মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থাতেই ভেঙে পড়া বহুতল দেখতে গার্ডেনরিচে মমতা

দিলেন ক্ষতিপূরণ ও পাশে থাকার আশ্বাসও

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা: গার্ডেনরিচে ভেঙে পড়া বহুতল দেখতে মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর সোশ্যাল মিডিয়ায় শোকপ্রকাশ করে হতাহতদের পাশে থাকা এবং ক্ষতিপূরণের আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। তাঁর কথামতো মৃতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা এবং আহতদের ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণাও করেছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম।

সোমবার সাত সকালে মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থাতেই তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এদিন সেখানে পৌঁছে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং সুজিত বসুর সঙ্গে কথাও বলেন তিনি। তারপর সেখান থেকে ফিরে এই ঘটনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় শোকপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী।


সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, ‘কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের গার্ডেনরিচ এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবন ধসে পড়ার বিপর্যয়ের কথা জেনে আমি মর্মাহত। আমাদের মেয়র, দমকল মন্ত্রী, সচিব এবং পুলিশ কমিশনার, পুলিশের এবং দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা দুর্ঘটনাস্থলে থেকে সবকিছুর তদারকি করছেন। বিপর্যয় মোকাবিলা করার জন্য সারা রাত সেখানে ছিলেন তাঁরা। আমরা নিহতদের নিকটাত্মীয় এবং আহত ব্যক্তিদের জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদান করব। আমরা দুস্থ পরিবারের পাশে আছি এবং উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

রবিবার রাতে গার্ডেনরিচে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। ঘটনায় আরও প্রায় ১৫ জনের মতো আহত হয়েছেন। জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় হতাহত হয়েছেন ভেঙে পড়া বহুতলের পাশের বস্তির লোকজনই। বহুতলটি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ায়, পাশের টালির বাড়িতে বসবাসকারী অনেকেই চাপা পড়ে যান।  জানা গিয়েছে, অনেক প্রচেষ্টার পরে রাতেই চাপা পড়া ১০ জনকে উদ্ধার করেছে উদ্ধারকারী দল।

এদিকে স্থানীয়দেরও অভিযোগ ছিল, এই ঘিঞ্জি এলাকায় পুরসভার আইন অমান্য করে পাঁচতলা বহুতল তোলা হয়েছিল। এমনকী, বহুতলের সামনের রাস্তাটি তিন ফুটের বেশি চওড়া নয়। সেক্ষেত্রে পুরসভা থেকে এত সংকীর্ণ রাস্তার সামনে পাঁচতলা নির্মাণ তোলার অনুমতি পাওয়া যায় না। ওদিকে ফিরহাদ নিজে রাতভর দুর্ঘটনাস্থলে ছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুও।

ফিরহাদের স্পষ্ট বক্তব্য, ‘এই বিল্ডিংটি কোনও ভাবেই বৈধ হতে পারে না।’ মেয়রের কথায়, ‘এই বাড়ি তৈরির অনুমতি থাকতে পারে না। যাঁরা এই বাড়ি তৈরি করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। পাশের টালির বাড়িতে থাকা লোকেরা এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। এক জনের পাপের শাস্তি, অন্য জনে পাচ্ছে। এই সরু গলিতে এত বড় বাড়ি হয় না।’ এরপর বহুতলের প্রোমোটারকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন তিনি। পাশাপাশি ক্ষতিপূরণের ঘোষণাও করেছেন ফিরহাদ।

প্রসঙ্গত, যেখানে বিল্ডিংটি ধসে পড়েছে, সেটি কলকাতা পুরসভার অন্তর্গত ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে। এটি কলকাতা বন্দর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। যা কি না খোদ কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের নির্বাচনী কেন্দ্র। ২০১১ সাল থেকে এখান থেকেই টানা জিতে তিনি বিধায়ক হয়েছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই বহুতলের পাশাপাশি বিগত বছরগুলিতে এই এলাকায় অবৈধ ভাবে আরও অনের বহুতল নির্মাণ করা হয়েছে।