• facebook
  • twitter
Wednesday, 18 September, 2024

‘ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নয়, দিদি হিসেবে আপনাদের বলতে এসেছি,’ জুনিয়র চিকিৎসকদের ধর্নামঞ্চে এসে ‘শেষ’ চেষ্টা মমতার 

'মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নয়, আমি আপনাদের দিদি হিসেবে আপনাদের ধর্নামঞ্চে এসেছি '- জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের ৩৫ তম দিনে চিকিৎসকদের মুখোমুখি হয়ে বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার দুপুরে সল্টলেকের স্বাস্থ্য ভবনের সামনে জুনিয়র চিকিৎসকদের ধর্নামঞ্চে আচমকাই উপস্থিত হন মমতা। সঙ্গে ছিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। এদিন ধর্নামঞ্চে হাজির হয়ে জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনকে কুর্নিশ জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।  চিকিৎসকদের কাজে ফেরার আবেদন জানিয়ে বললেন , 'এটাই আমার শেষ চেষ্টা।'  

‘মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নয়, আমি আপনাদের দিদি হিসেবে আপনাদের ধর্নামঞ্চে এসেছি ‘- জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের ৩৫ তম দিনে চিকিৎসকদের মুখোমুখি হয়ে বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার দুপুরে সল্টলেকের স্বাস্থ্য ভবনের সামনে জুনিয়র চিকিৎসকদের ধর্নামঞ্চে আচমকাই উপস্থিত হন মমতা। সঙ্গে ছিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। এদিন ধর্নামঞ্চে হাজির হয়ে জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনকে কুর্নিশ জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।  চিকিৎসকদের কাজে ফেরার আবেদন জানিয়ে বললেন , ‘এটাই আমার শেষ চেষ্টা।’  

শনিবার দুপুর ১ টা। হঠাৎই সল্টলেকের জুনিয়র চিকিৎসকদের ধর্নামঞ্চে উপস্থিত হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীকে দেখেই  ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে ধর্নাস্থল। আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের উদ্দেশে তখন কিছু বলার চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাল্টা বাড়ছে আন্দোলনকারীদের স্লোগানমুখর স্বরধ্বনি।  মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘আমি আন্দোলনের ব্যথা বুঝি। আমি নিজে ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে এসেছি।  আপনারা আমার বিরুদ্ধে স্লোগান দিন , আমার কোনও অসুবিধে নেই। তবে আমাকে পাঁচ মিনিট সময় দিন।’
 
মমতা বলেন, ‘আমার নিরাপত্তাজনিত নানা বাধা থাকা সত্ত্বেও আমি নিজেই এখানে ছুটে এসেছি। আপনাদের আন্দোলনকে কুর্নিশ জানাই. আমি জানি আমার পোস্ট বড় কথা নয়. আমি জানি মানুষের পোস্টই বড় কথা। আপনারা কাল সারারাত ঝড়-জলে কষ্ট পেয়েছেন , আমিও সারারাত কষ্ট পেয়েছি। গত ৩৪ দিন ধরে আমিও রাতের পর রাত ঘুমোইনি।আপনারা যখন রাস্তায় থাকেন , আমাকেও পাহারায় থাকতে হয়। আর কষ্ট না করে আপনারা কাজে ফিরুন।  আপনাদের সব  দাবি আমি সহানুভূতির সঙ্গে খতিয়ে দেখব।’ 
 
মুখ্যমন্ত্রী এদিন চিকিৎসকদের উদ্দেশে বলেন, সরকার তিনি একা চালান না। তাঁর সঙ্গে মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব , পুলিশের ডিজি রয়েছেন।  সবার সঙ্গে আলোচনা করে সঠিক পদক্ষেপ করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।  মমতা বলেন, ‘যদি কেউ দোষী হয়, তবে তিনি নিশ্চয়ই শাস্তি পাবেন। আমি চাই তিলোত্তমার বিচার হোক।  আমি সিবিআইকে অনুরোধ করব দ্রুত বিচার করার। তিনমাসের মধ্যে যেন ফাঁসির অর্ডার হয়, আমি বলব ।  যদি আমার উপর ভরসা থাকে আমাকে একটু সময় দিন , আমি নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেব। আপনাদের উপর কোনও অবিচার করব না। ‘
 
