দশ বছর ধরে লড়েছি, দীর্ঘদিনের বঞ্চনার  পর বাংলা সম্মান পেয়েছে: মুখ্যমন্ত্রী

বুধ, বৃহস্পতির পর শুক্রবারও একগুচ্ছ দুর্গাপুজোর উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। শুক্রবার শহর কলকাতার ১০টির বেশি পুজো উদ্বোধনের পর ত্রিধারা সম্মিলনীর মণ্ডপ থেকে জেলার চারশো-টি দুর্গাপুজোর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। ভবানীপুর শীতলা মন্দিরের দুর্গাপুজো থেকে একডালিয়া এভারগ্রীন, সিংহি পার্ক থেকে বাদামতলা আষাঢ় সংঘ প্রত্যেক পুজোর উদ্বোধনের শেষে ধর্ম-বর্ণ-জাতির ভেদাভেদ ভুলে সকলকে দুর্গোৎসবে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি, ‘ধ্রুপদী ভাষা’ বাংলার জন্য গর্বও প্রকাশ করেছেন মমতা। বাংলাকে ধ্রুপদী ভাষার সম্মান দেওয়ার পশ্চাতে রয়েছে দশ বছরের কঠিন লড়াই, এমনটাই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা।

এদিন একডালিয়া এভারগ্রীনের দুর্গাপুজোর উদ্বোধন শেষে তিনি বলেন, ‘দশ বছর ধরে লড়াই করছি। অবশেষে বৃহস্পতিবার বাংলাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হলো।’ এরপরই রাজ্য সরকারের নিরলস প্রচেষ্টা ব্যক্ত করে মমতা বলেন, ‘আমি প্রায় আধ-বস্তা মোটা গবেষণাপত্র পাঠিয়ে কেন্দ্রকে চিঠি লিখেছিলাম, আজ যদি তামিলনাড়ু পায় তাহলে বাংলা কেন পাবে না? বাংলা বিশ্বের পঞ্চম এবং এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম ভাষা। অবশেষে আমাদের গবেষণাপত্রকে অস্বীকার করতে পারেনি কেন্দ্র। দীর্ঘদিন বঞ্চিত থাকলেও, বাংলা একটা সম্মান পেয়েছে। এতেই আমি খুশি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি প্রতীকও ছিল না, আমি এসে করেছি। আগে কেউ কখনও এ প্রসঙ্গে বলেওনি।’ বাদামতলা আষাঢ় সংঘের দুর্গাপুজোর উদ্বোধন শেষেও ‘বাংলার গর্ব’ তুলে ধরেন মমতা। তিনি জানান, ‘ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পে মহিলা স্বনির্ভরতার নিরিখে দেশের মধ্যে বাংলা এগিয়ে। শুধু তাই নয়, বাংলার কন্যাশ্রী-রূপশ্রী ইউনেস্কো কর্তৃক প্রশংসিত হয়েছে, বাংলা ‘ধ্রুপদী ভাষা’র সম্মান পেয়েছে যা আমাদের কাছে বড়ো প্রাপ্তি। আমার বিশ্বাস, লক্ষীর ভাণ্ডারও আমাদের রাজ্যে প্রথম শুরু হয়েছে, তাই এটিও একদিন প্রশংসিত হবে এবং স্বীকৃতি পাবে।’


বন্যা-বিধ্বস্তদের করুণ পরিস্থিতিও এদিন দেবী দুর্গার সামনে তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সিংহি পার্ক থেকে তিনি বলেন, ‘এখনও অনেক বন্যা-বিধ্বস্ত মানুষ আছেন। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বিপুল ত্রাণ পাঠানো হয়েছে। যাদের বাড়ি, রাস্তা ভেঙেছে তাঁদেরটা নতুন করে তৈরী করে দিতে হবে। কৃষকদের বিষয়টিও দেখছি, সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছি তাঁদের।’ সমাজসেবী সংঘ থেকেও বন্যায় কৃষক-যন্ত্রণার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে মমতার বক্তৃতায়। তিনি বলেন, ‘আমি এই মঞ্চ থেকেও জানাচ্ছি, বন্যায় অসংখ্য কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। চিন্তা করবেন না, কৃষক বিমার অর্থ পেয়ে যাবেন।’

এই সূত্র ধরেই ভবানীপুর শীতলা মন্দিরের দুর্গাপুজো উদ্বোধন সেরে মুখ্যমন্ত্রী মাতৃমূর্তির দিকে চেয়ে বলেন, ‘মা, সকলকে ভালো রেখো।’ ৬৬ পল্লীর পুজোর উদ্বোধন থেকে নবীন-প্রবীণ সম্প্রীতির বার্তা অনুরণিত হল মুখ্যমন্ত্রীর কণ্ঠে। প্রসঙ্গত, পূর্বেও একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে ‘নবীন-প্রবীণ সম্প্রীতি’র পরামর্শ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ব্যতিক্রম হলো না এবারও। শুক্রে তিনি বলেন, ‘নবীনদের মনের উদ্দীপনা তৈরী হয়েছে প্রবীণদের থেকেই। তাই তাঁদের যেন আমরা না ভুলি।

প্রবীণ-নবীনদের একত্রে এগিয়ে যেতে হবে।’ অন্যদিকে, শুক্রবার থেকে ট্যাবলেট কেনার জন্য একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির দশ লক্ষ পড়ুয়াদের একসঙ্গে ১০ হাজার টাকা দেওয়া শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর ভাষায়, ‘ছাত্রছাত্রীদের জন্য সুখবর। তাঁরা পুজোর আগেই ট্যাব কিনতে পারবে।’ সিংহি পার্কের দুর্গাপুজোর উদ্বোধন শেষে এমনটাই জানিয়েছেন মমতা। বাদামতলা আষাঢ় সংঘের দুর্গাপুজো এদিন ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর কণ্ঠে। থিমের প্রভূত প্রশংসায় মুখর হয়ে মমতা বলেন, ‘মূর্তির লক্ষীর ভাণ্ডারকে আমি সংরক্ষিত করবো।’

একডালিয়া এভারগ্রীনের দুর্গাপুজো থেকে বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘একডালিয়ায় আসলে হৃদয়ে কষ্ট অনুভব হয়। ছাত্র-রাজনীতির সময় থেকে আমি তাঁর বাড়িতে যাতায়াত করি। এমন দিলখোলা মানুষ চলে গেলে আর ফিরে আসে না। তবে আমি বিশ্বাস করি, আত্মা অবিনশ্বর।’ এরপরই সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের অনুরোধ স্মরণ করে এদিন স্তোত্র পাঠ করেন মুখ্যমন্ত্রী।