পুজো নিয়ে হিন্দুদের সেন্টিমেন্টে বড়সড় চাল দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। করােনা আবহে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব কীভাবে হবে, তা নিয়ে সংশয় ছিল।
কিন্তু দুর্গাপুজো বন্ধ করা তাে দূরস্তান, সতর্কতা কিংবা সচেতনতা ছাড়া পুজোতে কোনও কড়া বিধি আরােপের পথেই হাঁটল না রাজ্য সরকার। সােমবার নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে দুর্গাপুজো নিয়ে দিল্লি এবং অন্য রাজ্যের সঙ্গে বাংলার তুলনা টানলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, দিল্লিতে মাত্র একটা পূজোর অনুমতি দিয়েছে । উত্তরপ্রদেশ সহ অন্য রাজ্যে তাে পুজোর অনুমতিই দিচ্ছে না আমি কিন্তু দিলাম।
আসলে একুশের ভােটের আগে পুজো বন্ধ করার মতাে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঝুঁকি নিতে চায় না মমতার সরকার। তাই ইদ কিংবা অন্য উৎসব পালনে কড়াকড়ি থাকলেও দুর্গা পূজোর সতর্কতা বিধিটি জনগণের সচেতনতার ওপরেই ছেড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। লােকসভা ভােটের প্রচারে এসে অমিত শাহরা বলেছিলেন, মমতার সরকার দুর্গাপুজো বন্ধ করে দিতে চায়। করােনাকে ইস্যু করে পুজো নিয়ে বিজেপির হাতে আর অস্ত্র তুলে দিতে চান না তৃণমূল নেত্রী। তাই পুজো নিয়ে তেমন কোনও কড়াকড়ি করতে চাননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বরং ক্লাবগুলির হাতে পঞ্চাশ হাজার করে টাকা অনুদান দিয়ে পুজোয় উৎসাহই দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
দিল্লিতে কেজরীওয়াল সরকার সিআরপার্ক কালীবাড়ি ছাড়া কোনও পুজোর অনুমতি দেয়নি। তাই প্রশ্ন উঠছে, ভােটের সমীকরণ কষতে গিয়ে পুজোর অনুমতি বহাল রেখে রাজ্যের মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে না তাে? যেখানে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন দুর্গাপুজোর অনুমতির বিরােধিতা করে বলেছেন, ধর্মে বিশ্বাস আছে সেটা দেখাতে গিয়ে একসঙ্গে জমায়েত হলে নিজেদের বিপদ ডেকে আনব আমরা। আমাদের লক্ষ্য ভাইরাসকে শেষ করে মানবতাকে বাঁচানাে।
মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য সােমবার বারবার সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ভিড় এড়িয়েই পুজো উপভােগ করতে হবে। দূরত্ববিধি মানা এবং সারাক্ষণ মাস্ক পরে থাকা আবশ্যিক বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি তিনি এটাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন গােষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছে। এদিকে চিকিৎসকদের জয়েন্ট ফোরাম থেকেও মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, পুজোয় মানুষের ভিড় নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে বড় বিপদ হবে। একাধিক গবেষণা বলছে, শীতকালে করােনা সংক্রমণের বিস্ফোরণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তবে পুজোর পর কোভিড পরিস্থিতি সামলাতে যথাসাধ্য প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্য সরকার। জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সরকারি কর্মীদের পুজোর ছুটি বাতিল করা হচ্ছে আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে হাসপাতালে বেডের সংখ্যা প্রায় পাঁচশাের মতাে বাড়ানাে হচ্ছে।