• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচন ও হাসফাঁস গরমে ইদের বাজার মন্দা তবে শেষ রবিবারে ধর্মতলা থেকে গড়িয়াহাট জমজমাট

দিন গােনা শুরু হয়ে গেছে। ইতিমধ্যেই নাখােদা মসজিদ থেকে টিপু সুলতান মসজিদ সেজে উঠেছে আলাের মালায়। অন্যদিকে চটপট ইদের বাজার সেরে ফেলতে শেষ রবিবার শহরমুখাে মানুষ।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র (Photo: Indrajit Roy/ IANS)

দিন গােনা শুরু হয়ে গেছে। ইতিমধ্যেই নাখােদা মসজিদ থেকে টিপু সুলতান মসজিদ সেজে উঠেছে আলাের মালায়। অন্যদিকে চটপট ইদের বাজার সেরে ফেলতে শেষ রবিবার শহরমুখাে মানুষ। কেউ এসছেন হুগলি, বর্ধমান, বসিরহাট থেকে আবার কেউ খাস কলকাতা শহরের রাজাবাজার, তােপসিয়া, খিদিরপুরের বাসিন্দা। এমনকী কাজের জন্যই বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় আসা এমন মানুষও সময় সুযােগ বুঝে এক ফাঁকে ঈদের বাজারে ঢুঁ মেরেছে নিউমার্কেট চত্বরে। কারাে পছন্দ ধর্মতলার বিধান মার্কেট, নিউ মার্কেট আবার কেউ ছুটছেন গড়িয়াহাট, দক্ষিণাপন।

সমানতালে শেষ রবিবারের ভিড় চোখে পড়ল শ্যামবাজার হাতিবাগান মার্কেটেও। চলতি হাওয়ায় গা ভাসিয়ে বাড়ির খুদেদের সঙ্গে নিয়ে আবার অনেকেই কোয়েস্ট বা সাউথ সিটি মলে গিয়ে হাজির হচ্ছেন। ছুটির দিনে সকাল থেকেই ঈদের বাজার জমজমাট।

‘অন্যান্য দিনের তুলনায় রবিবারের আবহাওয়া মনােরম। গরম তুলনায় অনেক কম। তাই ঘুরে ঘুরে পছন্দসই জিনিসটা কিনতে অসুবিধা হয়নি’ এমনই জানালাে কলেজ পড়ুয়া সামিয়া থেকে বাইপাসের বাসিন্দা গৃহবধূ নাজনিন। তবে যেহেতু বছরের মধ্যে সব থেকে বড় উৎসব, এক দিনে তাে সব কেনাকাটা সম্ভব নয়। তাই এর আগেও পরিবার সমেত বেরিয়ে ছিলেন ওরা।

গােখেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সামিয়া বন্ধুদের সাথে এসে নিজের জন্য কেনা সারারার সঙ্গে মানানসই বটুয়া, চুড়ি, অন্য অলঙ্কার কিনে নিয়ে গেছে। অন্যদিকে নাজনিন নিজেকে হােমমেকার বলতেই ভালােবাসে। বছর ত্রিশের নাজনিন পাক্কা সংসারি। ও জানালাে, শুধু নিজেদের জন্যই নয় পরিজন-প্রিয়জনকেও ঈদের শুভেচ্ছা সহ হাতে উপহার তুলে দেওয়া রেওয়াজ। এর সাথেই উৎসবের মেজাজে নিজেদের আটপৌড়ে বাড়ির অন্দরসজ্জায় মন পসন্দ সামগ্রীও কিনছে সে। শুধু তাে একটা দিন নয়, প্রায় সপ্তাহ খানেক ধরে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে যাতায়াত আছে। তার জন্যও হিসেব করে কেনাকাটা করছে ওরা। দিনের জন্য যদি হালকা শাড়ি হয় তাে রাতের পার্টিতে জমকালাে সারারা চাই-ই-চাই। গৃহিনীদের সঙ্গে মানানসই করে দিনে কুর্তা পায়জামা ও রাতের জন্য পাঠানি সুট কিনছে কর্তারাও। আর বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে বেরতে হলে প্রিন্টেড টিশার্ট ও ডেনিমই পছদ যুবাদের। সঙ্গে হালফিলের ট্রাউজার।

উৎসবের দিন যত এগিয়ে আসছে ধর্মতলার একের পর একে স্যুট প্রস্তুতকারক দোকানিরা রাত পর্যন্ত খুলে রেখে ঝড়ের বেগে কাজ সারতে ব্যস্ত। অন্যদিকে বম্বে ডাইং থেকে বেড কাভার, পর্দার কাপড় এমনকী চাদনি মার্কেটের হরেক রকম চীনে আলােকসজ্জার চাহিদাও উৎসবের মরসুমে বেশ ভালাে। রাধাবাজারের ল্যাম্পসেডের দোকানেও হাজির হচ্ছেন সৌখিন উৎসবমুখর মানুষ। বাটা থেকে শ্রীলেদার্সের দোকানেও লম্বা লাইন।

