আসন কমলেও সামগ্রিক ফল ভালো, দাবি বঙ্গ বিজেপির 

BJP. (File Photo: IANS)

নিজস্ব প্রতিনিধি: এবারের লোকসভনে বিজেপির লক্ষ্য ছিল চারশো পার। বিজেপি গোটা দেশে জয় পেয়েছে ২৪০ আসনে। আর বাংলায় ৩০ পার করতে চেয়ে ১২-তে আটকে গিয়েছে। ২০১৯ সালের চেয়ে ৬টি আসন কম। সে বারে জেতা আটটি আসনও হাতছাড়া হয়েছে। নতুন করে এসেছে কাঁথি ও তমলুক।সেটা হচ্ছে, জাতীয় স্তরে বিজেপির খারাপ ফলের ধারা বজায় থেকেছে বাংলায়। এর পরেও দ্বিতীয় ‘অস্ত্র’ তৈরি রাজ্য বিজেপির। দিল্লিকে দেওয়ার জন্য রিপোর্ট তৈরি হয়ে গিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, আসনসংখ্যা কম হলেও পরিসংখ্যান অনুযায়ী অতীতের তুলনায় ভাল ফল হয়েছে বাংলায়। যা ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য আশাপ্রদ।২০১৯ সালে ১৮ আসনে জয়ের পাশাপাশি বিজেপি রাজ্যে ৪০.৬০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। সেই তুলনায় এবার ভোট কমেছে। কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় বেড়েছে প্রাপ্ত ভোটের হার। ২০২১ সালে ছিল ৩৭.৯৭ শতাংশ। এ বার সেটা সামান্য বেড়ে ৩৮.৭৩ শতাংশ হয়েছে। এটাকেই দলের সাফল্য বলে তুলে ধরতে চান রাজ্য বিজেপির নেতৃত্ব।

দলের পক্ষে দাবি, আসনসংখ্যার বিচারে বিজেপি পিছিয়ে থাকলেও পরিসংখ্যানের দিক থেকে দলের অগ্রগতি হয়েছে। সেই পরিসংখ্যানের মধ্যে রয়েছে রাজ্যের পুর এলাকার ফল। রাজ্যের ১২১টি পুরসভার মধ্যে ৬৯টিতেই এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। ২’টিতে কংগ্রেস এবং শাসক তৃণমূল ৫১টিতে। এর বাইরে বাংলার ৬টি পুর নিগমের ফলও দলের পক্ষে অতীতের তুলনায় ভাল। কোথায় কত ওয়ার্ডে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে তার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি না হলেও দাবি করা হচ্ছে, সর্বত্রই শক্তি বেড়েছে।এ বার বিজেপি যে শহরাঞ্চলে তুলনামূলক ভাল ফল করেছে তার প্রমাণ কলকাতাতেই। কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ড রয়েছে কলকাতা উত্তর, কলকাতা দক্ষিণ, যাদবপুর এবং ডায়মন্ড হারবার লোকসভা আসনের মধ্যে।

২০২১ সালে হওয়া পুর নির্বাচনে তৃণমূল জিতেছিল ১৩৭টিতে। আর বিজেপি জয় পেয়েছিল ৩টিতে। সব ক’টিই কলকাতা উত্তরে। লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে সেই উত্তরে বিজেপি এগিয়ে ২৪টি ওয়ার্ডে। ২০১৯ সালের তুলনায় চারটি ওয়ার্ড বেড়েছে। তবে কলকাতা দক্ষিণের ২৬টি ওয়ার্ডে ২০১৯ সালে বিজেপি এগিয়ে থাকলেও এ বার সেটা কমে হয়েছে ২০। তবে সব মিলিয়ে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময়ের তুলনায় এ বার কলকাতায় ফল অনেক ভাল বলে বিজেপির দলীয় রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। যাদবপুর এলাকাতেও বিজেপি ২টি ওয়ার্ডে এগিয়ে রয়েছে। তবে ডায়মন্ড হারবারের মধ্যে থাকা ৬টি ওয়ার্ডেই তৃণমূলে এগিয়ে।বিজেপির যে রিপোর্ট, তাতে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে বিধানসভাওয়াড়ি ফলে। তাতে পদ্মশিবির এটা নিয়ে উৎফুল্ল যে, রাজ্যে এমন ৯টি আসন রয়েছে যেখানে বিজেপি অতীতে কখনও এগিয়ে থাকেনি। এর মধ্যে রয়েছে বড়ঞা, জঙ্গিপুর, সন্দেশখালি আসন। এ ছাড়া রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক, পাশকুড়া পূর্ব, নন্দকুমার, মহিষাদল, চণ্ডীপুর, রামনগর আসন।


