কলকাতা হাইকোর্টের  ধাঁচে জেলা আদালত

অরণ্যসুন্দরী জেলায় গড়ে উঠল

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: চোখে কালো ফেটটি, হাতে দাড়িপাল্লা। ন্যায়বিচার এখান থেকে পাওয়া যাবে। হ্যাঁ আদালতের কথা বলছি। তবে এটা দেখতে অবিকল কলকাতা হাইকোর্টের মতো। কিন্তু সেটা কলকাতা হাইকোর্ট নয়। এমনই আদালত তৈরি হয়েছে ঝাড়গ্রাম জেলায়। এক পলকে দেখলে তা কলকাতা হাইকোর্টের কথাই মনে করাবে। কারণ, লাল আস্তরণে মুড়ে ফেলা ওই আদালত কলকাতা হাইকোর্টের ধাঁচেই তৈরি হয়েছে। জেলার মানুষকে আর ছুটে আসতে হবে না-শহরে। ওই আদালতেই বিচারের জন্য তাঁরা দ্বারস্থ হতে পারবেন। মিলবে বিচার। এতদিন যে সমস্যায় জঙ্গলমহলের মানুষ ছুটে আসতেন তিলোত্তমা কলকাতায়। এবার সেটাই ধরা দেবে ঝাড়গ্রামে।

অরণ্য সুন্দরী এই জেলা অনেকদিন ধরেই একটা সঠিক আদালতের দাবি করছিল। এবার সেই দাবি মিটতে চলেছে ঝাড়গ্রামবাসীর। চারিদিক গাছে ঘেরা মেঠো পথ ধরে এবার ঝাড়গ্রামবাসী বিচারের আশায় পৌঁছে যেতে পারবেন জেলার এই সুদৃশ্য আদালতে। যেখানে বিচারের আশায় গ্রামীণ মানুষ থেকে আদিবাসীরা একলপ্তে সুবিধা পাবেন বিচারের কাজ করার। জাতীয় পতাকা মাথায় ওড়া ওই আদালত সাক্ষী থাকবে গ্রাম বাংলার নানা বিচারের।


এই আদালতে থাকছে ১৭ টি কোর্টের কক্ষ, ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে কলকাতা হাইকোর্টে হাজিরা দেওয়ারও ব্যবস্থা, রয়েছে সিবিআই আদলতও। এছাড়াও এই নবনির্মীত আদালতে ৭টি লিফট থাকবে এবং পুরো আদালতেই থাকছে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা। গোটা আদালত চত্বর মুড়ে ফেলা হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরায়।

ঝাড়গ্রাম জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তথা ঝাড়গ্রাম জেলা আদালতের সরকারি আইনজীবী প্রশান্ত রায় বলেন, ‘আগামী ২৭ জুলাই উদ্বোধন হতে চলেছে নতুন এই জেলা আদালতের। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি, রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক সহ একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০১১ সালের পর আমরা কয়েকজন আইনজীবী রাইটার্স বিল্ডিংয়ে রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নতুন কোর্ট বিল্ডিং নির্মাণের জন্য আবেদন জানিয়েছিলাম। সেই সময় তিনি ঝাড়গ্রামে যে নয়া আদালত তৈরি হবে তার মডেল দেখিয়েছিলেন। সেই মডেল আজ বাস্তবে রূপান্তরিত হয়েছে। প্রায় ৮৮ থেকে ৮৯ কোটি টাকা খরচ করে কলকাতা হাইকোর্টের আদলে তৈরি হয়েছে ঝাড়গ্রাম জেলা আদালত। সেই রূপরেখা অন্যান্য জেলার কাছে দৃষ্টান্ত।’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা থেকে ২০১৭ সালে বিভক্ত হয়ে গঠিত হয়েছিল ঝাড়গ্রাম জেলা। ঝাড়গ্রাম জেলা গঠিত হওয়ার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ থেকে শুরু করে একাধিক সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল উপহার পেয়েছে ঝাড়গ্রাম। এবার কলকাতা হাইকোর্টের আদলে নতুন জেলা আদালত উপহার পেল এই জেলা। জানা গিয়েছে, এই ৬ তলার বিশিষ্ট জেলা আদালতে থাকছে ১৭টি এজলাস, জিআরও অফিস, এপিপি অফিস, পিপি অফিস, জিপি অফিস, ঝাড়গ্রামের দু’টি বার অ্যাসোসিয়েশনের জন্য দু’টি কক্ষ থাকছে। পাশাপাশি সন্তানকে স্তনপান করানোর জন্য বিশেষ ঘরের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়াও জেলা আদালতে প্রবেশের জন্য পাঁচটি প্রবেশদ্বার থাকছে। তার মধ্যে তিনটি প্রবেশদ্বার থাকবে সাধারণ মানুষের জন্য। একটি প্রবেশদ্বার বিচারকদের এবং অপরটি অভিযুক্তদের জন্য।

জানা গিয়েছে, জেলা জজের আদালত থাকছে একটি, অতিরিক্ত জেলা জজের আদালত থাকছে পাঁচটি, সিজেএম আদালত একটি, এসিজেএম একটি আদালত, জেএম-এর তিনটি আদালত, জুনিয়ার জজ সিভিল দুটি এবং সিনিয়র জজ সিভিল দুইটি আদালত রয়েছে। এছাড়াও থাকছে সিবিআই আদালত এবং কমার্শিয়াল আদালত।