টানা বৃষ্টিতে দার্জিলিং পাহাড় ধসে বিধ্বস্ত। কালিঝােরার শ্বেতিঝােরার কাছে ধস সরানাে যায়নি। বন্ধ হয়ে রয়েছে টয় ট্রেন। মংপংয়ের গণেশঝােরা সহ আশপাশের অনেক স্থানে ধস নেমেছে। লাভা যাওয়ার রাস্তাও বন্ধ হয়ে রয়েছে ধসের ফলে।
ধসের জেরে পাহাড়ের বিভিন্ন রুটে যানবাহন চলাচলে অনেক অসুবিধা দেখা দিয়েছে। কালিম্পং থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত রাস্তাতে ঘুরপথে যানবাহন চলছে। বৃষ্টি না কমলে পরিস্থিতি পুরােপুরি স্বাভাবিক হবে না। উল্টে এখন আরও বৃষ্টির কথা জানাচ্ছে আবহাওয়া দপ্তর।
অন্যদিকে তিস্তাতে জারি হয়েছে লাল সতর্কতা। তিস্তার জল বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। তিস্তার চরে থাকা লােকজনকে সরে যেতে বলা হয়েছে জলপাইগুড়ির সেচ দপ্তর থেকে। শিলিগুড়ি মহকুমার গঙ্গারাম চা বাগানের কাছে জলের তােড়ে টাইফু নদীর সেতুর সত্তর শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে গঙ্গারাম চা বাগান এবং তারাবাড়ির মধ্যে যােগাযােগ কার্যত ভেঙে পড়েছে সেতু ভেঙে পড়াতে।
অপরদিকে সেভকের তিস্তাতে পড়ে যাওয়া পর্যটকবােঝাই গাড়িটির সন্ধান এখনও মেলেনি। তবে তিস্তাতে পড়ে যাওয়াদের মধ্যে থেকে একজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে গাজলডােবা থেকে। মৃতের নাম অমল গর্গ। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন রাকেশ রাই, অমল রাই, গৌরব শর্মা এবং গােপাল নরওয়ানি।
তিনদিন ধরে লাগাতর বৃষ্টি চলছে উত্তরবঙ্গে। একনাগাড়ে বৃষ্টি হতে থাকায় উত্তরবঙ্গ জুড়ে বিভিন্ন নদীর জল বাড়ছে। অনেকগুলাে নদীর জল বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁচেছে। তিস্তার অসংরক্ষিত এলাকাতে লাল সতর্কতা জারি করা হলেও সংরক্ষিত এলাকাতে হলুদ সঙ্কেত জারি করা হয়েছে।
তিস্তা ব্যারেজে এদিন তিন হাজার কিউসেকের বেশি জল ছাড়া হয়েছে। লাগাতর বৃষ্টি হতে থাকায় জলপাইগুড়ির অনেক এলাকা জলমগ্ন। ডুয়ার্সে তৈরি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতি। বানারহাট, বিন্নাগুড়ি সহ অন্যত্র অনেক অঞ্চল জলমগ্ন।
শিলিগুড়ি মহকুমাতেও অনেক অঞ্চল জলমগ্ন। শিলিগুড়ি চম্পাসারির সমরনগরে মহানন্দার বাঁধে ফাটল তৈরি হচ্ছে বলে এদিন আতঙ্ক তৈরি হয়। তবে ভুপেন্দ্র নগরে আটটি বাড়ি ভেসে যায় বলে খবর।
বৃষ্টিতে খানিকটা ব্যাহত হচ্ছে ট্রেন চলাচল এবং অন্য যান চলাচলও। বৃহস্পতিবার ডুয়ার্সের রুট দিয়ে ট্রেন চলাচল করেনি। বিলম্বে চলছে দার্জিলিং মেল সহ অন্য অনেক দুর পাল্লার ট্রেনগুলােও। জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জের বন্ধু নগরের কাছে একত্রিশ নম্বর জাতীয় সড়কের অনেকটা অংশ ভেঙে গিয়েছে। বৃষ্টির জেরেই এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। আর রাস্তা ভেঙে যাওয়াতে সেখানে দুর্ঘটনাও ঘটছে।
সবমিলিয়ে অবিরাম বর্ষন হতে থাকায় উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকাতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কোচবিহারেও বিভিন্ন নদীর জল বাড়ছে। তিস্তা থেকে শুরু করে তাের্ষা, মহানন্দী, জলঢাকা সব নদীগুলাে এখন ফুঁসে উঠেছে। পাহাড়ে বেশি বৃষ্টি হতে থাকায় সমতলের নদীগুলাে আরও বিপজ্জনক আকার ধারণ করছে।
সেচ দপ্তরের পাওয়া খবর অনুযায়ী দার্জিলিংয়ে গত চব্বিশ ঘন্টায় বিয়াল্লিশ দশমিক সাত, কালিম্পংয়ে ছিয়ানব্বই দশমিক এক এবং শিলিগুড়িতে একশাে চুয়ান্ন দশমিক নয় শতাংশ বৃষ্টিপাত হয়েছে।
টানা বৃষ্টির জলে এবার ভােগান্তির মুখে জলপাইগুড়ি শহর ও শহর সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা। চারদিন ধরেই জেলা জুড়ে ভারী ও হালকা বৃষ্টি হয়ে চলছে। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ভারি বৃষ্টি হয় জলপাইগুড়ি শহরে। ফলে শহরের নিচু এলাকাগুলাে জলমগ্ন হয়ে পড়ে।
কদমতলা মোড়, রেসকোর্স পাড়া, হাসপাতাল পাড়া, মহামায়া পাড়া সহ একাধিক জায়গায় জল জমে যায়। ভােগান্তির মুখে পড়ে সাধারণ মানুষ।
অন্যদিকে জলপাইগুড়ি ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের নীচমাঠ এলাকার শতাধিক বাড়িতে জল ঢুকে গিয়েছে। বাসিন্দারা অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। পুরসভার তরফে পানীয় জল ছাড়া এখনও পর্যন্ত কোনও ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়নি বলে অভিযােগ। শহরে নিকাশি ব্যবস্থা নিয়েও অভিযােগ তুলেছেন বাসিন্দারা। শহরের নেতাজিপাড়ায় বেশ কিছুক্ষণ পথ অবরােধ করে স্থানীয় বাসিন্দারা।
একইভাবে ডুয়ার্সের বানারহাট সহ আশপাশের এলাকাও হতিনালার জলে প্লাবিত। পরিস্থিতি সামাল দিতে সকাল থেকেই বিপর্যয় মােকাবিলা ও সেচ আধিকারিকরা ময়দানে নেমেছিলেন। বৃষ্টি বাড়ার সঙ্গেই হাতিনালা দিয়ে জলস্রোত বাড়ছিল। চা বাগান এলাকা সহ বানারহাটের বিস্তির্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।