কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সাম্প্রতিক মন্তব্যে রাজ্য রাজনীতিতে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। যা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে তৃণমূলের অন্দরেই। তিনি রাজ্যে ও দেশে মুসলিমদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে উগ্র মৌলবাদী চিন্তাধারা তুলে ধরেছেন। যা যথেষ্ট বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। তাঁর মুখে এমন গোড়া মৌলবাদী কথা শুনে বিস্মিত হয়েছেন দলের নেতারা। অথচ তাঁর মুখে সংখ্যালঘু গরিব শিশুদের কীভাবে শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা যাবে, সেবিষয়ে কোনও দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ্য করা যায়নি।
এতসবের পরেও থামতে রাজি নন মেয়র। ফের নিজের অবস্থানে অনড় থেকে আবারও বিতর্কিত মন্তব্য করে সেই বিতর্কের আগুনে যেন ঘৃতাহুতি দিলেন। বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন রাজ্যের প্রাক্তন দাপুটে আইপিএস অফিসার এবং বর্তমানে ডেবরার বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজ্যের মন্ত্রী ও কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে ‘হুজুর হাকিম জী’ বলে কটাক্ষ করেছেন। তাঁর পোস্টে ফিরহাদকে আক্রমণ করে বলেছেন,’জিন্দেগি লম্বি নেহি, বড়ি হোনি চাহিয়ে হুজুর হাকিমজি- কোয়ান্টিটি নয়, কোয়ালিটি চাই। ৫ বাচ্চা- রিক্সাওয়ালা, সবজিওয়ালা, ঠেলাওয়ালা, পরিযায়ী শ্রমিক, হকার না হয়ে দু’বাচ্চা শিক্ষক-ডাক্তার নিদেনপক্ষে আমার মতো পুলিশ হওয়া ভাল নয় কি?’
প্রসঙ্গত ববি হাকিমের একটি সংগঠন রয়েছে, যার নাম ‘ফিরহাদ থার্টি’। সেই সংগঠনের তৃতীয় এডুকেশন কনফারেন্সে কলকাতা পুরসভার মেয়র বলেন, ‘বাংলায় আমরা ৩৩ শতাংশ। কিন্তু ভারতে মাত্র ১৭ শতাংশ। তবে আমরা নিজেদের সংখ্যালঘু ভাবি না। আমরা ভাবি আল্লাহর রহমত যদি আমাদের উপর থাকে, তাহলে আমরা একদিন সংখ্যাগুরুর থেকেও সংখ্যাগুরু হব। আল্লাহর এই নির্দেশ তথা ইচ্ছাকে আমাদের তাকত দিয়ে হাসিল করতে পারব।’
বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে যথেষ্ট চর্চা শুরু হয়েছে। দেশ ও রাজ্যের সংখ্যালঘু ও অনগ্রসর শ্রেণীর শিক্ষা ও দক্ষতা বাড়ানোর ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়ার প্রয়োজন অপরিহার্য। সেবিষয়ে কোনও ভ্রান্তি নেই। কিন্তু সংখ্যালঘুদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি করা, অর্থাৎ সংখ্যাগুরু হয়ে ওঠা বা বিচারের প্রসঙ্গে মন্ত্রী যে সব কথা বলেছেন তাতে বিতর্কের জন্ম দেওয়াটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রীর এই মন্তব্যে শাসক দল তৃণমূলকে যে যথেষ্ট অস্বস্তিতে ফেলবে, সেবিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ, রাজ্যের শাসকদল প্রধান বিরোধীদল বিজেপির বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদ ও ধর্মীয় মেরুকরণের বিরুদ্ধে বারবার আক্রমণ শানিয়েছে। দলের শীর্ষ নেতারা প্রকাশ্য জনসভায় বরাবরই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে কথা বলেছেন।