কলকাতা হাইকোর্টের পর সুপ্রিম কোর্টও ২৫ হাজার ৭৫২ জন শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীর চাকরি বাতিলের পক্ষে রায় দিয়েছে। বিপুল সংখ্যক এই চাকরি বাতিলের ফলে হাহাকার শুরু হয়েছে রাজ্যজুড়ে। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অনেক চাকরিহারা থেকে শুরু করে তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও। হঠাৎ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে কী করে চলবে সংসার? ভেবে কুল কিনারা পাচ্ছেন না তাঁরা। শেষ ভরসা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কাছে কাতর মিনতি চাকরিহারাদের। তিনি কিছু একটা করুন, এই করুন আর্জি জননেত্রীর কাছে। সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে রাজ্যের চাকরিহারারা সমবেত হবেন। সেই সভায় উপস্থিত থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার পাশাপাশি একটি উপায় অন্তত খুঁজে বের করবেন, এই আশায় রয়েছেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত নেতা-মন্ত্রীর বাড়িতে ইডি বা সিবিআই হানা হোক কিংবা আরজি করে ধর্ষণ-খুন, বার বার পথে নেমেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কখনও তাঁদের হয়ে বিচার চেয়েছেন, বাবার কখনও কখনও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অতি সক্রিয়তার বিরোধিতা করেছেন। এমনকি তাঁর মুখে দিল্লিতে গিয়ে ধর্নায় বসার কথাও বার বার শোনা গিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, নিজের রাজ্যে ২৬ হাজার মানুষের চাকরি গিয়েছে। তাঁদের হয়ে তিনি কি পথে নামবেন না? ঝাঁপিয়ে পড়বেন না আগের মতো?
এই সভাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার থেকে জেলায় জেলায় চাকরিহারাদের বৈঠক শুরু হয়ে গিয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা এই বৈঠকে নির্ধারণ করা হবে। এই সভার আগের দিন রবিবার সন্ধ্যায় শহীদ মিনারের সামনে সমবেত হবেন তাঁরা। চাকরিহারা শিক্ষকদের সংগঠন ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’ সেখানে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করবেন। রাজ্যের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলিকেও এই সংগঠনের তরফে একটি বিশেষ বার্তা দেওয়া হতে পারে বলে সূত্রের খবর।
উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৬ সালের এসএসসি-র সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল হয়ে গিয়েছে। ফলে চাকরি হারিয়েছেন ২৫ হাজার ৭৫২ জন শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মী। তাঁদের সঙ্গেই সোমবার নেতাজি ইন্ডোরে সাক্ষাৎ করবেন বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এভাবে নবান্ন থেকে তিনি পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন চাকরিহারাদের। মমতা বলেছেন, ‘যাঁরা বঞ্চিত শিক্ষক অ্যাসোসিয়েশন তৈরি করেছেন, তাঁরা শিক্ষামন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন, আমি যাতে তাঁদের কাছে যাই। কথা শুনতে তো কোনও দোষ নেই। আমি তাঁদের কথা শুনতে যাব এবং বলতে যাব, ধৈর্য হারাবেন না। মানসিক চাপ নেবেন না।’
মমতার এই বার্তায় খুব একটা আশ্বস্ত হতে পারছেন না চাকরিহারারা। বরং তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্য সরকারকে একপ্রকার চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে চাইছেন। বলছেন, ‘যা করার করুন, আমাদের চাকরি ফিরিয়ে দিন।’
তবে শুধু শাসক তৃণমূল নয়, অন্য রাজনৈতিক দলগুলিকেও বার্তা দিতে চান চাকরিহারারা। তাঁদের কথায়, রাজ্য সরকার যা করার করুক, সুপ্রিম কোর্টে তারা কী বলবে, কী রিভিউ পিটিশন জমা দেবে, কত আইনজীবী লাগাবে, আমাদের সে সব দেখার দরকার নেই। আমাদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে যে করেই হোক। তার জন্য যা দরকার করুন মুখ্যমন্ত্রী। প্রত্যেক দলের মধ্যেই তো রাজনৈতিক বিরোধ রয়েছে। তা সত্ত্বেও আমাদের সঙ্গে অবিচারের প্রশ্নে তাঁরা সকলে একমত হয়েছেন। আমরা চাই, আমাদের জন্য সব রাজনৈতিক দলের নেতারা এক জায়গায় বসুন। তবেই তাঁদের উদারতা বোঝা যাবে। আমরা বিচার পাইনি। বিধানসভা ভোটকে সামনে রেখে আমাদের নিয়ে রাজনৈতিক খেলা হয়েছে। এই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা সকলে মিলে করুন।