কাটমানি ইস্যুতে আলিপুরদুয়ারের প্রশাসনিক সভা থেকে ফের হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি প্রকল্পের জন্য যাঁরা টাকা চাইবে তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর হবে বলে জানিয়ে দেন তিনি। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি কাজে প্রশাসনের আধিকারিকদের দায়সারা ভাব নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মমতা। ডিএম থেকে সাংসদ সকলকে সক্রিয় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে মন না দিয়ে কাজে মন দিতে বলেছেন। এছাড়াও মানুষের সমস্যার সমাধান না হলে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মমতা। প্রশাসনের সকল আধিকারিকের কাজের উপর তাঁর নজর রয়েছে বলে এদিন জানিয়ে দেন।
দক্ষিণবঙ্গের মতো উত্তরবঙ্গকেও গুরুত্ব দিতে এবার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন উপলক্ষ্যে মূল অনুষ্ঠানটি ডুয়ার্সে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। আজ দুপুর ১২টা নাগাদ এই অনুষ্ঠানের সূচনা হবে। উপস্থিত থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, ডুয়ার্সে এর আগে কখনও নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের জন্মদিনের মূল অনুষ্ঠানটি পালন করা হয়নি। ডুয়ার্সের পাশাপাশি রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে এই দিনটি পালনের নির্দেশ দেন মমতা।
‘পাচারকারীদের গুলি করে মারা হবে’— এমন একটি পোস্টার দেখে আলিপুরদুয়ারের প্রশাসনিক সভা থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলার কোনও একটি জায়গায় এই পোস্টার দেখে নিজের মোবাইলে ছবি তুলে রেখেছিলেন তিনি। সেই ছবিই সভায় সকলকে দেখান মমতা। তাঁর প্রশ্ন, এটা কী ধরনের ভাষা? অবিলম্বে এই সব পোস্টার সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পরিবর্তে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে পোস্টার লাগানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও বন দপ্তরের তরফে জানানো হয়, পাচারকারীদের গুলি করে মারার নিদান সংক্রান্ত পোস্টারটি বায়ুসেনার তরফে লাগানো হয়েছে। সেক্ষেত্রেও জেলাশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে এই ধরনের পোস্টার লাগানো উচিত ছিল বলে মনে করে মমতা। উত্তরবঙ্গের জঙ্গল এলাকায় বন দপ্তরের একাধিক বাড়াবাড়ি পদক্ষেপের জন্য এলাকার মনাুষ ক্ষুব্ধ বলে জানান তিনি। অনেক সময় জঙ্গলের ভিতর দিয়ে অনেক সাধারণ মানুষ চলাফেরা করে। তাঁদের উপরও পাচারকারী সন্দেহে অত্যাচার হয় বলে দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ বিষয়ে স্থানীয় বন কর্তাদের সতর্ক করে দেন তিনি।
এদিনের সভায় আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল অভিযোগ করেছেন, রাজাভাতখাওয়ায় বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছ থেকে মোটা টাকা এন্ট্রি ফি নেওয়া হয়। সব মিলিয়ে মোট ২৫০০ টাকা দিতে হয় পর্যটকদের। এই প্রসঙ্গে এদিনের সভা থেকে বন দপ্তরকে ভর্ৎসনা করেন মমতা। সরকারের পরামর্শ নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, পর্যটকদের কোনও ফি দিতে হবে না। ক্যাবিনেট মিটিং ডেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
পাহাড় ও জঙ্গল এলাকায় কীভাবে বড় বড় বাড়ি তৈরি হচ্ছে তা নিয়েও এদিন প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। কীভাবে বাড়িগুলি স্থানীয় প্রশাসনের ছাড়পত্র পাচ্ছে তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। বক্সায় হোমস্টে, রিসর্ট, হোটেল নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা। এ বিষয়ে মমতার দাবি, কে নিজের বাড়িতে হোমস্টে করবে সেটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। এখানে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনালের কোনও আপত্তি থাকতে পারে না।
ভিন্ন রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বাঘ ঢুকে পড়ায় এদিনও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মমতা। ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা রাজ্যের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করে বাঘ কেন এ রাজ্যে ঢুকছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। মমতার দাবি, অন্য রাজ্য তাঁদের বাঘকে খেতে দেয় না। তাই তাঁরা সীমান্ত টপকে এ রাজ্যে চলে আসে। বাঘের কারণে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন গ্রামে আতঙ্ক ছড়ায়। বাঘ ধরা পড়লেই ফেরত পাঠানোর জন্য ফোন অন্য রাজ্য থেকে ফোন আসতে থাকে। এবার থেকে পশ্চিমবঙ্গে অন্য কোনও রাজ্যের বাঘ ঢুকলে তাকে ধরার জন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্য থেকে লোক পাঠাতে বলেছেন মমতা। পাশাপাশি এদিন হাতির সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়েও কেন্দ্রকে তোপ দেগেছেন তিনি।
বাংলার বাড়ি প্রকল্পে ২৮ লক্ষ উপভোক্তাদের মধ্যে ১২ লক্ষ উপভোক্তার বাড়ির প্রথম কিস্তির টাকা অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই সকল উপভোক্তাকে জুন মাসের আগে বাড়ি তৈরির কাজ এগিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে তদারকিরও নির্দেশ দিয়েছে সরকারি আধিকারিকদের। জুন মাসে উপভোক্তারা দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পেয়ে যাবেন বলে জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। মানুষ সমস্ত সরকারি প্রকল্পের পরিষেবা ঠিকমতো পাচ্ছেন কি না তা খতিয়ে দেখতে জেলাশাসক, বিডিও, সিএমওএইচ, সাংসদ, বিধায়কদের নির্দেশ দেন মমতা। সকলের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখে সমস্যার কথা জেনে নিতে বলেন।
এদিন আলিপুরদুয়ারের একাধিক কাজকর্ম নিয়ে সরকারি আধিকারিকদের থেকে খোঁজখবর নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, জেলায় ৬০টি বাংলা সহায়তা কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৩৩ লক্ষ মানুষ এর মাধ্যমে পরিষেবা পেয়েছে। ২৪ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুয়ারে সরকার শিবির আয়োজিত হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন মমতা। সরকারি জমি দখল করা নিয়েও এদিন মুখ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। জমি দখল হলে গ্রেপ্তার করা হবে বলেও জানান তিনি।