• facebook
  • twitter
Monday, 16 September, 2024

মদ্যপ অবস্থায় দলীয় কার্যালয়ে মারামারিতে থানায় অভিযোগ ভোটের টাকা আত্মসাতে বিজেপি অফিসে ধুন্ধুমার কাণ্ড

খায়রুল আনাম : এবারের লোকসভা ভোটের ফলাফল ঘোষণার পরে বিজেপির নরেন্দ্র মোদি তৃতীয় বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে, তিনি বিদেশ সফরেও বেরিয়ে পড়েছেন। মন্ত্রীসভার অন্যান্য মন্ত্রীরাও তাঁদের দায়িত্ব বুঝে নিয়ে কাজকর্ম শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু বীরভূম জেলায় বিজেপির অভ্যন্তরীন বিবাদ আর আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয়গুলি দগদগে ঘায়ের মতো বাইরে বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে কোনও নিরাময়যোগ্য দাওয়াই

খায়রুল আনাম : এবারের লোকসভা ভোটের ফলাফল ঘোষণার পরে বিজেপির নরেন্দ্র মোদি তৃতীয় বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে, তিনি বিদেশ সফরেও বেরিয়ে পড়েছেন। মন্ত্রীসভার অন্যান্য মন্ত্রীরাও তাঁদের দায়িত্ব বুঝে নিয়ে কাজকর্ম শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু বীরভূম জেলায় বিজেপির অভ্যন্তরীন বিবাদ আর আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয়গুলি দগদগে ঘায়ের মতো বাইরে বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে কোনও নিরাময়যোগ্য দাওয়াই এখনও পর্যন্ত বিজেপি নেতৃত্ব দিতে পারছেন না। জেলার বোলপুর ও বীরভূম–দু’টি লোকসভা কেন্দ্রই নিজেদের দখলে রেখে শাসক তৃণমূল কংগ্রেস জেলাজুড়ে বিজয়োৎসব করে চলেছে। আর অপর দিকে বিরোধী শিবির বিজেপি নিজেদের মধ্যেই সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে নিজেরাই একে অপরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করে দৌড়ঝাঁপ করে চলেছে। আর শূন্য হাতে পেন্সিল ধরে সিপিএম ভোটে ভরাডুবির হিসেবের আঁকিবুকি কেটে চলার সাথে সাথে ঘুরে দাঁড়াবার স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হয়ে অন্ধ গলিতে ঘুরপাক খাচ্ছে।
লোকসভা ভোটের প্রচারপর্ব চলাকালীন সময় থেকেই জেলায় বিজেপির একাধিক গোষ্ঠীর বিবাদ সামনে চলে আসে। সমাজ মাধ্যম থেকে শুরু করে প্রকাশ্যে দেওয়ালে পোস্টার সেঁটে বিজেপির জেলার বোলপুর ও বীরভূম-দুই সাংগঠনিক জেলা সভাপতি যথাক্রমে সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল ও ধ্রুব সাহার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন দলের একাংশ। এনিয়ে সিউড়িতে দলের জেলা কার্যালয়ের সামনেই ধুন্ধুমার কাণ্ড বাধলে তাতে হাতাহাতিতে জড়িয়ে ধ্রুব সাহা রীতিমতো নজির সৃষ্টি করেন। এমন কি, দলের রাজ্য নেতা শুভেন্দু অধিকারী জেলায় পদযাত্রায় যোগ দিতে এলে, তিনি যে এলাকায় পদযাত্রা করেন সেই এলাকায় ‘চোর ধ্রব সাহার অপসারণ’ চেয়ে পোস্টারও পড়ে।

এবার ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে বিজেপি যখন আন্দোলনের ধার বাড়াবার কথা বলছে তখন, ভোটের কাজে যে সব দলীয় কর্মীরা প্রাণপাত পরিশ্রম করেছেন তাঁদের প্রতিশ্রুতি মতো টাকা দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে একের পর এক ধুন্ধুমার কাণ্ড বেধে চলায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যন্ত বিঘ্নিত হচ্ছে। বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের মুরারই কার্যালয়ে সাংগঠনিক বৈঠক চলাকালীনই ভোটের দিনে বুথ পিছু ১৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা থাকলেও ২ থেকে ৩ হাজার টাকার বেশি কেন দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তুলে দলের বুথ কর্মীরা বাকী টাকা দেওয়ার দাবি জানান। আর এনিয়ে বিবাদের সময় দলের এক মণ্ডল সভাপতি গোরাচাঁদ কোনাইকে দলীয় কার্যালয়ের ভিতরেই বেধড়ক মারধর করা হয়। উপস্থিত ছিলেন দলের বীরভূম জেলা ইনচার্জ মুর্শিদাবাদের হিলোরার সুজিত দাস, মুরারই বিধানসভার ইনচার্জ আনন্দ হালদার। গোরাচাঁদ কোনাই নিজেই অভিযোগ করেন যে, তিনি মদ্যপ অবস্থায় দলীয় কার্যালয়ে এসেছেন বলে অভিযোগ করে তাঁকে মারধর করা হয়েছে। তিনি মদ্যপান করে দলীয় কার্যালয়ে আসেননি বলে দাবি করেন। এনিয়ে উভয়পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে মুরারই থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।

একই অভিযোগে বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী পিয়া সাহাকে নিয়ে দলের বোলপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল এলে সেখানেও দলীয় কর্মীরা পিয়া সাহা ও সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডলকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। এমন কি, ভোটের ফল প্রকাশের পরে বোলপুরে দলের এক বুথ কর্মীর ঘর রাতে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হলেও, তাঁর পাশে দল দাঁড়ায়নি বলে অভিযোগ করা হয়। এনিয়ে বাকবিতণ্ডায় পরিস্থিতি এমনই উত্তপ্ত হয় যে, সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডলকে মারতে উদ্যত হন দলীয় কর্মীদের একাংশ। সেই সময় কোনওক্রমে পালিয়ে বাঁচেন পিয়া সাহা ও সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল। এবার আবারও পিয়া সাহাকে বাদ দিয়ে সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল বোলপুর স্টেশন রোডে দলীয় একটি কার্যালয়ে রাতের দিকে এলে সেই খবর পৌঁছে যায় দলীয় কর্মীদের কাছে। যাঁরা ভোটের সময় দলীয়স্তরে কাজ করেও টাকা পাননি বলে অভিযোগ করছেন। সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডলকে দেখতে পেয়েই তাঁরা তাঁর গাড়ি ঘিরে ফেলে টাকা পরিশোধের দাবি তোলেন। সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল দাবি করেন যে, টাকা দেওয়া হয়েছে। বিভ্রান্তি ছড়াতে এসব করা হচ্ছে। আর তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন টাকা হাতে না পাওয়া দলীয় কর্মীরা। তাঁরা সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডলকে টেনেহিঁচড়ে গাড়ি থেকে নামাবার চেষ্টা করলে এলাকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তীব্র বাকবিতণ্ডার মধ্যেই সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডলের গাড়ির চালক কোনক্রমে তাঁকে নিয়ে রাতেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেঁচেছেন। ওইসব কর্মীরা বলছেন, তাঁরা টাকা ধার করে বুথ খরচ চালিয়েছেন। বোলপুরের অধিকাংশ ওয়ার্ডে ভোট প্রাপ্তিতে তাঁরা দলকে এগিয়ে দিয়েছেন। তারপরেও তাঁদের সাথে এমন ব্যবহার করছেন পিয়া সাহা ও সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল। এখানে সমস্যার সমাধান না হলে প্রয়োজনে তাঁরা দলের রাজ্য কার্যালয়ে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ।