বাংলার স্কুলগুলির শিক্ষক ও অ-শিক্ষক কর্মী, যাঁরা ‘ন্যায্য উপায়ে’ চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের চাকরিতে ফের বহাল করতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে চিঠি লিখে অনুরোধ জানিয়েছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী । রাহুল গান্ধী লেখেন, কিছু অযোগ্য প্রার্থীর জন্য যাঁরা ন্যায্য পথে ছিলেন তাঁদের চাকরি যাওয়া সঠিক বিচার নয়। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু নিজে একজন প্রাক্তন শিক্ষক। চিঠিতে রাহুল লেখেন, ‘আপনি নিজে একজন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। আমি নিশ্চিত যে শিক্ষক এবং তাঁদের পরিবার ও ছাত্রছাত্রীদের প্রতি এই অবিচারের বিশাল মানবিক মূল্য বুঝতে পেরেছেন। আমি আপনাকে অনুরোধ করছি যে দয়া করে তাঁদের অনুরোধের বিষয়টি বিবেচনা করুন এবং সরকারকে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য অনুরোধ করুন, যাতে যোগ্য নির্বাচিত প্রার্থীদের চাকরিতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।’
রাহুল বলেন,’কলঙ্কিত’ শিক্ষকদের সঙ্গে ‘ অকলঙ্কিত” শিক্ষকদের সম আচরণ করা অন্যায় হবে। রাহুল গান্ধী দেড় পাতার চিঠিতে রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপের দাবি করে জানান, ন্যায্য উপায়ে নির্বাচিত প্রার্থীদের চাকরি বহাল রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে।
সুপ্রিম কোর্ট ২৫ হাজার ৭৫৩ জন শিক্ষক ও অ-শিক্ষক কর্মীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে দেয়। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার বেঞ্চ এই মামলার রায়ে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে, যোগ্য-অযোগ্য বাছাই করা সম্ভব না হওয়ায় পুরো প্যানেলই বাতিল করা হল। ফের পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে ওই প্যানেলে থাকা চাকরিপ্রার্থীদের। সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের পরই শোরগোল পড়ে যায়। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন কয়েকজন অযোগ্যের জন্য কেন যোগ্যরা শাস্তি পাবেন ? কেন আবার তাঁদের পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে ?
চাকরিহারাদের পাশে রয়েছে রাজ্য সরকারও। তাঁদের একাংশের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, যোগ্য যাঁরা চাকরি হারিয়েছেন তাঁদের পাশে তিনি থাকবেন।
বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার অন্যতম শরিক কংগ্রেস। রাষ্ট্রপতিকে লেখা চিঠিতে রাহুল লিখেছেন, যদি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনও অন্যায় তবে তা নিন্দনীয় এবং অবশ্যই বিচারের আওতায় আসা উচিত। কিন্তু যাঁরা সততার সঙ্গে চাকরিতে নিযুক্ত হওয়ার যোগ্যতা প্রমাণ করেছিলেন তাঁদের ক্ষেত্রে এটি অবিচার।
টুইটারে রাহুল লেখেন, ‘আমি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে চিঠি লিখে পশ্চিমবঙ্গের হাজার হাজার যোগ্য স্কুল শিক্ষকের বিষয়ে তাঁর সহৃদয় হস্তক্ষেপ চেয়েছি, যাঁরা বিচার বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করার পরে চাকরি হারিয়েছেন। কলকাতা হাইকোর্ট শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়ম খুঁজে পেয়ে পুরো প্রক্রিয়াটিকে বাতিল ঘোষণা করে। ৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে। রায়ের পর থেকে বরখাস্ত হওয়া শিক্ষক ও কর্মচারীরা কোনও প্রতিকারের আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন।’
রাহুল চিঠিতে উল্লেখ করেন, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একট প্রতিনিধিদল তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন।তাঁদের অনুরোধেই তি্নি চিঠি লিখছেন। রাহল আরও উল্লেখ করেন, এক সঙ্গে এতজন শিক্ষকের চাকরি বাতিলের ফলে সমস্যায় পড়েছে লক্ষ লক্ষ পড়ুয়া। শিক্ষকের অভাবে তারা ক্লাস করতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে বিষয়টিতে সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, শনিবার রাহুলের তুঘলক রোডের বাসভবনে হাঞ্জলা শেখ, সঙ্গীতা সাহা, মহম্মদ গোলাম গৌস মণ্ডল, তন্ময় ঘোষ এবং ফিরোজ মণ্ডল তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং বিষয়টি সংসদে উত্থাপন করার এবং রাষ্ট্রপতি মুর্মুর সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন।শুক্রবার অধিবেশন শেষ হওয়ায় রাহুল বিষয়টি উত্থাপন করতে না পারলেও রাষ্ট্রপতি ভবনের হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে য়োগ্যদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন।