• facebook
  • twitter
Wednesday, 1 January, 2025

অবশেষে বাঁকুড়াতেই খাঁচাবন্দি ওড়িশার জঙ্গল সুন্দরী ‘জিনাত’!

পলাতক ওই বাঘিনী বেশ কয়েক দিন ঝাড়খণ্ডে ঘোরাফেরা করেছে। এরপর চাকুলিয়া রেঞ্জের রাজাবাসার জঙ্গল পেরিয়ে চিয়াবান্ধি এলাকায় প্রবেশ করে। সেখান থেকে ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি থানার অন্তর্গত কাটুচুয়া জঙ্গলে ঢুকে পড়ে সে।

নিজস্ব চিত্র

অবশেষে খাঁচায় বন্দি হল জঙ্গল ছুট বাঘিনী জিনাত। গত সাত দিনের লুকোচুরি শেষে ধরা পড়ল বনদপ্তরের জালে। তার নাগাল পাওয়াটা বন দপ্তরের কাছে একেবারেই সহজ কাজ ছিল না। রীতিমতো সকলকে নাকানি চুবানি খাইয়েছে সে। শেষমেশ ঘুম পাড়ানি গুলিতে কাবু হয় ওড়িশার এই জঙ্গল সুন্দরী। সেখান থেকে পালিয়ে প্রথমে ঝড়গ্রাম ও পুরুলিয়া হয়ে বাঁকুড়ার জঙ্গলে প্রবেশ করে সে। তার এই অযাচিত আগমনে আতঙ্ক শুরু হয়ে যায় ওড়িশার সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলিতে। না জানি কখন লোকালয়ে এসে মানুষের ওপর হামলা চালায়!

বিষয়টি নিয়ে রাজ্যজুড়ে হৈচৈ পড়ে যায়। সারা রাজ্যের মানুষের কৌতূহল বেড়ে যায়। যার জেরে বৈদ্যুতিন সংবাদগুলির ক্যামেরা তাক করে থাকে ওই বাঘিনী জিনতের গতিবিধির দিকে। দর্শকদের আগ্রহ দেখে নিয়মিত তার খবরের আপডেট প্রকাশিত হতে থাকে।

খবরে প্রকাশ, পলাতক ওই বাঘিনী বেশ কয়েক দিন ঝাড়খণ্ডে ঘোরাফেরা করেছে। এরপর চাকুলিয়া রেঞ্জের রাজাবাসার জঙ্গল পেরিয়ে চিয়াবান্ধি এলাকায় প্রবেশ করে। সেখান থেকে ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি থানার অন্তর্গত কাটুচুয়া জঙ্গলে ঢুকে পড়ে সে। সেখান থেকে জিনাত পৌঁছে যায় পুরুলিয়ার জঙ্গলে। শনিবার পুরুলিয়ার জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসে জিনত। সেখান থেকে প্রথমে বাঁকুড়ার রানিবাঁধ থানার গোঁসাইডিহি গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। বিষয়টি নিয়ে প্রতি মুহূর্তে সতর্ক ছিলেন বনকর্মীরা। বাঁকুড়ার জঙ্গলে প্রবেশ করতেই জিনতকে খাঁচাবন্দি করতে শনিবার রাতভর চেষ্টা চালান বনকর্মীরা। কিন্তু ব্যর্থ হন। অবশেষে রবিবার বিকেল ৪টে নাগাদ গোঁসাইডিহিতে ঘুমপাড়ানির গুলি করে কাবু করা হয় তাকে। এরপর আর সময় ব্যয় না করে তাকে খাঁচাবন্দি করেন বনকর্মীরা। তাকে সিমলিপালের জঙ্গলে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

জানা গিয়েছে, শনিবার ভোরের দিকে বাঘিনীর গর্জন শুনে চমকে যান মুকুমণিপুরের জলাধার লাগোয়া বাসিন্দারা। এরপর সবাই সজাগ হয়ে ওঠেন। এলাকায় বাঘের পায়ের ছাপ দেখে গ্রামবাসীরা তাঁরা নিশ্চিত হয়ে যান, গ্রামের কয়েকশো মিটার দূরের জঙ্গলেই রয়েছে জিনাত। খবর পেয়ে বনকর্মীরা দ্রুত ওই ছোট জঙ্গলটি মোটা জাল দিয়ে ঘিরে ফেলেন। গ্রামবাসীদের ওপর হামলা ঠেকাতে ঘিরে ফেলা হয় গ্রামের রাস্তাও। দুটি মহিষকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে জঙ্গলের একাধিক জায়গায় খাঁচা পাতা হয়। যেহেতু তার গলায় রেডিও কলার লাগানো ছিল, সেজন্য তার সিগন্যাল ট্র্যাক করে তার অবস্থানে পৌঁছে যেতে অনেকটা সুবিধা হয়। প্রথমে তার অবস্থান নিশ্চিত করেন বনকর্মীরা। এরপর শনিবারেই ঘুমপাড়ানি গুলি করা হয়। কিন্তু সামান্যের জন্য দেহের পাশ দিয়ে গুলি বেরিয়ে যায়।

উল্লেখ্য, জিনাতের বয়স মাত্র তিন বছর। গত ১৫ নভেম্বর মহারাষ্ট্রের তাডোবা-আন্ধারি ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে তাকে ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পে বা এসটিআর-এ নিয়ে আসা হয়। সেখানে প্রথমে কয়েকদিন ঘেরাটোপে রেখে পর্যবেক্ষণ করা হয় তাকে। এরপর ২৪ নভেম্বর তাকে রেডিয়ো কলার পরিয়ে সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সেখান থেকে ঝাড়খণ্ডের দিকে পাড়ি দেয় সে।