জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত দফতরগুলিকে বাদ রেখে সমস্ত সরকারি, বেসরকারি দফতর আগেই বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নবান্ন। লােকাল ট্রেন বন্ধ রাখার কথা আগেই ঘােষণা করা হয়েছিল। এবার বাস, মেট্রো, ফেরি পরিষেবা সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জরুরি পরিষেবা ছাড়া ট্যাক্সি এবং অটো চলাচল করবে না। বন্ধ থাকবে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সব মিলিয়ে কার্যত লকডাউনের পথেই রাজ্য।
গতবার লকডাউনে মানুষকে বিভিন্ন অজুহাতে বাইরে বেরােতে দেখা গিয়েছে। এবার তা রুখতে আগামী পনেরাে দিন জরুরি প্রয়ােজন ছাড়া রাত ন’টা থেকে পরের দিন ভাের পাঁচটা পর্যন্ত বাইরে বেরােনাের উপর বিধি নিষেধ আরােপ করা হয়েছে। ব্যক্তিগত গাড়ি চালানাে যাবেনা। কেবল মাত্র দিনের বেলায় নিজের গাড়ি নিয়ে একমাত্র টিকা নিতে যেতে পারবেন মানুষজন।
শনিবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে একথা ঘােষণা করেছেন রাজ্যের মুখ্য সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন করােনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত সবাইকেই মেনে চলতে হবে। যারা এর অমান্য করবেন তারা মহামারি আইনে পড়বেন। এই আইনে তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এই মুহূর্তে রাজ্যে দৈনিক করােনা সংক্রমণ কুড়ি হাজারের কাছাকাছি ঘােরাফেরা করছে। শনিবার স্বাস্থ্যদফতরের পরিসংখ্যান বলছে গত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যু হয়েছে ১৪৪ জনের। এই পরিস্থিতিতে আরও দুই সপ্তাহের জন্য বেশ কিছু বিধিনিষেধ জারি করল নবান্ন। নির্দেশিকা অনুযায়ী স্বাস্থ্য, আদালত, বিদ্যুৎ, রান্নার গ্যাস, পানীয় জল, সংবাদ মাধ্যম, সাফাই, কারাগার, পেট্রোল পাম্প, গাড়ির যন্ত্রাংশের মতাে জরুরি পরিষেবা প্রদানকারী দফতর চালু থাকবে। বাকি সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি দফতর বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে শপিং মল, স্পা, সিনেমা হল, শরীরচর্চা কেন্দ্র, সুইমিংপুলও। সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খােলা থাকবে মিষ্টির দোকান।
শনিবার দুপুরে রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় আজ অর্থাৎ রবিবার থেকে টানা ১৫ দিনের লকডাউন ঘােষণা করেছেন। তাতে সুরাপায়ীদের কাছে দুসংবাদ শুনিয়েছে রাজ্য সরকার। অর্থাৎ মদের দোকান বন্ধ থাকছে এই ১৫ দিন। মদ অত্যাবশ্যক পণ্য নয়। তাছাড়া গতবছরে লকডাউনের সময় মদের দোকান বন্ধ রাখা হলে কালােবাজারি যেমন চলেছিল। আবার পরে সরকার খুলবার অনুমতি দিলে রেশনের দোকানের থেকেও লম্বা লাইন দেখা যায়। সেখানে কোন শারীরিক দূরত্ব ছিলনা। তাই এবার পুরােপুরি বন্ধ থাকছে মদের দোকান। তবে মিষ্টির দোকান খােলা থাকবে সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। মিষ্টির দোকানের সাথে যুক্ত দুধ। এই ব্যবসার সাথে যুক্ত অনেক মানুষ। তাই লকডাউনে মিষ্টি পেলেও অমিল হচ্ছে সুরাপান।
মদের দোকান বন্ধ থাকবে। খােলা থাকবে এটিএম, তবে ব্যাঙ্ক খােলা থাকবে সকাল দশটা থেকে দুটো পর্যন্ত। হােটেল এবং রেস্তোরা আগের মতই বন্ধ থাকবে। মুদিখানা এবং বাজার খেলা থাকবে সকাল সাতটা থেকে দশটা পর্যন্ত। সৎকারে কুড়ি জনের বেশি জমায়েত করা যাবে না। বিয়ে বাড়িতে জমায়েত করতে পারবেন না পঞ্চাশ জনের বেশি। সমস্ত ধর্মীয় সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক সমাবেশ বন্ধ থাকবে। তিরিশ শতাংশ কর্মী নিয়ে চালু থাকবে চটকল। পঞ্চাশ শতাংশ কর্মী নিয়ে খুলে রাখা যাবে চা বাগান। রান্নার গ্যাস সরবরাহ কেন্দ্র এবং ই-কমার্স চালু থাকবে।