আমার অনেক কিছু বলার আছে: সঞ্জয়

আরজি কর কাণ্ডের পর দুই মাসের মধ্যে চার্জশিট পেশ করল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। সেই চার্জশিট পেশ হতেই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা মূল অভিযুক্তের। মঙ্গলবার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারকের কাছে সিবিআইয়ের চার্জশিট পেশের পাশাপাশি সঞ্জয় রায়কেও হাজির করানো হয়। সেখানে তিনি নিজেকে নির্দোষ বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন।

এদিন আদালতে পেশ করতেই বিচারক ও সঞ্জয় রায়ের মধ্যে শুরু হয় কথোপকথন। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে অভিযুক্ত সিভিক সঞ্জয় রায় বিচারকের সামনে বলেন,’ঘটনার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমার অনেক কিছু বলার আছে।’

অভিযুক্তের এই বক্তব্য শুনে বিচারক বলেন, ‘এখানে বলার জায়গা নয়’।


ফের সঞ্জয় পাল্টা বলেন,’আমি কিছু না বললে, আমার ঘাড়ে বিষয়টা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’

তাঁর এই বক্তব্য শোনার পর বিচারক অভিযুক্তের কথা বলার জন্য একটি বিকল্প ব্যবস্থা করে দেন। তিনি বলেন,’আমি আপনার আইনজীবীকে বলছি, হাজতে গিয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলতে। আপনার কথা বলা দরকার। নাহলে এই মামলা চালানো যাবে না।’

এরপরই বিচারক একজন আইনজীবীকে নির্দেশ দেন, হাজতে গিয়ে অভিযুক্তের বক্তব্য শোনার জন্য। প্রসঙ্গত আদালতে সঞ্জয় রায়ের হয়ে কোনও আইনজীবী না লড়লেও আইন অনুযায়ী, বিচারপর্ব শুরু হলে অভিযুক্তের একজন আইনজীবী থাকা বাধ্যতামূলক। সেই মতো বিচারপতি একজন আইনজীবীকে নির্দেশ দেন।

তবে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় এই মামলা নিয়ে আদতে কী বলতে চান? তা নিয়ে যথেষ্ট জল্পনা ছড়িয়েছে। কারণ ইতিমধ্যে মৃতা তরুণী চিকিৎসকের মৃতদেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখে অনেক চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের ধারণা হয়েছে, এই নৃশংস ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় শুধুমাত্র সঞ্জয় রায় জড়িত নয়। তার সঙ্গে রয়েছে আরও একাধিক ব্যক্তি। ওই তরুণী চিকিৎসকের মৃতদেহে একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন, সময়ের ব্যবধান, মৃতদেহের অবস্থান প্রভৃতি বিষয় দেখে একাধিক প্রশ্নচিহ্ন দেখা দেয়। সেই সঙ্গে রয়েছে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে পাওয়া সিমেনের পরিমাণ নিয়েও সংশয়।

উল্লেখ্য, এই চার্জশিটে ধৃত অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার ওসি-র বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তদন্তে ঘটনার সঙ্গে তাঁদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনও যোগ এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। ৯ আগস্টের ঘটনার পর পুলিশ তদন্তের সময়ে আরজি কর হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে। সেমিনার রুমের কাছে তাঁর উপস্থিতি নজরে আসে। এরপর তাঁকে সন্দেহজনকভাবে গ্রেপ্তার করে তদন্ত শুরু হয়।

খবরে প্রকাশ, ওইদিন ভোরবেলা সেমিনার রুমের সামনে থাকা সিসিটিভি-র ফুটেজে সঞ্জয় রায়ের উপস্থিতি নজরে আসে। তাঁকে প্রথমে ওই দিকে যেতে দেখা যায়। এবং প্রায় ৩০ মিনিট পর সেখান থেকে ফিরেও আসতে দেখা যায়। তবে তিনি যে সেমিনার রুমে প্রবেশ করেছিলেন, এমন কোনও চাক্ষুষ প্রমাণ তদন্তকারীদের হাতে আসেনি।

এদিকে ঘটনার তদন্তভার প্রথম পাঁচদিন রাজ্যের হাতে থাকলেও পরে কলকাতা হাইকোর্ট পুলিশের ভূমিকা নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করে। এবং সিবিআই-এর হাতে মামলার তদন্তভার হস্তান্তর করে।