অভীক ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে বর্ধমান মেডিক্যালে তদন্ত কমিটি গঠন

পরীক্ষায় নম্বর বাড়িয়ে কারচুপি করা থেকে শুরু করে নানা দুর্নীতির অভিযোগে কয়েক জন ইন্টার্ন এর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হলো বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে। আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের অভিযোগের ভিত্তিতে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ জারি করলেন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায়। যাঁদের বিরুদ্ধে এই সব অভিযোগ, তাঁরা প্রত্যেকেই অভীক দে এর ঘনিষ্ঠ বলে সরাসরি দাবি করা হয়েছে। নানা দুর্নীতির অভিযোগে অভীক দে খবরের শিরোনামে। তাঁর ঘনিষ্ঠ দের বিরুদ্ধে জুনিয়ার ডাক্তার ও স্নাতকোত্তর পড়ুয়ারা লিখিত অভিযোগ জানানোর পর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ ৯ জনের কমিটি গঠন করেছে। খুব শীঘ্রই তাদের তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবার নির্দেশ দেওয়া হয়। আর একদিকে যেমন আরজি করের বিষয়ে আন্দোলন চলছে তারই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই আন্দোলনও জারি আছে বর্ধমানে। আরজি করের ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবিতে শুরু থেকেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়ার ডাক্তাররা। তারপর বর্ধমান মেডিক্যাল এর আরএমও অভীক দে এর‌‌‌ নাম নানা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে প্রকাশ্যে চলে আসে।

এছাড়াও প্যাথলজি বিভাগের সিনিয়র রেসিডেন্স বিরূপাক্ষ বিশ্বাস এর নামেও একাধিক অভিযোগ ওঠে। প্রভাব খাটিয়ে দিনের পর দিন দুর্নীতি চালানোর অভিযোগে রাজ্যের স্বাস্থ্য ভবনে রিপোর্ট যায়। তাঁদের দু’জনকে স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশে সাসপেন্ড করা হয়। এখানেই শেষ নয়, ওই দু’জনকে আপাতত বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে ঢোকার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর পরেই জুনিয়র ডাক্তাররা একাধিক মারাত্মক অভিযোগ এনেছেন। তার মধ্যে অন্যতম পরীক্ষার নম্বরে কারচুপি করা নিয়ে। অভিযোগ দুর্নীতিতে জড়িত অভীক দে এর‌‌‌ ঘনিষ্ঠ পাঁচজন গ্র্যান্ড অর্নাস নিয়ে এমবিবিএস হয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, ওই পাঁচজন ইন্টার্ন কোনও ভাবেই অনার্স সহ পাশ করতে পারতেন না, যদি তাঁদের পেছনে হয়ে অভীকের হাত থাকতো। সব ধরনের প্রভাব খাটিয়ে অভীক তাঁদের নম্বর বাড়াতে সাহায্য করে দেয়। অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে সঠিক সত্য সামনে আনার জন্য আন্দোলন শুরু হয়েছে।

আন্দোলনকারীরা দাবি করেছেন, অবিলম্বে কোনও বাইরের সংস্থাকে দিয়ে ফের খাতা পরীক্ষা করা হোক। এই ঘটনায় অভীক ঘনিষ্ঠ পাঁচজন ছাড়াও আরও কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগে তদন্ত দাবির পর রীতিমতো নড়েচড়ে বসেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের আধিকারিকরা।


অধ্যক্ষ মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কাউন্সিলে অভিযোগ জমা হবার পর তদন্ত শুরু করার ক্ষেত্রে কোনও বিলম্ব হয় নি। তিন সপ্তাহ পরই কমিটির পক্ষ থেকে রিপোর্ট জমা পড়বে। কমিটির চেয়ারম্যান ডাঃ সৌমিক দত্ত। এছাড়াও বিভিন্ন বিভাগের সিনিয়র ডাক্তারবাবুরা কমিটির মধ্যে আছেন। তোলাবাজি, পরীক্ষায় কারচুপি, পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেবার হুঁশিয়ারি, জুনিয়র ডাক্তারদের শাসানি সহ অন্যান্য দুর্নীতির তদন্ত চলছে বলে মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গেছে। মোট ৯ জনের বিরুদ্ধেই তদন্ত চলছে বলে জানা গেছে। এই ৯ জনের মধ্যে দুজন সিনিয়র রেসিডেন্স, দুজন পিজিটি, দু জন ইন্টার্ন ও আছে। তবে শুধুমাত্র বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে অভিযোগ জমা দিয়ে থেমে থাকেননি জুনিয়র ডাক্তাররা। বর্ধমান থানায় ৭ জনের নামে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন তাঁরা। বর্ধমান থানা সূত্রে জানা গেছে অভিযোগ পাবার পরই পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। সব নিয়ে এখন টানটান উত্তেজনা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে।