• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

কিভাবে ঘটল সেই ট্রেন দুর্ঘটনা, মালগাড়ি এতো জোরে ছুটছিল কেন?

বাপি ঘোষ, শিলিগুড়ি :  সোমবার ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে রাঙাপানি নিজবাড়ির মধ্যে। মঙ্গলবারও সর্বত্র ট্রেন পরিষেবা স্বাভাবিক হয়নি।বহু ট্রেন এখনো অনেক দেরিতে চলছে। সোমবার রাতের ট্রেনগুলো এনজেপি থেকে মঙ্গলবার ভোরে ছাড়ে।ফলে সারা রাত স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে সময় অতিবাহিত করতে হয় বহু যাত্রীকে।অপরদিকে দুর্ঘটনাস্থল নিজবাড়ি এবং রাঙাপানিতেও ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। এখন ট্রেন দুর্ঘটনার কারন নিয়ে

বাপি ঘোষ, শিলিগুড়ি :  সোমবার ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে রাঙাপানি নিজবাড়ির মধ্যে। মঙ্গলবারও সর্বত্র ট্রেন পরিষেবা স্বাভাবিক হয়নি।বহু ট্রেন এখনো অনেক দেরিতে চলছে। সোমবার রাতের ট্রেনগুলো এনজেপি থেকে মঙ্গলবার ভোরে ছাড়ে।ফলে সারা রাত স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে সময় অতিবাহিত করতে হয় বহু যাত্রীকে।অপরদিকে দুর্ঘটনাস্থল নিজবাড়ি এবং রাঙাপানিতেও ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। এখন ট্রেন দুর্ঘটনার কারন নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার  রেল দুর্ঘটনাকবলিত স্থান  পরিদর্শন করেন চিফ কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি জনক কুমার গর্গ।

