বহু হতাহতের আশঙ্কা
নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা: মধ্যরাতে বিপর্যয় গার্ডেনরিচে। ঝুপড়ির উপর হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল নির্মীয়মাণ বহুতল। এখনও পর্যন্ত পাঁচ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। আরও বহু মানুষের হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। মৃতদের চার জনের পরিচয় জানা গিয়েছে। তাঁদের নাম শামা বেগম(৪৪), হাসিনা খাতুন (৬০), আকবর আলী(৩৪), রিজুয়ান আলম (২৩)। এছাড়া ১৯ বছরের আরও যুবকের মৃত্যু হয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছেন নগরপাল বিনীত গোয়েল ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকরা। ভেঙে পড়া বহুতলের নীচ থেকে আহতদের উদ্ধারের কাজ চালানো হচ্ছে। রাত ১টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত ১০ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তাঁদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলেই জানা গিয়েছে। কংক্রিটের চাঙড় যত দ্রুত সম্ভব সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
রবিবার রাত ১২টার কিছু আগে ঘটনাটি ঘটেছে গার্ডেনরিচের ফতেপুরে ব্যানার্জীপাড়া লেনের আজহার মোল্লা বাগান এলাকায়। এই এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়েছে। সেখানেই ছিল ওই পাঁচতলা বহুতলটি। বেশ কিছু দিন ধরে সেখানে নির্মাণের কাজ চলছিল।
সূত্রের খবর, এই ঘটনায় বহু মানুষ জখম হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অবশ্য কারও মৃত্যু হয়েছে কি না, তা এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট হয়নি। অবশ্য ভাঙা চাঙরের নীচে কেউ চাপা পড়ে আছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে, সেই সময় এলাকায় প্রায় সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। হঠাৎ কানফাটানো আওয়াজে সবাই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। এসেই তাঁরা চারিদিক ধুলোয় ভর্তি দেখতে পান। কংক্রিটের বহুতল ভেঙে পড়েছে দেখেই, আতঙ্ক ছড়ায় এলাকায়। ভেঙে পড়া নির্মীয়মাণ ভবনটি পাঁচ তলার। সেটি টালি ও ঝুপড়ি ঘরের উপর ভেঙে পড়েছে। এই ঘটনার জন্য বেআইনি নির্মাণকেই দায়ী করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ওই বহুতলের নীচে এবং আশেপাশে বেশকিছু ঝুপড়ি ঘর ছিল। খবর পাওয়া যাচ্ছে যে, ওই বহুতলেও বেশ কিছু লোকজন ছিল। ফলে, ধ্বংসস্তূপের নীচে কতজন আটকে রয়েছে, এখনও কেউ চাপা পড়েছেন কি না, তা এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারছে না প্রশাসন। এমনকী, কারও মৃত্যু হয়েছে কি না-সেটাও বলা যাচ্ছে না। ওই এলাকায় একাধিক বহুতল রয়েছে। ফলে, মুহূর্তের মধ্যে প্রবল আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ওই এলাকায়। শুধু তা-ই নয়, যে বাড়িটি ভেঙেছে, তার পাশে আরও একটি ভবনও হেলে রয়েছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছে দমকল, পুলিশ এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা। উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এমনকী, এলাকায় পর্যাপ্ত আলো লাগানো হয়েছে। ঘিঞ্জি এলাকা হওয়ায়, উদ্ধারকাজে সমস্যা হচ্ছে।
লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁরা দুপুর ১২টা নাগাদ এই দুর্ঘটনার খবর পান। অবশ্য পুলিশের তরফ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তৎপরতার সঙ্গে উদ্ধারকাজ শুরু করা হয়েছে। প্রস্তুত করা হচ্ছে অ্যাম্বুল্যান্সও। আহতদের দ্রুত হাসপতালে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ওদিকে বন্দর এলাকায় ট্রাফিক পরিস্থিতি পরিষ্কার রাখা হয়েছে। কেউ আটকে রয়েছেন কি না, তা দেখতে ধ্বংসস্তূপে টর্চের আলো দিয়ে ডাক দিচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ওদিকে উদ্ধারকারীরাও বলছেন, কেউ যদি ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকে থাকেন, তাহলে তাঁরা যেন চিৎকার করে উদ্ধারকারীদের ডাকেন।