ফের একবার পরিবর্তন করা হল উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার দিনক্ষণ। প্রসঙ্গত, এর আগে উচ্চমাধ্যমিকের বাকি থাকা তিনটি পরীক্ষার দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়েছিল যথাক্রমে ২৯ জুন এবং ২ ও ৬ জুলাই। যা পরিবর্তন করে করা হল ২, ৬ এবং ৮ জুলাই।
অর্থাৎ শুধুমাত্র ২৯ জুনের পরিবর্তে পরীক্ষা নেওয়া হবে ৮ জুলাই এবং বাকি দুটি দিন অপরিবর্তিতই থাকলো। মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলন করে এমনটাই জানালেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে শিক্ষামন্ত্রী একাধিক যুক্তি দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, প্রথমত, আম্ফানের জেরে দক্ষিণবঙ্গের অনেক পরীক্ষাকেন্দ্রে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যা যত শীঘ্র সম্ভব পুনঃনির্মাণের কাজ করা হলেও তা সময় সাপেক্ষ।
দ্বিতীয়ত, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে ছাত্র ছাত্রীদের বাঁচানোর জন্য এবং লকডাউনেও যাতে তারা সঠিক সময় পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারে, তার জন্য যতটা সম্ভব ছাত্র ছাত্রীদের বাড়ির কাছেই তাদের পরীক্ষা কেন্দ্রগুলি ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। ফলে পুনরায় আধিকারিকদের এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে।
তৃতীয়ত, এই মুহূর্তে হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে এনে বিভিন্ন স্কুলে আইসোলেশন করে রাখা হয়েছে। তাদেরকেও সেখান থেকে স্থানান্তর করা এবং স্কুলগুলিকে ভাইরাস মুক্ত করার কাজও যথেষ্ট সময় সাপেক্ষ।
এছাড়া সর্বশেষে, যেহেতু অন্যান্য সকল বোর্ডের পরীক্ষাই জুলাই মাসেই হচ্ছে তাই তার সঙ্গে একটা সামঞ্জস্য বজায় থাকবে। তাই সবকিছু বিবেচনা করার পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেই জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি আরও জানিয়েছেন, দিনক্ষণ ঘোষণা হলেও কোন পরীক্ষা কোন দিনে নেওয়া হবে তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদই। এদিন শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণার পর চলতি সপ্তাহের মধ্যেই সংসদের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে ঘোষণা করা হবে বলে সূত্রের খবর।
তবে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রে জানা গেছে, দেশ জোড়া লকডাউনের কারণে যখন প্রথম উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছিল তখন ক্রম অনুযায়ী যে তিন দিরে পরীক্ষা বাকি ছিল নতুন এই সময়সুচিতেও সেই একই ক্রমান্বয় বজায় রাখা হবে। অর্থাৎ ২ জুলাই নেওয়া হতে পারে পদার্থবিদ্যা, নিউট্রিশন, এডুকেশন ও অ্যাকাউন্টেন্সি। ৬ জুলাই নেওয়া হতে পারে রসায়ন, অর্থনীতি, জার্নালিজম অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশন, সংস্কৃত, পার্শিয়ান, আরবি ও ফরাসি। ৮ জুলাই নেওয়া হতে পারে স্ট্যাটিস্টিক্স, ভূগোল, কস্টিং অ্যান্ড ট্যাক্সেশন, হোম ম্যানেজমেন্ট ফ্যামিলি রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট।
এদিন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় পুনরায় মনে করিয়ে দেন পরীক্ষার্থীদের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার সমস্ত বিধিনিষেধ সম্পর্কেও। তিনি জানান, মূলত পরীক্ষার সময় ছাত্র-ছাত্রীদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার বোতল সঙ্গে করে আনতে হবে এবং তার সঙ্গে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক বা ফেস কভার পরে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকতে হবে। এছাড়াও সামাজিক দূরত্ব বিধির নিয়ম মেনেই প্রত্যেকটি পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়া হবে। যেমন পরীক্ষা দেওয়ার সময় প্রত্যেকটি বেঞ্চে একজন করে পরীক্ষার্থী বসতে পারবে। তারপর দ্বিতীয় বেঞ্চ খালি রেখে আবার তৃতীয় বেঞ্চে বসবেন পরীক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের তরফে বাকি থাকা বিষয়গুলির পরীক্ষার দিন ঘোষণা করা পাশাপাশি পরীক্ষা নেওয়ার আগে বা পরীক্ষা চলাকালীন কি কি গাইড লাইন মানতে হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত তালিকা দেওয়া হয়েছে সংসদের তরফে। মূলত পনেরো দফা গাইড লাইন থাকছে।
পরীক্ষা কেন্দ্রগুলির ঘর, বেঞ্চ এবং টয়লেটগুলি স্যানিটাইজ করতে হবে। স্কুলের সমস্ত শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভস পরা বাধ্যতামূলক। একে অপরের সঙ্গে যখন কথা বলবে সেই সময় সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে চলতে হবে। পরীক্ষা কেন্দ্রে পর্যাপ্ত স্যানিটাইজার ও হ্যান্ডওয়াস রাখতে হবে। প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে নিজস্ব স্যানিটাইজার নিয়ে যেতে হবে একটি স্বচ্ছু বোতলে। শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রে ঢোকার আগে এবং পরে এবং পরীক্ষা চলাকালীন মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। পরীক্ষা কেন্দ্রের মধ্যে এক পরীক্ষার্থীর সঙ্গে অন্য পরীক্ষার্থীর ন্যূনতম দূরত্ব তিন ফুট রাখতে হবে। প্রত্যেক অভিভাককে নিশ্চিত করতে হবে যে তাদের ছেলে বা মেয়ের কারও জ্বর নেই বা ছিল না। এরকমই পনেরো দফা নির্দেশিকা রয়েছে। যদি কোনও পরীক্ষা কেন্দ্রের বদল ঘটে তা স্কুল মারফত ছাত্রছাত্রীদের জানিয়ে দেওয়া হবে।