সোমবার দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় ৩ বছর পর জামিন পেলেন নদিয়া জেলার চারজন অভিযুক্ত। গত ২০২১ সালে এই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের পর হিংসার অভিযোগে এদের গ্রেপ্তার করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। সেই মামলায় অবশেষে জামিন পেলেন কৃষ্ণনগরের কোতোয়ালি থানার বাসিন্দা আপ্পু মুখোপাধ্যায় ওরফে বাবুসোনা, আজহার শেখ, রাজেন্দ্র শর্মা, সুরেশ পারসি ওরফে লালা।শুধু তাই নয়, এই মামলায় তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের তোপের মুখে পড়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই।একুশের বিধানসভা ভোটে বড়সড় ব্যবধানে জয়ী হয় তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল তৃতীয়বার রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভোট পরবর্তী হিংসার একাধিক অভিযোগ ওঠে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অত্যাচারের অভিযোগ তুলে সরব হয় বিরোধীরা। মূলত এই রাজ্যের বিরোধী দলনবিজেপি। কলকাতা হাইকোর্টে একের পর এক মামলা দায়ের হয়। পরবর্তীতে কলকাতা হাইকোর্ট খুন, ধর্ষণের মতো ঘটনার তদন্তভার দেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইকে। দীর্ঘদিন ধরে চলছে সেই মামলা।
এদিন এই মামলার এই মামলায় চার অভিযুক্তকে জামিন দেওয়ার সময় সিবিআইকে তিরস্কার করে থাকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অভয় এস ওকা এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়ার বেঞ্চ। চার অভিযুক্তের আইনজীবী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন , -‘ তিন বছরের বেশি সময় হয়ে গিয়েছে অথচ ৭৩ জনের মধ্যে মাত্র ৬ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।’ এই ইস্যুতে সিবিআইকে ভর্ৎসনা করে আদালত। প্রশ্ন তোলা হয়, কবেই বা তদন্ত শেষ হবে?কবেই বা শুনানি শেষ হবে? এর পরই শর্ত সাপেক্ষে ৪ অভিযুক্তকে জামিন দেয় সুপ্রিম কোর্ট। প্রসঙ্গত এর আগে এই ভোট পরবর্তী হিংসা মামলা নিয়ে রিপোর্ট পেশ করেছিল মানবাধিকার কমিশন। তবে রাজ্যসরকার সেই রিপোর্টের তীব্র বিরোধিতা করে দাবি করে মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট পক্ষপাতদুষ্ট। পাশাপাশি ভোট পরবর্তী হিংসা মামলা অন্যরাজ্যে সরানোর আর্জি নিয়ে শীর্ষ আদালতে গিয়েছিল সিবিআই। তাঁদের অভিযোগ , ২০২১ সালের ভোট পরবর্তী হিংসার ৪০ টি মামলার ক্ষেত্রে একাধিক সমস্যা হচ্ছে। সাক্ষী ও আইনজীবীদের হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে। আক্রান্ত হতে হচ্ছে। এই অভিযোগকে সামনে রেখেই ৪০ টি মামলা অন্য রাজ্যে সরানোর আর্জি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টেরও দ্বারস্থ হয়েছিল সিবিআই। শর্তসাপেক্ষে জামিন প্রাপ্তদের কৃষ্ণনগরে ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। দীর্ঘ তিন বছর জেলবন্দি থাকার পর জামিন পেলেন তাঁরা। যদিও, জামিনের বিরোধিতা করে সিবিআই।
নির্বাচন পরবর্তী মামলায় সিবিআই এর তরফে অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজু জানান , -‘এরা প্রত্যেকেই খুনের আসামী। এ ধরনের আসামীদের জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিত’। এরপর সিবিআই জানায় , ‘অভিযুক্তরা অস্ত্র ব্যবহার করেছে’। তবে দীর্ঘ তিন বছর কেটে যাওয়ার পরও বিচার প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ায় এবং তিন বছর ধরে অভিযুক্তরা জেলে থাকার কারণেই জামিন মঞ্জুর করে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, “তিন বছর ধরে অভিযুক্তরা জেলে আছে। ৭৩ জন প্রত্যক্ষদর্শীর মধ্যে এতদিনে মাত্র ৬ জনের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে”। এই পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতেই জামিন মঞ্জুর করেছেন বিচারপতি অভয় এস ওকা এবং অগাস্টিন জর্জ মসিহ। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, জামিনের শর্তাবলী কী হবে? তা ট্রায়াল কোর্ট ঠিক করবে’।