• facebook
  • twitter
Thursday, 16 January, 2025

বড় দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব স্বাভাবিক : অভিষেক

স্যালাইনকাণ্ডে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল ছবি।

তৃণমূলে গোষ্ঠীকোন্দল আছে, মেনে নিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সাফ যুক্তি, দল বড় হলে কোন্দল স্বাভাবিক। ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘দলের ঊর্ধ্বে কেউ নন। একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব স্বাভাবিক। যে দলে লক্ষাধিক কর্মী এবং ৫০ হাজারের বেশি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি রয়েছেন, সেই বৃহৎ পরিবারে দুই-চারজনের মধ্যে মনোমালিন্য থাকাও স্বাভাবিক এবং এটাই সংসারের রীতি। তবে এর মধ্যে যদি কেউ দলকে দুর্বল করতে চান অথবা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকেন তাহলে দলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি সংশ্লিষ্ট নেতার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবে।’

এই প্রসঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের বিনয়ী এবং নম্র হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অভিষেক। দলের মধ্যে কেউ নিজেকে কেউকেটা মনে করলে তাঁকে ছেড়ে কথা বলা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘তৃণমূল কংগ্রেস মানুষের দল, মানুষের কাজ করতে গিয়ে কেউ নিজেকে কেউকেটা ভাবলে তাঁদের জন্য আগামীদিনে তৃণমূলের দরজা বন্ধ থাকবে। যাঁরা ভাবছেন, এলাকা দখল করে মৌরসি পাট্টার মতো দল চালাবো, তাঁদের কিন্তু কপালে বিপদ আছে। এই একই ভুল সিপিএম করেছে, বিভিন্ন জেলায় বিজেপি করেছে! আমাদের সঙ্গে বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেসের মৌলিক পার্থক্য রয়েছে।’ সেই সঙ্গে অভিষেক মনে করিয়ে দিয়েছেন উন্নাও, লখিমপুরে ‘বিজেপির অত্যাচার’ এবং বাংলার নন্দীগ্রাম থেকে গড়বেতায় ‘সিপিএমের গণহত্যার’ ইতিহাস।

বুধবার ফলতার ‘সেবাশ্রয়’ শিবিরে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন অভিষেক। সেখানে মালদহ-কান্ড থেকে শুরু করে স্যালাইন-কান্ড নিয়ে মুখ খোলেন তিনি। মালদহের তৃণমূল নেতা দুলাল সরকার খুনের ঘটনায় মূল চক্রী হিসেবে অভিযুক্ত শহর সভাপতি নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারিকে অনতিবিলম্বে বহিষ্কার করেছে তৃণমূল। মঙ্গলবার সেই মালদহেরই কালিয়াচকে ফের রাজনৈতিক গন্ডগোলের জেরে খুন হয়েছেন এক তৃণমূলকর্মী। পর পর এমন ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা এবং শাসকদলের কোন্দল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এবিষয়ে অভিষেকের দাবি, সরকার এবং প্রশাসন যে যার মতো ব্যবস্থা নিচ্ছে। দুলাল-খুন প্রসঙ্গে তাঁর যুক্তি, ‘বিরোধী রাজনৈতিক দলের কাউকে ফাঁসাতে হবে, এই সব ভেবে বাংলায় তদন্ত হয় না। তদন্ত তদন্তের মতো করে হয়। সেখানে যে কারও যোগসাজশ থাকুক না কেন তা সামনে আসে। মালদহের ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছেন তৃণমূলেরই এক নেতা। পুলিশকে নিয়ে যা বলার মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন। যা নির্দেশ দেওয়ার তিনি দিয়েছেন।’

এদিন বিজেপি ও সিপিএমের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি স্যালাইন-কান্ড নিয়েও এদিন তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর দাবি, রাজ্যের এক আধটা বিক্ষিপ্ত ঘটনাকে সামনে রেখে গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে কাঠগড়ায় তোলা উচিত নয়। তিনি বলেন, ‘দুঃখজনক ঘটনা! ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। দলমত নির্বিশেষে আমরা আগেও পদক্ষেপ করেছি, কোনও গাফিলতি প্রমাণিত হলে এবারও করব। এই ঘটনায় এমন ব্যবস্থা নেওয়া উচিত যেন তা দৃষ্টান্ত হিসেবে সমাজে থেকে যায়। রাজ্য পুলিশ নিজের দায়িত্ব পালনে তৎপর। বাংলায় বিজেপির নয়, আমজনতার ওয়াশিং মেশিন চলে। ৩৪ বছরের বাম শাসনে কোনও বাম নেতা গ্রেপ্তার হননি কিংবা বিজেপি শাসিত রাজ্যেও বিজেপি নেতারা গ্রেপ্তার হন না। অপরাধীর কোনও রাজনৈতিক রং হয় না।’

অন্যদিকে, আরজি কর নিয়ে শিল্পীদের একাংশকে বয়কট প্রসঙ্গে নিজের পুরনো অবস্থানেই অনড় রইলেন অভিষেক। তাঁর উপলব্ধি, ‘আমি যত দূর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিনি, তিনি বয়কটের রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন না। যদি করতেন, তা হলে এক সময়ে যাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেছেন, তাঁরা দলে ফিরতে পারতেন না। পাশাপাশি প্রাক্তন সাংসদ তথা চিকিৎসক শান্তনু সেনকে দল থেকে সাসপেন্ড করার প্রসঙ্গে দলের সিদ্ধান্তকে মান্যতা দিলেও ‘চিকিৎসক’ শান্তনুর পাশে দাঁড়ানোর প্রবণতা ফের লক্ষ্যনীয় অভিষেকের বক্তব্যে। শান্তনু এবং আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে দলীয় স্তরে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ প্রসঙ্গে অভিষেকের বক্তব্য, ‘দলনেত্রীর সিদ্ধান্ত শিরোধার্য। এর আগেও আরাবুলকে সাসপেন্ড করেছিল দল। আরাবুল, শম্ভুনাথকে গ্রেপ্তার করেছিল তৃণমূল সরকারের পুলিশই।’ কিন্তু সাসপেন্ড হওয়া শান্তনু কি সেবাশ্রয়ে ‘মেঘনাদের’ ভূমিকা নিচ্ছেন? অভিষেকের জবাব, ‘শান্তনু সেন একজন চিকিৎসক। তিনি কোন ক্যাম্পে থাকবেন, পাড়ায় ক’টা রোগী দেখবেন, সেটা তাঁর বিষয়। ব্যক্তিগতভাবে তো তিনি আরও পাঁচটা কাজে যুক্ত থাকতেই পারেন।’ দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে কেজরিওয়ালের ‘আপ’-এর পাশে দাঁড়ানোর অর্থ কি ইন্ডিয়া জোটে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের দূরত্ব তৈরি? এই প্রশ্নের জবাবে অভিষেকের দাবি, বিজেপিকে পরাস্ত করাই একমাত্র লক্ষ্য। কোনও রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে সর্বশক্তি প্রয়োগ যে নির্দিষ্ট দল লড়ছে তাকে তৃণমূল দুর্বল করবে না।

রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর সঙ্গে সেবাশ্রয়ের তুলনা করা ঠিক নয় বলে মনে করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বাস্থ্য পরিষেবায় রাজ্য সরকার যথেষ্ট অবদান রেখেছে বলে দাবি তাঁর। অপরদিকে তিনি নিজের মতো করে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করার চেষ্টা করছেন।