মহামারীর অজুহাতে সরকারি কাজ ফেলে রাখা যাবে না: মমতা

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (File Photo: IANS)

করোনা আবহে সরকারি কাজে কিছুটা ঢিলেমি এসেছিল। উন্নয়নের কাজই হোক কিংবা আম্ফানের ক্ষতিপুরণ। করার জন্য সময় বেঁধে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন মহামারীর অজুহাত দিয়ে কোনও কাজ ফেলা রাখা যাবে না। মঙ্গলবার দুই বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া-এই পাঁচ রাজ্যকে নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠকে করোনা আবহে কাজের গাফিলতির জন্য প্রশাসনিক কর্তা এবং ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকদের রীতিমতো সতর্ক করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এদিন প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে জানতে চান। কোন দফতরের কাজ কতদূর এগিয়েছে। দেখা যায় কোনও দফতরের কাজই পুরোপুরি শেষ হয়নি। এরপর সমস্ত দফতরের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকদের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, করোনার মধ্যে কাজ করা যায়নি ঠিকমতো। এতে বিরক্ত হন মুখ্যমন্ত্রী। কড়া বার্তা দিয়ে বলেন, মহামারীর অজুহাতে আর কাজ ফেলে রাখা যাবে না। বিশেষ করে জনকল্যাণমূলক কাজ পুজোর মধ্যে শেষ করতে হবে। তা না হলে জনগণ অসুবিধের মধ্যে পড়বে।

এদিন তথ্য হাতে নিয়ে প্রতিটি জেলার কাজের পর্যালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক বিজয় ভারতীর উদ্দেশে সরাসরি প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেন, কোনও কাজই হচ্ছে না নাকি? তার ভৎসনার মুখে পড়েন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী শামি মাহাতো। মমতার প্রশ্নের মুখে পড়েন বীরভূম এবং পুরুলিয়া জেলার জেলাশাসকরাও। যদিও তাদের কাজের ওপর শেষ পর্যন্ত আস্থা প্রকাশ করেন মমতা।


কাজ শেষ করার টার্গেট বেঁধে দিয়ে মঙ্গলবার মমতা বলেন, যেসব দফতর থেকে কাজের জন্য বরাদ্দ অর্থ মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেসব কাজ যেন পুজোর মধ্যেই শেষ করে ফেলা হয়। একশ দিনের কাজ, রাস্তাঘাট নির্মাণ, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, যুবশ্রী ইত্যাদি প্রকল্পের টাকা যে মিটিয়ে দেওয়া হয়। কলেজের সেশন শুরু হওয়ার আগেই যেন কন্যাশ্রীর কে-টু প্রকল্পের টাকা তাদের হাতে পৌছে দেওয়া হয়, সেজন্য জেলা প্রশাসনকে তৎপর হতে বলেন মমতা।

মঙ্গলবার মমতা উদ্বেগ প্রকাশ করেন পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে। জিজ্ঞেস করেন এই দুই জেলায় কেন এত বেশি করোনা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পড়শি রাজ্য থেকে কেউ এই রাজ্যে চিকিৎসা করাতে এলে মানবিকতার খাতিরে তাকে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হবে। কিন্তু তাদের কারও করোনা হলে তা পশ্চিমবঙ্গের করোনা কেস হিসেবে ধরা হবে না। মঙ্গলবার ভার্চুয়াল বৈঠক থেকে একথা স্পষ্ট জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী।

পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষে পুলিশ থানার ওসি সহ ১৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিল। মমতা এদিন নির্দেশ দেন, পুলিশ বারাক ভাগ করে দেওয়ার জন্য। যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকে। পশ্চিম বর্ধমানের করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে শিল্প কারখানার যোগ আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

আম্ফানের ত্রাণের জন্য তালিকা তৈরির কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। মঙ্গলবারের প্রশাসনিক বৈঠকে উপস্থিত মুখ্যসচিব এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, কোনও কোনও জেলায় তালিকা তৈরির কাজ এখনও বাকি রয়েছে। এই তথ্য শুনে ক্ষুব্ধ মমতা বলেন আগামী তিন থেকে চারদিনের মধ্যে, খুব বড়জোর সাতদিনের মধ্যে আম্ফান ত্রাণের তালিকা সম্পূর্ণ করতে হবে। তার বেশি সময় এই কাজ ঝুলিয়ে রাখা যাবে না।

মঙ্গলবারের প্রশাসনিক বৈঠক থেকেই আগামী ১৯ আগস্ট শনিবার করম পুজোর দিন জঙ্গলমহলে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করলেন মমতা। এর আগে নবান্নে ওই দিনটিকে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য সেকশনাল হলিডে নির্দিষ্ট করা হয়েছি। কিন্তু এই করম পরবের সঙ্গে আদিবাসী, কুরমি সম্প্রদায়ের মানুষের সেন্টিমেন্ট জড়িয়ে থাকার জন্য মমতা বলেন, জঙ্গলমহলে এই পরবে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন ছাড়াও অনেকেই অংশ নেন।

করম পুজো এখন সর্বজনীন হয়ে গিয়েছে। যারা চাষের কাজের সঙ্গে যুক্ত, ভালো ফসল হওয়ার। প্রার্থনায় তারা সকলেই এই পুজোয় অংশ নেন। তাই জঙ্গলমহলবাসী সকলের জন্যই এই কম পরবের দিনটিকে ছুটি হিসেবে ধার্য করা হচ্ছে। করোনার ফ্রন্টলাইনার হিসেবে যারা কাজ করছেন, তাদের চিকিৎসাবীমার মেয়াদ নভেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করার কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। করোনা সংক্রমণের বর্তমান অবস্থার কথা চিন্তা করেই এই সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারের।