• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

সন্দেশখালিতে ১৪৪ ধারা বাতিল করল হাইকোর্ট

কলকাতা, ১৩ ফেব্রুয়ারি: সন্দেশখালিতে পর্যায়ক্রমে হিংসা ও জনরোষের নিয়ন্ত্রণে পুলিশের জারি করা ১৪৪ ধারা খারিজ করে দিল আদালত। আজ, মঙ্গলবার বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের সিঙ্গল বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে। হাইকোর্টের বিচারপতি সেনগুপ্ত সমগ্র সন্দেশখালি জুড়ে এই ধারা জারির বিপক্ষে। তিনি বলেন, যেসব জায়গাগুলি উত্তেজনাপ্রবন, নির্দিষ্ট সেই জায়গাগুলি চিহ্নিত করুক প্রশাসন। শুধুমাত্র সেই সংশ্লিষ্ট জায়গাগুলিতেই ১৪৪ ধারা

কলকাতা, ১৩ ফেব্রুয়ারি: সন্দেশখালিতে পর্যায়ক্রমে হিংসা ও জনরোষের নিয়ন্ত্রণে পুলিশের জারি করা ১৪৪ ধারা খারিজ করে দিল আদালত। আজ, মঙ্গলবার বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের সিঙ্গল বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে। হাইকোর্টের বিচারপতি সেনগুপ্ত সমগ্র সন্দেশখালি জুড়ে এই ধারা জারির বিপক্ষে। তিনি বলেন, যেসব জায়গাগুলি উত্তেজনাপ্রবন, নির্দিষ্ট সেই জায়গাগুলি চিহ্নিত করুক প্রশাসন। শুধুমাত্র সেই সংশ্লিষ্ট জায়গাগুলিতেই ১৪৪ ধারা জারি করা যেতে পারে। যদিও সিঙ্গল বেঞ্চের এই রায়ের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে যাওয়ার পথ খোলা রয়েছে। তবে রাজ্য সরকার সেই পথে হাঁটবে কিনা এখনও কিছু জানা যায়নি।

এদিন এই মামলার শুনানিতে বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত বলেন, একটা – দু’টো এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হলে বুঝতাম। আপনারা তো গোটা সন্দেশখালিতে ১৪৪ ধারা জারি করে দিয়েছেন। এভাবে ১৪৪ ধারা জারি করা যায় না কি? এর পরে তো কোনও একদিন গোটা কলকাতায় ১৪৪ ধারা জারি করে দেবেন।

বিচারপতি বলেন, বিস্তীর্ণ এলাকায় এভাবে ১৪৪ ধারা জারি করা যায় না। প্রয়োজন হলে পুলিশ উত্তেজনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে ১৪৪ ধারা জারি করতে পারে। বিচারপতি আরও বলেন, সন্দেশখালিতে ওঠা অভিযোগ খুবই গুরুতর। জনজাতিভুক্ত মানুষের জমি দখল ও মেয়েদের সম্ভ্রম লুঠ করার অভিযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, কেন সেখানে সর্বত্র ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে সেবিষয়ে রাজ্যের ব্যাখ্যা স্পষ্ট নয়।

এদিন বিচারপতি অপূর্ব সিংহ রায় সন্দেশখালির ঘটনায় একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘সন্দেশখালিতে ২টি গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সেখানে কোনও অনুমতি ছাড়া জনজাতিভুক্ত মানুষের জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। সঙ্গে মহিলারা তাঁদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন। মানুষ আদালতের ভরসায় রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে যায়। তাই এই এব্যাপারে হস্তক্ষেপের সঠিক সময়।’

এব্যাপারে আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়কে অভিযোগের তথ্যানুসন্ধানের জন্য আদালত বান্ধব নিয়োগ করেছে আদালত। সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আদালতে রিপোর্ট পেশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে তা জানিয়ে ওই দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে হবে রাজ্যকে। ২০ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।

এই মামলার শুনানিতে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সরদার গ্রামবাসীদের দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে সংগঠিত করছেন। তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ৪ দিন আটকে রেখেছে। গ্রামবাসীরা বলছেন, পুলিশের ওপর তাঁদের কোনও ভরসা নেই। পুলিশই তাঁদের ওপর অত্যাচার করেছে। অথচ কোনও পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে এখনও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। তখন বিচারপতি বলেন, অভিযুক্ত পুলিশকর্মীরা কী করে তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত নিজেরা করতে পারেন?

এদিকে সন্দেশখালির প্রাক্তন বাম বিধায়ক নিরাপদ সর্দারকে গ্রেপ্তার ও সন্দেশখালিতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনে রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভ শুরু করেছে বামফ্রন্ট। সেই বিক্ষোভ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজ্যের একাধিক জায়গায় ধুন্ধুমার। বিক্ষোভকে ঘিরে বিক্ষিপ্ত অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে। বসিরহাট থেকে বহরমপুর, বামেদের আন্দোলনে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে একাধিক রাজ্যের এলাকা। ব্যারিকেড অতিক্রম করায় লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ।

প্রচারের আলোয় আসতে আজ আন্দোলনে রয়েছে বিজেপিও। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুদার সদলবলে বিজেপির এসপি অফিস অভিযান ঘিরে ধুন্ধুমার বাঁধল বসিরহাটে। এদিন দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা ভেঙে এসপি অফিসের দিকে এগোতেই বিজেপি কর্মীদের ওপর লাঠি চালানো শুরু করে পুলিশ। পুলিশের লাঠিতে বেশ কয়েকজন বিজেপি কর্মী অহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন সুকান্তবাবু। এর পর গ্রেফতার বিজেপি কর্মীদের মুক্তির দাবিতে SP অফিসের সামনে অবস্থানে বসেন তিনি।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বসিরহাট এসপি অফিস অভিযানে নামে বিজেপি। তাদের রুখতে আগে থেকেই এসপি অফিস থেকে ৫০০ মিটার দূর পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। সুকান্ত বাবু এদিন সড়ক পথে না গিয়ে লোকাল ট্রেনে করে বসিরহাটে পৌঁছন। বারাসতের হৃদয়পুর স্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠেন দলের রাজ্য সভাপতি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন জনা ত্রিশেক বিজেপি নেতা-কর্মী। বসিরহাট স্টেশনে নেমে বাইক মিছিল করে এসপি অফিসের কাছে পৌঁছন তাঁরা। সেখান থেকে শুরু হয় কর্মসূচি। একের পর এক ব্যারিকেড ভেঙে এগোতে থাকেন বিজেপি-র নেতা, কর্মীরা। অবশেষে বাধ্য হয়ে তাঁদের ওপর লাঠি চালায় পুলিশ।