবস্থান নেবেন তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদীয় দলের চেয়ারম্যান, অর্থাৎ আমি।’ সংসদীয় দলের পাশাপাশি সাংগঠনিক বিষয়েও তাঁর কথাই যে শেষ কথা তা স্পষ্ট করে দেন মমতা।

সোমবার দুপুরে বিধানসভায় পরিষদীয় দলের বৈঠকে দীর্ঘক্ষণ বিধায়কদের সঙ্গে আলোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে তিনি বলেন, ‘অনেকে অনেক কথা বলছে। কে কী বলছে ভাবার দরকার নেই। দল আমি আর বক্সীদাই দেখব। এখনও আমি আছি। শেষ সিদ্ধান্ত আমিই নেব।’ পাশাপাশি এদিন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আই প্যাককেও তোপ দাগেন মমতা। তাঁর কথায়, ”ওসব ‘প্যাক ফ্যাক’ জানি না। এলাকা ভিত্তিক অনেক ভুল তথ্য আসছে। আমি যে তথ্য পাব, সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেব।” উল্লেখ্য, আই প্যাককে দলের কাজে নিযুক্ত করার ক্ষেত্রে অভিষেকের বড় ভূমিকা ছিল। পর পর দুটি বৈঠকে মমতার এরকম মন্তব্যের কারণে বিরোধীরা কালীঘাট ও ক্যামাক স্ট্রিটের মধ্যে লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিয়েছেন।


অন্যের এলাকায় নাক গলানোর জন্য সোমবার অভিষেকের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নেতা তথা অশোকনগরের বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামীকে এদিন ধমক দেন মমতা। মমতা এদিন নারায়ণকে বলেন, ‘অন্যের এলাকায় নাক গলাবে না। নিজের এলাকার কাজ নিয়ে থাকবে।’

বিধানসভার অধিবেশনে হাজিরা নিয়ে এদিন কড়া নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, পর পর তিনদিন বিধানসভায় সময়মতো না এলে চতুর্থ দিন সেই বিধায়ককে শোকজ করা হবে। এছাড়াও ছাত্র–যুব সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। দলের শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে কড়া মনোভাব দেখিয়েছেন মমতা। এ বিষয়ে তিনি কোনও আপোস করবেন না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। মমতার কথায়, ”সকলকে শৃঙ্খলা মানতেই হবে। না হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শোকজ করা হবে।” এ প্রসঙ্গে নাম না করে সম্প্রতি শোকজ হওয়া তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবিরের উদাহরণ দেন মমতা। কয়েকদিন আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে ব্যাটন ধরে বিতর্কিত মন্তব্য করার জন্য হুমায়ুনকে শোকজ করেছিল দল। তিন দিনের মধ্যে তিনি জবাবও দিয়েছিলেন। দলে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে তিনটি শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি গড়ে দিয়েছিলেন মমতা। এই কমিটিকে ফের একবার শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টি মনে করিয়ে দেন তিনি।

২০২৬–এর বিধানসভা নির্বাচনের জন্য এখন থেকে বিধায়কদের ময়দানে নেমে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জনসংযোগের জন্য বিধায়কদের নিজেদের এলাকায় বাড়ি বাড়ি যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। কোনও প্রশাসনিক কাজ বাকি থাকলে তাঁকে সরাসরি জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিম, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে মাথায় রেখে বিধায়কদের নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরির কথা জানিয়েছেন মমতা। দলের কর্মসূচির বিষয়ে সেই গ্রুপেই বিধায়কদের জানিয়ে দেওয়া হবে। অপরদিকে বিধায়কদের কিছু বলার থাকলে সেই গ্রুপেই জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। অপরদিকে মুখ্যমন্ত্রীর কিছু বলার থাকলে গ্রুপের মাধ্যমেই বিধায়কদের জানিয়ে দেওয়া হবে। তাঁর কথায়, ‘আজ কেউ মন্ত্রী, কাল বিধায়ক। ওসব নিয়ে ভাববেন না। মানুষের কাছে যান। কাজ করুন।’