মমতার দিকে তাকিয়ে গোটা তৃণমূল

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Photo: IANS)

দলীয় নেতাদের চাঙ্গা করতে আজ শুক্রবার দুপুরে কালীঘাটের বাড়ি সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ে ফের বৈঠক ডাকলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিনের বৈঠকে মন্ত্রী, সাংসদ, জেলা সভাপতিসহ দলের বাছাই করা নেতাদের ডাকা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার নৈহাটি থেকে ফেরার পর মমতা নির্দেশ দিয়েছে, তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রী-কর্মী-অনুগামীরা যেন নিজেদের মধ্যে ‘জয় হিন্দ’ বলে সম্ভাষণ করেন। এমনকী টেলিফোন এলেও ‘জয় হিন্দ’ উচ্চারণ করতে বলেছেন। বিজেপির হিন্দুত্ববাদী স্লোগান ‘জয় শ্রীরাম’-এর প্রত্যুত্তরে ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান দিয়ে দেশের অখণ্ডতাকে মর্যাদা দিতে চাইলেন তৃণমূল সুপ্রিমো।

লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের ফলাফল শাসক দলের কাছে রীতিমতো উদ্বেগজনক। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিদিনই দল ছেড়ে স্থানীয় স্তরের কর্মী, নেতারা বিজেপির দিকে ঝুঁকছে। ইতিমধ্যে বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়, মুকুল রায়, দিলীপ ঘোষরা দাবি করছে, সাত দফায় তৃণমূল ভেঙে শাসক দলের সাংগঠনিক স্তরের এবং জনপ্রতিনিধিদের বিজেপিতে নাম লেখাতে চলেছে।


বিজেপির এই হুঙ্কার যে কথার কথা নয়, তার প্রমাণও মিলেছে। বীরভূম জেলার অনুব্রতর গড় ভেঙে মণিরুল ইসলামের বিজেপিতে যোগদান রীতিমতো অস্বস্তিতে ফেলেছে শাসক দলকে। দলীয় কর্মীরা প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছেন বিজেপির দ্বারা এমন অভিযোগ উঠছে।

খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার নৈহাটিতে গিয়ে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতিদের দ্বারা ঘরছাড়া শাসক দলের কর্মীদের ঘরে ফেরানোর দাবিতে অবস্থানে বসেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এদিন রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্রও গিয়েছিলেন নৈহাটিতে। সেখান থেকেই মুখ্যমন্ত্রী স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন, দুষ্কৃতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা উদ্ধার করতে। ভয় না পেয়ে অপরাধ দমনে অভিযান চালাতে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাজ্য মন্ত্রিসভার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য শুভেন্দু অধিকারীও ইতিমধ্যে দু’বার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় গিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে তাদের মনোবল জোগানোর চেষ্টা করেছেন।

সেই সঙ্গে তৃণমূল সুপ্রিমোর নির্দেশ মেনে দলীয় কার্যালয় পুনরুদ্ধার করছেন। একইভাবে দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতা ও মন্ত্রীরা জেলায় জেলায় দলীয় আক্রান্ত নেতা কর্মীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন এবং দলীয় কার্যালয় পুনরুদ্ধার করছেন। কিন্তু এই কাজ করতে গিয়ে যথেষ্ট প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে পড়তে হচ্ছে শাসক নেতাদের।

কারণ, লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে গেরুয়া দাপটে বেশ কয়েকটি লোকসভার রাজনৈতিক মানচিত্রে পরিবর্তন এসেছে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে উত্তরবঙ্গ এবং জঙ্গলমহলে। উত্তর চব্বিশ পরগণায়ও নৈহাটি, হালিশহর, কাঁচড়াপাড়া এবং ভাটপাড়া–চারটি পুরসভায় গেরুয়া উত্থান তৃণমূলের কাছে রীতিমতো অশনি সংকেত। এই জেলার তিনটি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে দুটিতে বিজেপির জয়জয়কার। সবচেয়ে বেশি বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে এই জেলায়।

আগামীর কথা ভেবে শুধু এই জেলাই নয়, জঙ্গলমহল এবং উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের আধিপত্য ধরে রাখতে শাসক দলের মধ্যে ময়নাতদন্ত শুরু হয়েছে। কঠিন রাজনৈতিক অবস্থার মধ্যেও দলকে বহুবার টেনে তুলেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার।

স্বাভাবিক কারণে এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলকে এই বিপর্যয়ের মুখ থেকে কীভাবে সামনের সারিতে আনেন, তা নিয়ে আমজনতার মধ্যে যথেষ্ট কৌতূহল রয়েছে। দলকে চাঙ্গা করতে বেশ কয়েকটি জেলায় বড়সড় সাংগঠনিক রদবদলের সম্ভাবনাও বাড়ছে। সেইসঙ্গে দলের যুব সংগঠনে কোনও বদল আসে কিনা তা নিয়েও জল্পনার অন্ত নেই। সামনের থেকে নেতৃত্ব দিতে পারবেন, এমন নেতা নেত্রীদেরই দলের দায়িত্ব দেওয়ার কথা ভাবছে শাসক দল।

সূত্রের খবর, মন্ত্রী যাঁদের করা হয়েছে, তাঁদের সাংগঠনিক স্তরে বড় ভূমিকা নিতে হবে, এমনটাই বলা হবে এদিনের বৈঠকে। যেসব মন্ত্রীরা নিজেদের বিধানসভায় পরাজিত হয়েছেন, তাঁদের আরও বেশি করে দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ, দল ভালো থাকলে তবে নেতা মন্ত্রীরা ভালো থাকবেন। একেবারে তৃণমূল স্তরে গিয়ে সংগঠনের কাজ করার মানসিকতা রয়েছে, এমন নেতাদের সন্ধান শুরু হয়েছে দলের অভ্যন্তরে। সাংগঠনিক রুগ্নতার ছায়া যাতে শাসক দলকে ভয় পাইয়ে না দেয়, সেজন্য দলকে নতুন করে শক্তি যোগাতে বদ্ধপরিকর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।