প্রসঙ্গত, তমলুক একমাত্র লোকসভা আসন যেখানে প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এগিয়ে রয়েছেন ৭টি বিধানসভা এলাকাতেই। তবে বিজেপি বেশি খুশি জঙ্গিপুরের ফল নিয়ে। ২০২১ সালে লক্ষাধিক ভোটে হারা আসনে এ বার এগিয়ে দল।এই রিপোর্টে বিধানসভা নির্বাচনের সঙ্গে এ বারের দিল্লিবাড়ির লড়াইয়ের তুলনাও রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ২০২১ সালে বিজেপি মোট ৭৭টি আসন জিতেছিল বাংলায়। সেই জেতা আসনগুলির মধ্যে ৬২টিতে এ বারেও এগিয়ে দল। এর মধ্যে আবার ৪টি আসন ছাড়া সর্বত্র ব্যবধান বেড়েছে পদ্মের। তবে বিজেপি দলীয় রিপোর্টে বেশি জোর দিয়েছে অন্য একটি পরিসংখ্যানে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, ২০২১ সালেও জিততে না-পারা এমন ২৮টি আসনেও এ বার দল এগিয়ে রয়েছে। পাঁচ বছর আগের তুলনায় এ বার ফল কেন খারাপ হয়েছে তা বোঝাতে এমন একটি তালিকাও তৈরি করেছে রাজ্য বিজেপি, যাতে দেখা যাচ্ছে ২০১৯ সালে এগিয়ে থাকা ৫৫টি বিধানসভা আসনে এ বার পিছিয়ে তারা। ২০১৯ সালে জিতলেও এ বার ধরে রাখতে না-পারা ৮টি লোকসভা আসনের মধ্যেই বেশির ভাগ পিছিয়ে থাকা আসন রয়েছে। আবার আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ির মতো জেতা আসনেও রয়েছে পিছিয়ে থাকা বিধানসভা।

এ ছাড়াও রাজ্য বিজেপি পরিসংখ্যানের অন্য একটি তালিকাও বানিয়ে রেখেছে বলে জানা গিয়েছে। তাতে সেই কেন্দ্রগুলি দেখানো হয়েছে যেখানে কম ভোটের ব্যবধানে পিছিয়ে দল। সেই তালিকা অনুযায়ী, ১০ হাজারের কম ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা আসনের সংখ্যা ৪৯। আর ১০ হাজারের বেশি কিন্ত ১৫ হাজারের কম ভোটের ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা বিধানসভার সংখ্যা ২১টি।শনিবার রাজ্য বিজেপির কোর কমিটির বৈঠক রয়েছে। সেখানে উপস্থিত থাকার কথা বাংলার দায়িত্বে থাকা চার কেন্দ্রীয় নেতা সুনীল বনসল, মঙ্গল পাণ্ডে, অমিত মালবীয় এবং আশা লাকড়ার। সেখানে এই রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা হতে পারে। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই রিপোর্টের উপরে ভিত্তি করেই আগামী বিধানসভা নির্বাচনের পরিকল্পনা করা হবে। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ভোটের নিরিখে বিজেপি রাজ্যে ১২১টি বিধানসভায় এগিয়ে ছিল। সেই ফলের উপরে ভিত্তি করে রাজ্যে ক্ষমতাদখলের পরিকল্পনা করেছিল বিজেপি। এ বারের লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে বিজেপি অনেকটাই পিছিয়ে। এগিয়ে ৯০ আসনে। সেই ফাঁক পূরণ করতেই কম ভোটের ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা আসনের রিপোর্টকে গুরুত্ব দিতে চায় রাজ্য বিজেপি।