রবিবারেও রাজপথ মুখর হল আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে

আরজি কর মেডিক্যালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় পর থেকে পথে নেমেছে নাগরিক সমাজ। প্রতিদিনই শহরের কোথাও না কোথাও মিছিল অথবা সভা হচ্ছে। প্রতিবাদ কর্মসূচি করার অনুমতি চেয়ে পুলিশের কাছে জমা পড়ছে বহু আবেদন। আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার ফের একটি বড় মিছিলের সাক্ষী থাকল কলকাতা। ‘আমরা তিলোত্তমা’র ব্যানারে আয়োজিত এই মিছিলে পা মিলিয়েছেন টলিউডের তারকারাও। উপস্থিত ছিলেন অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, চৈতি ঘোষাল, উষসী চক্রবর্তী, পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় সহ আরও অনেকে। দুপুর ৩ টায় কলেজ স্কোয়্যার থেকে শুরু হয় মিছিল। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ মিছিলটি ধর্মতলায় পৌঁছায়। ধর্মতলার প্রতিবাদ মঞ্চে উঠে আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদ করেন আন্দোলনকারীরা।

মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্যের স্ত্রী নাট্যকর্মী মধুরিমা গোস্বামী। আরজি করের ঘটনায় এখনও নীরবতা ভাঙেননি অনির্বাণ। এ নিয়ে সমাজমাধ্যমে তাঁকে সমালোচনারও মুখোমুখি হতে হচ্ছে। অনির্বাণের এই অবস্থান প্রসঙ্গে মধুরিমাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি আমার লড়াই লড়তে নেমেছি। আমি যাঁদের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছি, তাঁদের সঙ্গে মিছিলে এসেছি। তবে প্রত্যেকেরই প্রতিবাদের ভিন্ন ভাষা থাকে। আমি রাস্তায় নেমেছি বলেই সকলকে রাস্তায় নামতে হবে এমন নয়। আমি কাউকে দেখে রাস্তায় নামিনি। আমার মনে হয়েছে রাস্তায় নামা উচিত, তাই নেমেছি।’

এই মিছিলে উপস্থিত হয়ে অপর্ণা সেন বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের উপর ভরসা আছে।’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর থেকে ভরসা টলমল হয়ে যাওয়ার জোগাড় হয়েছে বলে মনে করেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন,  আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা। কতটা যন্ত্রণা সহ্য করে মেয়েটিকে মারা যেতে হয়েছে, মেয়ে হিসেবে ভাবলেই আমার গা শিউরে উঠছে। আমি চাইব, আমাদের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী প্রকৃত অর্থেই একটা বিহিত করুন। যাতে ওঁর প্রতি আমাদের ভরসা থাকে। কারণ এখন ভরসা টলমল হয়ে যাওয়ার জোগাড় হয়েছে।’ আরজি করের নৃশংস ঘটনা কোনও একজনের পক্ষে ঘটানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন স্বস্তিকা। তিনি বলেন, আমরা সহ-নাগরিকরা মানতে নারাজ যে এই নৃশংস কর্মকাণ্ড কারও একার পক্ষে ঘটানো সম্ভব নয়। যদি সব তথ্যপ্রমাণই থেকে থাকে, তাহলে বাবা-মাকে প্রথমে আত্মহত্যার করার কথা বলা হল কেন? যেভাবে তথ্যপ্রমাণ লোপাট হয়েছে, সেটা আমরা সকলেই জানি। সেটাই বা কেন হল? জনসাধারণ বোকা নয়। বুদ্ধি-বিবেচনা প্রয়োগ করে আমরা যদি নিজেদের ভোট দিতে পারি, তাহলে এখন আমরা হঠাৎ বোকা হয়ে যাব কেন?’


নাগরিকদের অন্ধকারে রাখার জন্য এদিন সরব হন অভিনেত্রী। দোষীদের সামনে আনারও দাবি জানান তিনি। তাঁর কথায়, ‘এই সরকারকে অভিভাবক বলে মনে করি বলেই ক্ষমতায় রেখেছি। পুলিশ সরকার, কারও কাছ থেকেই সুরাহা না পেলে আমরা নাগরিকরা কোথায় যাব? এই সময় প্রতিবার পুজোর ভাইব পাই, তবে এবার মনটা একেবারেই ভালো নেই।’

মিছিলটি অরাজনৈতিক কি না প্রশ্ন করতেই অভিনেত্রী চৈতি ঘোষাল বলেন, ‘অরাজনৈতিক–রাজনৈতিক বলে আর কিছু নেই, আমরা ন্যায়বিচার চাই। সিবিআই দোষীকে খুঁজে বের করে কড়া শাস্তি দিক। সমস্ত অথরিটি, সিবিআইয়ের কাছে আমার প্রশ্ন, কেন আর কোনও তথ্য দেওয়া হচ্ছে না? এছাড়াও তিনি বলেন, ‘একজন অভিনেত্রী হিসেবে নয়, একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি মিছিলে যোগ দিয়েছি।’ অপরদিকে অভিনেত্রী সুদীপ্তার দাবি, ফাঁকফোকর দিয়ে অনেক কিছু গলে যাচ্ছে।

আজ আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে প্রতিবাদ মিছিল করেন রামকৃষ্ণ মিশনের প্রাক্তনীরাও। তাঁরা মৌন মিছিল করেন। তাঁদের কালো ব্যানারে ছিল শ্রীরামকৃষ্ণ, সারদা মা ও স্বামী বিবেকানন্দের মুখ। আর তাতেই বড় অক্ষরে লেখা ছিল ‘তমসো মা জ্যোতির্গময়’। তাঁরা জানান, আরজি করের তরুণী ডাক্তারের ভয়ানক মৃত্যুর ঘটনায় তাঁরা সকলেই বাকরুদ্ধ। তাই তাঁদের এই মৌন মিছিল। গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশনের সামনে থেকে তাঁদের মিছিল শুরু হয়ে যায় নন্দন পর্যন্ত। রাজ্যের সমস্ত রামকৃষ্ণ মিশনের প্রাক্তনীরা যোগ দিয়েছিলেন এই মিছিলে।

এছাড়াও অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসের সামনে রানুছায়া মঞ্চ থেকে এদিন আরও একটি মিছিল শুরু হয় এবং তা যায় ধর্মতলা পর্যন্ত। মিছিল শুরুর আগে পথনাটিকার মাধ্যমে আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ জানানো হয়। তাঁদের কণ্ঠে ছিল সেই গান, উই শ্যাল ওভারকাম। তাঁরা স্ট্রিট পেন্টিংও করেন। তাঁদের প্রতিবাদের ভাষা ছিল গান এবং ছবি। অভিনেত্রী সোলাঙ্কি রায়ও সামিল হয়েছিলেন এই প্রতিবাদে । তিনি বলেন, ‘২২ দিন হয়ে গেল। আর কবে ? বহু মানুষ যুক্ত এই ঘটনায়। অথচ এখনও কোনও সুরাহা মেলেনি। দাবি একটাই, সেই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই প্রতিবাদ চলবে।’