জানা যাচ্ছে,সোমবার ট্রেন দুর্ঘটনার আগে অটোমেটিক সিগন্যাল ব্যবস্থা কাজ করছিল না৷ সেই জায়গায় অবশ্য  কাগুজে সিগন্যাল দিয়েও কাজ করা যায়। কিন্তু সেই  মালগাড়ির গতিবেগ ৭৮ কিলোমিটার প্রতি  ঘন্টায় কি করে হয়েছিল,  সবটাই তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন   চিফ কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি জনক কুমার গর্গ। রাঙাপানি স্টেশনে সিগনালের  ব্যাপক গাফিলতির অভিযোগও উঠে আসছে। মালগাড়ির গতিবেগে এত স্পীড এলো কিভাবে, রাঙাপানি স্টেশন দিয়ে কিছু সময় আগে কাঞ্চনজঙ্ঘা পার করেছে, তারপর এতো জোরে মালগাড়ি কিভাবে পার হচ্ছিল বারবার সেই প্রশ্ন জমা হচ্ছে রেলওয়ে নিরাপত্তা বিভাগের কাছে। রেলওয়ে যাত্রীদের অনেকেই রেল মন্ত্রকের কাছে এই ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে রেলকে কড়া এবং সঠিক বিজ্ঞান সন্মত পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছেন।  তাদের বক্তব্য, রেল মন্ত্রক এখনই দুর্ঘটনা প্রতিরোধে স্থায়ী বিজ্ঞান সন্মত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ভবিষ্যতে রেল দপ্তর আরও ক্ষতির মধ্যে পড়বে। আর যাত্রী সাধারনও আতঙ্কের মধ্যে পড়ছেন। অনেকেই ট্রেনে চাপতে ভয় পাচ্ছেন। যাত্রীদের আতঙ্ক কমাতে রেল প্রশাসনকেই এখন সঠিক বিজ্ঞান সন্মত ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
ট্রেন দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত পুলিশ কর্মী :
রাঙাপানি নিজবাড়িতে সোমবার  কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন হাবরার বাসিন্দা  মনোজ কুমার দাস। তিনি একজন  পুলিশ কর্মী। শিলিগুড়িতে কর্মরত। সোমবার কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস   চেপে শিয়ালদহ যাচ্ছিলেন তিনি । সকালে এনজেপি থেকে ট্রেন ছাড়বার পর তিনি ট্রেনের কামরায় বসে  মোবাইল দেখছিলেন। আর সেই সময়ই   মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে যায়।দুর্ঘটনায় সেই পুলিশ কর্মীর পা ভেঙে কামরার সিটের মধ্যে  আটকে যায়।পরে তাঁকে উদ্ধার করে আশঙ্কাজনক অবস্থায়  উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসা হয়। ঘটনার অনেক পরে  হাবরায়  তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাছে খবর পৌঁছায় ।মঙ্গলবার আহত সেই পুলিশ কর্মীর পরিবারের লোকজন  শিলিগুড়ি এসে পৌছান ।বর্তমানে সেই পুলিশ কর্মী  মেডিক্যাল কলেজের ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে আসতে শুরু করেছেন ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত ও আহতদের পরিবার :
সোমবার শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া রাঙাপানি এবং নিজবাড়ির মধ্যে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে। সেই দুর্ঘটনায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার মৃতের সংখ্যা আরও বেড়েছে। এদিন মৃত্যু হয় দুজনের। মঙ্গলবার সকাল থেকে  উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে আসতে শুরু করছেন মৃত ও আহতদের পরিবার। পুলিশ কর্মীরা সেই সব  পরিবারের সঙ্গে  কথা বলে মৃতদেহ গুলি তাঁদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য  কাজকর্ম শুরু করেছেন। কলকাতার বালিগঞ্জ থেকে মৃতশুভজিৎ মালীর দেহ নিতে আসেন তাঁর পরিবার।*যদিও ময়নাতদন্ত হওয়ার পর মৃতদেহের কাগজপত্র সংগ্রহ করতে তাদের বেশ নাজেহাল হতে হয় বলে অভিযোগ। অপরদিকে মঙ্গলবার ভোর রাতে সেই কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস শিয়ালদহে পৌঁছায়। সোমবার মধ্যরাতে ট্রেনটি বর্ধমান স্টেশনে পৌঁছায়। ট্রেন থেকে নেমে বহু যাত্রী সেই অভিশপ্ত দুর্ঘটনার আতঙ্ক ভুলতে পারছেন না। তাদের অনেকেই বলেন,অভিশপ্ত ট্রেন দুর্ঘটনার স্মৃতি বহু দিন তাড়া করে বেড়াবে।সোমবার ট্রেন দুর্ঘটনার পরপরই নিজবাড়ি এলাকায় গিয়ে অনেকেই যেমন আহত এবং অভিশপ্ত ট্রেন যাত্রীদের পাশে দাঁড়ান মানবিক কারনে তেমনই কিছু দুষ্কৃতি সেখানে অবস্থার সুযোগ নিয়েছে। দুর্ঘটনা হওয়ার পরপরই যখন  পুলিশ প্রশাসন এবং রেল দপ্তরের লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছান নি তখন কিছু দুষ্কৃতি সেখানে মৃত ও আহত যাত্রীদের জিনিসপত্র নিয়ে চম্পট দিয়েছে বলে অভিযোগ। এসি কামরার যাত্রীরা বলেন,” বীভৎস ট্রেন দুর্ঘটনার পর আমরা সবাই আতঙ্কে ছিলাম ট্রেনের মধ্যে। তখন কিছু মানুষ ট্রেনের কামরার সামনে এসে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে যাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলতে থাকে,” আপনারা সবাই ট্রেনের কামরা থেকে বেরিয়ে আসুন।ট্রেনে আগুন লেগেছে। ” এই কথা শুনে কিছু যাত্রী ট্রেনের কামরার মধ্যে ছোটাছুটি করতে থাকে। তখন বয়স্ক যাত্রীদের মধ্যে কয়েকজন পরিস্থিতি সামাল দেন। তাঁরা ভয় পেয়ে যাওয়া যাত্রীদের বলতে থাকেন, “কেও কামরা ছেড়ে বের হবেন না।এরা আগুন লাগার মিথ্যা খবর দিয়েছে। আগুন লাগার খবর পেয়ে ভয়ে কামরা ছেড়ে বের হলে এরা লুটপাট করবে।”