জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জি কার্যকর করতে কেন্দ্রের তরফে যে বৈঠকে ডাকা হয়েছে তাতে যােগ দেব না বলে জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রানি রাসমনি রােডে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের যে ধর্না চলছে সেই ধর্না মঞ্চ থেকে তা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন।
তিনি বলেন, বাংলা থেকে কোনও সচিব বা আমলাও ওই বৈঠকে যাবেন না। বাংলার মানুষের ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। বাংলায় এনআরসি, সিএএ এবং এনপিআর কার্যকর হবেনা সেকথা আগেই ঘােষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি বিজ্ঞাপন দিয়ে নবান্ন জানিয়ে দিয়েছিল সেকথা। যদিও এই বিজ্ঞাপন সংবিধানসম্মত কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। আদালত এই বিজ্ঞাপন সম্প্রচার নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। যদিও বিজ্ঞাপন বন্ধ হলেও এবিষয়ে সরকারের মনােভাব যে বদলায়নি তা স্পষ্ট হয়ে গেল ফের একবার।
প্রসঙ্গত, তৃণমূল পরিচালিত টিটাগড় ও কামারহাটি পুরসভার এনপিআর বিজ্ঞপ্তি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। যার ফলে সাসপেন্ড করা হয়েছে কামারহাটি পুরসভার ইও রবীন্দ্রনাথ সাউকে। পুরসভা দুটির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ্যে আসার পরই বিরােধীদের আক্রমণের মুখে পড়ে তৃণমূল সরকার।
তাদের বক্তব্য মুখে যাই বলুক না কেন আসলে দিল্লির সরকারের তাঁবেদারি করছে নবান্ন। বিতর্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে দেখে বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করে নেয় কামারহাটি পুরসভা। কামারহাটি পুরসভার পুরপ্রধান গােপাল সাহা এপ্রসঙ্গে দায় চাপনা আধিকারিকদের উপর। পাশাপাশি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যায় নির্দেশ দিয়েছেন তাই হবে। বাংলায় এনআরসি হচ্ছে না।
সম্প্রতি, ১২ জানুয়ারি বেলুড় মঠের মঞ্চকে ব্যবহার করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি। সংশােধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রচার করতে এদিন মােদি বলেছিলেন, ‘নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার জন্য নয় নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য এই সিএএ। আর এই সংশােধনী আইন নিয়ে সাধারণের মনে যে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয়েছে তা দূর করার জন্য যুব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে’।
এখানেই থামেননি মােদি অনেকটা রাজনৈতিক সভার ঢঙে অনুষ্ঠানে উপস্থিত যুব সম্প্রদায়ের কাছে এই নিয়ে মতামত জানতে চান তিনি। অনেক পড়ুয়াই হাত তুলে মােদিকে সমর্থন করে। এরপরেই উচ্ছ্বসিত মােদি বলেন, ‘যে সহজ সত্যটা আপনারা ও অনেকেই সহজে বুঝেছেন, তা রাজনৈতিক খেলােয়াড়েরা কেন বুঝতে পারছেন না, নাকি বুঝেও না বােঝার ভান করছেন’।
যদিও কলকাতায় সফররত মােদি বিপক্ষেই উত্তল হয়েছিল নাগরিক সমাজ। বাম ছাত্র সংগঠনের পাশাপাশি ধর্না মঞ্চও করেছিল তৃণমূল। নাগরিকত্ব সংশােধনী আইনের প্রতিবাদ জানাতে। মােদি যখন কপ্টারে আকাশপথে ছিলেন সেই সময় কলকাতার রাজপথ অহিংস বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে।
অন্যদিকে, দিল্লিতেও সােনিয়া গান্ধির নেতৃত্বে বৈঠক হয় সিএএ’র বিরুদ্ধে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই বৈঠকে যেতে না পারলেও আগামী দিনে নাগরিকত্ব সংশােধনী আইনের প্রতিবাদে তিনি যে লড়াই ছাড়বেন না, তা তাঁর দলের ধর্ণা মঞ্চে স্পষ্ট। তিনি নিয়ম করে ধর্না মঞ্চে যাচ্ছেন। নাগরিকত্ব সংশােধনী আইনের প্রতিবাদ জারি রাখতে এদিন অবশ্য ধর্না মঞ্চ থেকে তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন, এনপিআর নিয়ে দিল্লিতে যে বৈঠক ডাকা হয়েছে সেখানে তিনি তাে দুরের কথা বাংলা থেকে কোনও আমলা বা সচিব পাঠাচ্ছেন না।
দিন কয়েক আগে বিহার বিধানসভাতেও নাগরিকত্ব সংশােধনী আইন নিয়ে যথেষ্ট বিতর্কের প্রয়ােজন রয়েছে বলে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার জানিয়েছেন, সব মিলিয়ে এখন দেখার নাগরিকত্ব সংশােধনী আইনকে কেন্দ্র করে কোন খাতে বয় দেশের রাজনীতি।