২০২২ বিধানসভা বাজেট অধিবেশনের সূচনা। প্রথা অনুযায়ী রাজ্যপালের ভাষণ দিয়ে অধিবেশনের সূচনা হয়। দুপুর ২ টো।
জাতীয় সংগীতের পর রাজ্যপাল বক্তৃতা পড়বেন। এটাই চিরাচরিত রীতি। যদিও এরপর যা ঘটল, তা এককথায় অভূতপূর্ব।
বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা এবং বিজেপি বিধায়কেরা হাতে পোস্টার নিয়ে মুহুর্মুহু স্লোগান দিতে থাকেন। ওয়েলে নেমে পড়েন তাঁরা।
তুমুল হইহট্টগোল শুরু হয়। তাঁরা স্লোগান দিতে থাকেন ‘ছাপ্পা ভোটের সরকার, আর নেই দরকার’, ‘মানুষ মারা সরকার আর নেই দরকার’।
এই সময় অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ডিসিপ্লিন মেনে চলুন। অধ্যক্ষ এবং রাজ্যপাল দুজনেই একে অপরের সাথে কথা বলতে দেখা যায়।
রাজ্যপালকে অনুরোধ করা হয় যে তিনি যেন তাঁর বক্তৃতা পড়তে শুরু করেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা। বিজেপি বিধায়করা তাঁদের স্লোগান আরও জোরদার করেন।
পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে রাজ্যপাল ও অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। কিন্তু পরিস্থিত আয়ত্তের মধ্যে আসছে না দেখে মুখ্যমন্ত্রী নিজে হস্তক্ষেপ করেন।
তিনি হাতজোড় করে অনুরোধ করেন রাজ্যপালকে তাঁর ভাষণ পড়তে। রাজ্যপালকেও দেখা যায় হাতজোড় করে কিছু বলতে।
এইসময় ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে মহিলা বিধায়কেরা রাজ্যপালকে অনুরোধ করেন তাঁর বক্তৃতা পড়ার জন্য। রাজ্যপাল সকলকে একবার বলেন, প্রত্যেকে আপনারা আসন গ্রহণ করুন।
তাতেও কোনওকিছু না হওয়ায় রাজ্যপাল অধিবেশন কক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে চান। ইতিমধ্যে দু-বার বিরোধী দলনেতাকেও রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়।
অধ্যক্ষ বারবার অনুরোধ করেন যে, শান্ত থাকুন এবং আপনারা আসনে বসুন। এইভাবে তুমুল হইহট্টগোলে হুলস্থুল কাণ্ড হয় বিধানসভায়।
মুখ্যমন্ত্রী মাঝখানে অধিবেশন কক্ষ থেকে বেরিয়ে গিয়ে আবার ফিরে আসেন। আবারও জোর হাতে রাজ্যপালকে অনুরোধ করেন বক্তৃতা পড়তে।
এই সময় বিজেপি বিধায়করা বিধানসভার কাগজপত্র ছিঁড়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। সরকারি দলের বিধায়কেরা তখন পাল্টা বিজেপি হটাও দেশ বাঁচাও স্লোগান দিতে থাকেন।
২ টো ৫৬ নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালের কাছে আবার যান এবং জোড়হাতে অনুরোধ করেন। ২টো নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী মধ্যস্থতা করে নিজের দলের বিধায়কদের শান্ত করে আসন গ্রহণের জন্য বলেন।
এরপর অধ্যক্ষ বলেন, বিরোধী দলনেতাকে বলেছি, তাদের দলের বিধায়করা শান্ত হতে এবং রাজ্যপালকে ভাষণ পড়তে দিতে।
তিনি একথাও বলেন যে, হয় তাঁরা আসন গ্রহণ করুন অথবা কক্ষ ত্যাগ করুন। বিরোধী দলনেতা আপনি ব্যবস্থা নিন।
এই পরিস্থিতিতে হইহট্টগোলের মধ্যে রাজ্যপাল প্রথম লাইন ও শেষ লাইন পড়ে ৩ টে ১ নাগাদ বিধানসভা থেকে বেরিয়ে যান। অর্থাৎ বাজেট অধিবেশনের শুরুতে রাজ্যপালের ভাষণ পেশ (টেবল) করা হল।