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যদি সত্যি কেউ দোষী হয় , তিনি শাস্তি পাবেন। তারা কেউ আমার বন্ধু নয়। আমি তাদের চিনি না, আমাদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। হাসপাতালে দুর্নীতি হলে তার শাস্তি হবে। সবটাই হয় প্রসেসের মাধ্যমে। আমি সাধ্যমত চেষ্টা করব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার। ‘   তিনি বলেন, ‘আপনারা আমার ভাই-বোন, আমি কোনও অ্যাকশন নেবনা। আমি ইউপি পুলিশ নই। আমি আপনাদের মঞ্চে এসেছি আপনাদের সহযোদ্ধা হিসেবে। আপনাদের বলব, আপনারাও ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিন। ‘  
 
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, ‘সমস্ত মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি নতুন করে তৈরি করা হবে। তাতে জুনিয়র চিকিৎসক , সিনিয়র চিকিৎসক, নার্সদের প্রতিনিধি। থাকবে পুলিশ। আরজি করের রোগী কল্যাণ সমিতি আমি ভেঙে দিলাম। নতুন করে তৈরি করা হবে।’ মমতা বলেন, রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদে এবার থেকে মেডিকেল কলেজগুলি প্রিন্সিপালরাই কাজ করবেন। সবাইকে নিয়ে তৈরী করা হবে নয়া রোগী কল্যাণ সমিতি। 
 
প্রসঙ্গত , অতীতে বিভিন্ন সময়ে রোগী কল্যাণ সমিতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি-সহ নানা অভিযোগ উঠেছে। উঠেছে স্বজনপোষণের অভিযোগ।  একাধিকবার অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে রাজি সরকারকে।  মমতার, দাবি, তিনি এই বিষয়গুলি দেখেন না।  এমনকি বিভিন্ন যে টেন্ডার পাশ হয়, তা তাঁর কাছে আসে না। তাই এই সমস্ত দুর্নীতি বন্ধ করতে তিনি সব সরকারি হাসপাতালগুলির রোগী কল্যাণ সমিতি ভেঙে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।    
মমতা এদিন চিকিৎসকদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টে এই মামলা চলছে। ১৭ তারিখ আবার শুনানির তারিখ রয়েছে।  কোনও পদক্ষেপ তাঁদের  বিরুদ্ধে করা হবে না। তিনি বলেন, ‘আমি মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে এখানে আসিনি। আন্দোলনের সমব্যথী, সমসাথী হিসেবে এসেছি। আমি আপনাদের বড় দিদি হিসেবে বলতে এসেছি। আমাকে সময় দিন।’

এদিন ধর্নামঞ্চে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের অভিভাবকের মতো মুখ্যমন্ত্রী পরামর্শ দেন, বাইরে থেকে অনেকেই তাঁদের খাবার দিয়ে যাচ্ছেন , সেই  সব খাবার না খাওয়ার। মুখ্যমন্ত্রী বলেন,”যে যা খাবার দিচ্ছে সব খাবার খাবেন না।”

এরপরেই আন্দোলনরত চিকিৎসকদের  আবার ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ ধ্বনিতে ধর্নামঞ্চ  মুখরিত হয়ে ওঠে। মমতাও তাঁদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে বলে ওঠেন, হ্যাঁ, আমিও জাস্টিস চাই।  তিনি বলেন, ‘আপনাদের কাছে আসা মানে ছোট হওয়া নয়,  বড় হওয়া । তিনি বলেন, আমিও ধর্নামঞ্চে ২৬ দিন অনশন করেছিলাম,  কেউ আসেনি। কিন্তু  আমি আপনাদের কাছে এসেছি। এটাই আমার শেষ চেষ্টা।’’ তিনি বলেন , ‘আমি যদি আপনাদের ধর্না মঞ্চে আসতে পারি, তাহলে আমি বাকিটাও পারব। আমাকে কটা সময় দিন, এক দিনে তো পারব না। দুর্নীতি নিয়ে আপনাদের কোনও অভিযোগ থাকে তাহলে নিশ্চয়ই তদন্ত করে সাজা দেব। তাই আপনারা কাজে ফিরুন। আমি জোর করে তুলে দিতে চাই না। আপনারা ভাল থাকুন। সুস্থ থাকুন।’