ঘোর সংকটে চাষিরা! ডিভিসির জল মিলবে একমাস বাদে

বর্ষায় বৃষ্টি নেই, রাজ্যের খাদ্য ভান্ডার পূর্ব বর্ধমান জেলায় আমন ধান চাষে ঘোর সংকট কৃষকদের

আমিনুর রহমান, বর্ধমান, ২৩ জুন — কাগজে কলমে, ক্যালেন্ডারে বর্ষাকাল আসলেও বৃষ্টির সেভাবে দেখা নেই। আর দীর্ঘ দিন ধরে ভারি বর্ষণের অভাবে রাজ্যের কৃষিপ্রধান পূর্ব বর্ধমান জেলার চাষিরা ঘোর সংকটে পড়েছেন। বর্ষার চাষ অর্থাৎ আমন ধানের চাষ আদৌও করা যাবে কিনা তা নিয়ে রীতিমতো আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ, বৃষ্টির জলের অভাবে মাঠঘাট ফুটিফাটা অবস্থা। জলের অভাবে জেলার সিংহভাগ অঞ্চলে ধানের বীজতলা তৈরিই হয়নি। এই অবস্থায় ডিভিসি জলাধারের সেচের জলের আবেদন রাখা হয়েছে। কিন্তু এখনই যে দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে জল মিলবে না সেটাও জানা গেছে। ফলে হতাশ কৃষক পরিবারের লোকজন।

এই সময়ের মধ্যে জেলার অধিকাংশ চাষের জমিতে আমন ধানের বীজতলা তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু এবার সেটা হয়নি। কারণ আকাশে বৃষ্টি নেই। চাষের জমি জল না পেয়ে ফাটল ধরেছে। কোনওভাবেই সেখানে বীজতলা তৈরি সম্ভব নয়। অথচ এটাই রাজ্যের খাদ্য ভান্ডার। বর্ধমান জেলার প্রধান চাষ। প্রকৃতির এই খামখেয়ালিতে কৃষক পরিবারে নেমে এসেছে হতাশা। যেসব এলাকায় বীজতলা তৈরি করা হয়েছে, সেই সব এলাকায় আবার বীজতলাও শুকিয়ে যেতে বসেছে বলে দাবি চাষিদের। এই অবস্থায় চাষিদের কথা ভেবে ইতিমধ্যে আসরে নেমেছেন পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার। চাষের জমিতে যাতে তড়িঘড়ি জল পৌঁছে দেওয়া যায়, তার জন্য চেষ্টা শুরু করেছেন। এ ব্যাপারে প্রতি বছরের মতো ডিভিসি যাতে জলাধার থেকে সেচের জল সরবরাহ করে, তার জন্য বৈঠকে বসবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।


তবে সূত্রের খবর, ডিভিসি-র দুর্গাপুর ব্যারেজ লাগোয়া ক্যাচমেন্ট এলাকায় এবার বৃষ্টিপাত কম হবার ফলে সেচের জলের ঘাটতি হতে চলেছে। ফলে ডিভিসি থেকে কতটা সাহায্য মিলবে তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। মোটামুটিভাবে ফি বছর পূর্ব বর্ধমান জেলায় গড়ে ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়। কিন্তু এবার চার ভাগের প্রায় তিন ভাগ জমিতে বীজতলা তৈরি করা যায়নি জলের অভাবে। বৃষ্টি হলেও আমনে অনেকটাই দেরি হবে বলে আশংকা। আর দেরিতে চাষ হলেই ফলনের ঘটতি দেখা দিতে পারে।

যদিও জেলা কৃষি দপ্তরের এক আধিকারিক দাবি করেছেন, জেলার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বীজতলা তৈরি হয়ে গিয়েছে। তবে অত্যধিক রোদ ও গরমের কারণে তা নষ্ট হতে বসেছে। সূত্রের খবর, জেলা থেকে ডিভিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাদের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী ২৫ জুলাইয়ের আগে কোনওভাবেই ক্যানেলগুলোতে জল সরবরাহ সম্ভব নয়। আবার ওই তারিখের মধ্যে জল ছাড়লেও সব কটি সেচ সেবিত এলাকায় জল পাঠানো হবে কিনা তা নিশ্চিত হতে পারেননি জেলা পরিষদের কর্তাব্যক্তিরা। কত পরিমাণ জল পাওয়া যেতে পারে, সে ব্যাপারেও কোনও তথ্য জানা যায়নি। চাষিদের মতে, যে সময়ে জল ছাড়া হবে অর্থাৎ প্রায় এক মাস বাদে জল ছাড়লে বীজতলা তৈরি আর সম্ভব নয়। কারণ জুলাই মাসের ১০-১২দিন পর থেকেই বীজতলা থেকে মূল জমিতে চারা রোপণ করার কাজ শুরু হয়।