আরজি কর আবহে এবার স্বাস্থ্যখাতে বাড়তি নজর দিতে চান তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে চিকিৎসকদের সঙ্গেও শাসকদলের সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে বদ্ধপরিকর ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। সেই উদ্দেশ্যে পূর্ব ঘোষণা মতোই আজ অর্থাৎ ৩০ নভেম্বর, শনিবার নিজ লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে চিকিৎসকদের নিয়ে এক শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিতে চলেছেন অভিষেক। আমতলার সমন্বয় প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠিত হবে ‘ডক্টর্স সামিট ২০২৪’। সেই কর্মসূচির ডিজিটাল প্রচারপত্রে ‘মূল বক্তা’ হিসাবে নাম রয়েছে সেনাপতি অভিষেকেরই। দিন-পনেরো আগে থেকেই এই কর্মসূচির পোস্টার ছড়াতে শুরু করেছিল সমাজমাধ্যমে। এই পোস্টারের মূল আকর্ষণ, ‘হেল্থ ফর অল’ বা ‘সকলের জন্য স্বাস্থ্য’। এবার প্রশ্ন হলো, কী উদ্দেশ্যে আয়োজিত হতে চলেছে এই সামিট? সূত্রের খবর, সাধারণ মানুষকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দিতেই এই মানবিক উদ্যোগ অভিষেকের। স্বাস্থ্য থেকে রাজনৈতিক মহল বলছে, এই কর্মসূচিকে আরজি কর পরবর্তী অধ্যায়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে ‘সেতুবন্ধন’ বলে ব্যাখ্যা করা হলে ভুল হবে না। যদিও তৃণমূলের অন্দরমহল বলছে, এই সামিটের মূল উদ্দেশ্য ডায়মন্ড হারবারে স্বাস্থ্য পরিষেবার সহজলভ্যতাকেই সুনিশ্চিত করা।
প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, অভিষেকের লোকসভা কেন্দ্রে আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি, এই এক মাস ধরে চলবে বিশেষ স্বাস্থ্যশিবির। প্রতিদিন ১০০টি করে শিবির হওয়ার কথা। সেখানে যে চিকিৎসকদের থাকার কথা, তাঁদের নিয়েই আজ পরিকল্পনা বৈঠক করবেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায় খোদ। তবে হঠাৎ কেন স্বাস্থ্যশিবিরের পরিকল্পনা? সূত্রের খবর, সম্প্রতি আমতলার দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন ডায়মন্ড হারবারের সাতটি বিধানসভার বিধায়ক, সকল পৌরসভার চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর, পঞ্চায়েতের প্রধান এবং পঞ্চায়েত সদস্য সহ সকল স্তরের দলীয় নেতা-কর্মীরা। অনুষ্ঠানের সেই আলোচনাতেই উঠে এসেছিল স্বাস্থ্য-প্রসঙ্গ এবং এই আলোচনার মধ্যমণি ছিলেন যুবরাজই। নির্দিষ্ট আলোচনার প্রেক্ষিতে ডায়মন্ড হারবারের সাধারণ মানুষকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দিতে উদ্যোগী হন সাংসদ। তাঁর এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যেই আজ অভিষেকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ‘ডক্টর্স সামিট’। আদতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আরও এক ‘ডায়মন্ড হারবার মডেল’ গড়তে চলেছেন সেনাপতি অভিষেক। যদিও এই মডেলের নজির করোনা-কালেও দেখেছিলেন বঙ্গবাসী। কোভিডের নমুনা পরীক্ষায় সব লোকসভাকে টেক্কা দিয়েছিল অভিষেকের সংসদীয় কেন্দ্রই। তবে চিকিৎসকদের নিয়ে বৈঠক বা এমন ধরনের বিশেষ কর্মসূচিতে অভিষেককে আগে যোগ দিতে কখনও দেখা যায়নি। সেই কারণেই আরজি কর কাণ্ডের পরবর্তী পর্যায়ের সঙ্গে এই উদ্যোগকে জুড়ে দিচ্ছে বিভিন্ন মহল। যদিও অনেকের মতে, এর সঙ্গে আরজি করের ঘটনা এবং তৎপরবর্তী চিকিৎসক আন্দোলনের কোনও যোগসূত্র নেই বরং সাধারণ মানুষের কাছে চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়াই এর মূল লক্ষ্য। আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে শুরু হওয়া চিকিৎসক আন্দোলনকে সমর্থন করে প্রথম থেকেই জুনিয়র চিকিৎসকদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন অভিষেক। এবার ‘ডক্টর্স সামিট’-র মধ্য দিয়ে পারস্পরিক সুসম্পর্কের ভীত আরও মজবুত হতে পারে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।