এদিকে সন্ধে নামার আগেই অনেকে ছুটছেন বাড়িতে ইফতারের আয়ােজনে। আবার কিছু পরিবার সমেত পার্ক স্ট্রিট বা ধর্মতলার কেএফসি, মােমাের দোকানে হাজির হচ্ছেন। ইদের বাজার সেরে চিৎপুরের আলম বা হুগলির খালেদ, জামিরুলরা পরিবারের সঙ্গে রেস্তোরাতেই ঈফতার সেরে নিলেন। শ্রীরাম মার্কেট থেকে নিউ মার্কেটের অন্দরে সেধিয়ে মিলল আরও এক ছবি। গ্রাহক সামলে দোকানেই কর্মচারীদের সঙ্গে ইফতারে বসেছেন মালিক। সব মিলিয়ে কলকাতায় সৌহার্দ্য বিদ্যমান।

পুরুষ, মহিলা থেকে শুরু করে কিডস ওয়ের নানান সম্ভারে সেজে রয়েছে দোকান। এক হাতে আইসক্রিম আর অন্য হাতে মায়ের হাত শক্ত করে ধরে নিজের পছন্দ মতাে জামা প্যান্ট কিনে নিতে ব্যস্ত বাড়ির ছােটরাও। ওদের জন্যও রয়েছে শেরওয়ানি থেকে কুর্তা পায়জামা, জ্যাকেট। মেয়েদের জন্য রয়েছে হট প্যান্ট,  জাম্প শ্যুট, লং স্কার্ট। এবারে আবার জড়ি চুমকির লং ফ্রকের চাহিদা বেশ বেশি। তবে ওয়েস্টার্ণের পাশাপাশি এথনিক সারারা, ঘারারা, সালওয়ার স্যুটের চাহিদা অন্যান্যবারের মতােই রয়েছে। জারদৌসি থেকে জামদানি, সিল্কের শাড়িও বিক্রি হচ্ছে সমান তালে।

অন্যবারের মতােই পুরুষদের মধ্যে পাঠানি স্যুটের চাহিদা বেশি। বিধান মার্কেটের সালােয়ার স্যুট কিনতে শুধু খিদিরপুর তিলজলা, রাজাবাজার, চিৎপুরই নয় আসানসােল, হলদিয়া, মেদিনীপুর থেকেও ঈদের মরসুমে খুচরাে ক্রেতারা হাজির হয়। এমনকী বিহার, ঝাড়খণ্ড, জামসেদপুর থেকেও বিধান মার্কেটে উৎসবের কেনাকাটা করতে আসে মানুষ। শুধু বড়বাজারই নয় সুরাট, আহমেদাবাদ, মুম্বাই থেকে সারারা, ঘারারা, সালােয়ারের পিস নিয়ে এসে বিধান মার্কেটে বিক্রি করা হয়। তাই এই বাজার বেশ নাম করা। কিন্তু ভােটের মরসুমে ইদের বাজার মন্দা বলছেন অনেক বিক্রেতাই।

লােকসভা নির্বাচন চলায় এবার আর দূর দূরান্তের ক্রেতারা কলকাতায় এসে থেকে কেনাকাটা সারতে পারেনি। তার প্রভাব পড়েছে জিনিসপত্র বিক্রিবাট্টায়। এর সঙ্গে অস্বাভাবিক গরমেও বেশির ভাগ মানুষ কেনাকাটায় শপিং মলাই বছে নিয়েছে। ফলে বিধান মার্কেট বা সাধারণ বাজারগুলিতে দোকানিরা নাখুশ। তাঁদের দাবি ৮০ শতাংশ বিক্রি কম হয়েছে শুধু মাত্র ভােট ও গরমের কারণে।

তবে এবারে মাত্রাতিরক্ত গরম থাকায় সুতির জিনিস কেনার দিকেই ঝুঁকছে ত্রেতারা। তবে বড় মার্কেটগুলাের পাশাপাশি প্রান্তিক মানুষরা দেখেশুনে দামদর করে কিনতে ব্যস্ত ধর্মতলা ও গড়িয়াহাটের ফুটপাতের হকারদের থেকেই। তবে নির্বাচন পরবর্তি সময়ে গত দুই সপ্তাহে বাজার জমে উঠেছে। আর হাতে মাত্র কয়েক দিন। এর মধ্যে নাওয়া খাওয়ার সময় নেই বিক্রতা থেকে ক্রেতা সবার। কেউ ইদের বাজারে লাভের মুখ দেখার আশায়। অনেকটা লাস্ট মিনিট সাজেশনের মতােই আবার অরেকদল শাড়ি, চুড়িদারের সঙ্গে পছন্দের অ্যাক্সেসারিজটা চট জলদি দেখে নিতে ব্যস্ত।