লােকসভা নির্বাচনে গোহারা হারল বামেরা। কোনও আসনে জিততে পারবেন না এই বিষয়টি আগে থাকতেই অনুমান করে নিয়েছিলেন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের কর্তারা। তবে নির্বাচনী ফলাফল সম্পূর্ণভাবে প্রকাশের আগেই গেরুয়া শিবিরের জয়জয়কারে স্তম্ভিত সিপিএম নেতৃত্ব।
গণনার গতিপ্রকৃতি দেখে তাঁদের বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে, এবারের নির্বাচনে ভরাডুবি হতে চলেছে। আর সেটা উপলব্ধি করেই বৃহস্পতিবার প্রায় শূন্য ছিল আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। নেতাদের আনাগােনা ছিল না বললেই চলে।
এদিন একমাত্র সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এবং বিমান বসু আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে বসে পরিস্থিতির পর্যালােচনা করেন। বিগত একাধিক নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল বামেরা। কিন্তু এমনভাবে ভরাডুবির মুখােমুখি হতে হয়নি তাদের।
বলা যেতে পারে এবারের লােকসভা নির্বাচনে রক্তরক্ষণ হয়েছে বামেদের। হারানাে জমি পুনরুদ্ধার তাে দূরের কথা একটি আসনও দখল করতে পারেনি তারা। সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের আশা ছিল লাল ব্রিগেডের প্রভাব ভােটবাক্সে পড়বে। কিন্তু সেটাও কার্যত বিফলে গিয়েছে।
বিগত লােকসভা নির্বাচনের থেকে এবারে বামেদের ভােটে শতাংশের হার তলানিতে ঠেকেছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের কর্তারা নিশ্চিত তৃণমূলকে ঠেকাতে বামেদের ভােট পুরােপুরি বিজেপির ভােটবাক্সেই জমা পড়েছে। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রাভঙ্গ করতে গিয়েই এই সর্বনাশ হয়েছে বলে মনে করছেন সূর্যকান্ত মিশ্র থেকে শুরু করে বিমান বসুরা। অন্যদিকে কংগ্রেসেরও প্রায় একই অবস্থা।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র দলের এই ভরাডুবির কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি গােটা বিপর্যয়ের পর্যালােচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন। সূর্যবাবুর কথায়, দেশের ও রাজ্যের মানুষ বিজেপির পক্ষে ভােট দিয়েছে। এতে তাদের কিছু করার নেই।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৪ সালের লােকসভা নির্বাচনে ৩৪ শতাংশ ভােট পেয়ে দুটি আসনে জয়ী হয়েছিল সিপিএম। এছাড়া ২০০৯ সালে ১৫টি আসন পেয়ে ৪৩.৩০ শতাংশ, ২০০৪ সালে ৪৫ টি আসনে ৫০.৭২ এবং ১৯৯৯ সালে ২৯টি আসন জিতে ৪৬.৭৪ শতাংশ ভােট পেয়েছিল তারা।
হিসাব মতাে এবার মাত্র সাত শতাংশ ভােট পড়েছে বামেদের ভােটবাক্সে। সিপিএমের আশা ছিল রায়গঞ্জে মহম্মদ সেলিম এবং মুর্শিদাবাদে বদরুদ্দোজা খান হয়তাে আসন দুটি ধরে রাখতে পারবেন। কিন্তু সেটাও তাঁরা ধরে রাখতে পারেননি।
অন্যদিকে ফরওয়ার্ড ব্লক সিপিআই, আরএসপির অবস্থা আরও শােচনীয় বলে জানা গিয়েছে। কিছুদিন আগেই আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের কর্তারা দলের সকলকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, তৃণমূলকে ঠেকাতে যেন বিজেপিকে ভােট দেওয়ার মতাে ভুল না করেন তারা। কারণ কয়েকটি দফার নির্বাচনে লক্ষ করা গেছে, দলের অধিকাংশ নেতা ও কর্মী বিজেপিকে ভােট দিচ্ছেন। কিন্তু সতর্ক করা সত্ত্বেও কোনও কাজ হয়নি। আর দলের নেতা ও কর্মীরা গেরুয়া শিবিরকে ভােট দেওয়াতেই বামেদের যে ভরাডুবি হয়েছে সেটা স্বীকার করে নিয়েছেন বাম নেতৃত্ব।
আরএসপির সাধারণ সম্পাদক ক্ষিতি গােস্বামী মনে করছেন, মানুষ চেয়েছে তাই বিজেপিকে ভােট দিয়েছে। এতে তাঁদের কিছু করার নেই। তবে বামেদের অধিকাংশ ভােট পদ্মের দিকে গেছে, সেটা কার্যত তিনিও স্বীকার করে নিয়েছেন।
প্রসঙ্গত বিজেপি এবং তৃণমূলকে ঠেকাতে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে চেয়েছিল সিপিএম। কংগ্রেসের সঙ্গে এব্যাপারে প্রাথমিকভাবে কথাবার্তা বলার পরেও তা ভেস্তে যায়। আলিমুদ্দিনের কর্তারা মনে করছেন, কংগ্রেসের সঙ্গে জোটবদ্ধতা বজায় থাকতে হয়তাে এমন ভরাডুবির মুখােমুখি হতে হত না তাঁদেরকে। তবে সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল দেখে এটা এখন স্পষ্ট যে জাতীয় রাজনীতিতে আর বামেদের প্রাসঙ্গিকতা বজায় থাকল না।