ট্রেন দুর্ঘটনায় ঈদের উৎসবে আর বাড়ি ফেরা হল না আউশগ্রামের গৃহবধূর, ঘরে এল তাঁর নিথর দেহ

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আধিকারিকরা পৌঁছলেন মৃতার বাড়িতে

আমিনুর রহমান, বর্ধমান, ১৮ জুন:  সোমবার সাত সকালে শিলিগুড়ির রাঙাপানি এবং নীচবাড়ি স্টেশনের মাঝে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল শিয়ালদহগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। সরকারি সূত্রে খবর, এই ঘটনায় সোমবার রাত পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হওয়া যাত্রীদের তালিকায় উঠে আসে পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম এলাকার এক গৃহবধুর নাম। সোমবার ছিল ঈদুজ্জোহা উৎসব। আর সেজন্যই গুসকরা শহরের ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিউটি বেগম (৪১) বাড়ি ফিরছিলেন। কিন্তু তাঁর আর ঘরে ফেরা হয়নি। সোমবার গভীর রাতে তাঁর বাড়িতে আসে নিথর দেহ। সোমবার রাতেই অভিশপ্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরেই সনাক্ত করা মৃতদেহ ছাড়ে রেল দপ্তর। জানা গিয়েছে, মৃত গৃহবধূর স্বামী শেখ হাসমত পেশায় একজন গাড়ি চালক। এদিন তাঁর নিজের গাড়িতে করেই স্ত্রীর মরদেহ নিয়ে বাড়ি ফেরেন।

মৃত বিউটি বেগমের স্বামী শেখ হাসমত আগে গুসকরা পৌরসভার অস্থায়ী চালক ছিলেন। পরে শিলিগুড়িতে একটি বেসরকারি বিস্কুট কারখানায় চাকরি পান। বিউটি বেগম সেই সূত্রে স্বামীর কর্মসূত্রে উত্তরবঙ্গে থাকতেন। ঈদুজ্জোহা উপলক্ষে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে একসঙ্গে উৎসব পালন করতে বাড়ি ফিরছিলেন একাই। স্বামী তাঁকে ট্রেনে চাপিয়ে দেন। তারপর সকাল ৮ নাগাদ বিউটি বেগম তাঁর মেয়ে সুনয়নীর সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন। মেয়েকে তিনি জানান, এখানে খুব বৃষ্টি হচ্ছে। সেটাই ছিল পরিবারের কারও সঙ্গে তাঁর শেষ কথা। বাড়ির লোকজনও অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু তারপর সকালে রেল দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই উদ্বেগ বাড়ে পরিবারের। ফোনে যোগাযোগ করেও কোনও লাভ হয়নি। অনেক পরে বেলার দিকে দুঃসংবাদ আসে বাড়িতে। আর তারপরেই রেল দুর্ঘটনায় বিউটি বেগমের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েন এলাকার মানুষজন। উৎসব থাকলেও গোটা গ্রাম জুড়ে নীরবতা নেমে আসে।


এদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সোমবার সন্ধ্যায় বিউটি বেগমের বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন গুসকরা পৌরসভার চেয়ারম্যান কুশল মুখোপাধ্যায় ও আউসগ্রাম -১ ব্লকের যুগ্ম সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক সমীর কুমার নস্কর। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারের হাতে আর্থিক সহায়তাও তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মঙ্গলবারও ওই গ্রামে ছিল শোকের ছায়া। শয়ে শয়ে গ্রামবাসীরা পৌঁছে যান পরিবারের লোকজনকে সমবেদনা জানাতে। এমনকি আশপাশের বহু গ্রাম থেকেও মানুষজন ছুটে আসেন। নেতা নেত্রীরা এসে পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে দেখা করে পাশে থাকার আশ্বাস দেন।