নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: দিল্লি থেকে ফিরেই ফের স্বমূর্তিতে দিলীপ ঘোষ। তিনি মুখে কিছু বলছেন না। অথচ কাজে করে দেখাচ্ছেন। ছুটছেন বর্ধমান, মেদিনীপুর, খড়গপুর ব্যারাকপুর, বারাসত, মুর্শিদাবাদে। রাজ্যজুড়ে এইসব এলাকায় একের পর এক কর্মসূচি করছেন। এই নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে জল্পনার সৃষ্টি হয়েছে। ঠিক কী বোঝাতে চাইছেন রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি।দলের রাজ্য সভাপতি এখনও সুকান্ত মজুমদার। তিনি আবার সদ্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় রাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন।
জানা যাচ্ছে, শীঘ্রই দলের নতুন রাজ্য সভাপতির নাম ঘোষণা করা হবে। তবে সেই পদে ফের দিলীপ বাবুকে অভিষিক্ত করবেন এমন সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। কারণ এর আগে দিলীপবাবু দুইবার রাজ্যসভাপতি থেকেছেন। বারবার রাজ্য সভাপতি হিসেবে একই ব্যক্তিকে বসানো দলের রীতি বিরুদ্ধ। রাজ্য বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকেও এরকম কোনও ঘোষণা বা খবর নেই।
আগামী ১০ জুলাই রাজ্যের চার বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। কলকাতার মানিকতলা, উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ, নদীয়ার রানাঘাট ও উত্তর ২৪ পরগণার বনগাঁ লোকসভার অন্তর্গত বাগদা। এই চার কেন্দ্রে উপনির্বাচনের আগে দিলীপবাবু কি ফের একবার জ্বলে ওঠার চেষ্টা করছেন? নাকি মোদী-নাড্ডা-অমিত শাহদের এটা একটি অ্যাসিড টেস্ট? নিরলস দিলীপ ঘোষের একের পর দলীয় কর্মসূচি দেখে সেরকমই মনে করছে রাজ্যের রাজনৈতিক মহল। কারণ, সোমবারেই তিনি মালদহে দলীয় বৈঠক করেছেন। এই দিনের বৈঠকের তালিকায় রয়েছে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জও। যেখানে ১০ জুলাই উপনির্বাচন। এদিন সন্ধ্যায় জলপাইগুড়িতেও কর্মসূচি রয়েছে তাঁর।
যদিও দিলীপবাবু রাজ্য সভাপতি থাকাকালীনই বাংলায় গেরুয়া শিবিরে যত বাড়বাড়ন্ত। ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে বিজেপির ঝুলিতে ছিল মাত্র ২টি আসন। ২০১৯ সালের নির্বাচনে বাংলায় এক ধাক্কায় ১৮টি লোকসভা আসনে জয়লাভ করে বিজেপি। এর আগে বিধানসভায় বিজেপির আসনসংখ্যা দুই অঙ্ক স্পর্শ করতে পারেনি। কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দিলীপবাবুর সভাপতিত্বে আসন সংখ্যা বেড়ে হয় ৭৭টি। যা রাজ্যের সিংহভাগ মানুষের চিন্তার বাইরে। কিন্তু এই ২০২১ সালেই দিলীপ ঘোষকে বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি করে বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদারকে নতুন রাজ্য সভাপতি করা হয়। প্রাক্তন অধ্যাপক সুকান্তবাবুর সভাপতিত্বে হয়েছে রাজ্যের দুইটি নির্বাচন। একটি, ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং অন্যটি ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন। সাদামাটা নিখাদ ভদ্রলোক সুকান্তবাবুর নেতৃত্বে কিন্তু রাজ্য বিজেপির উন্নতি হয়নি। বরং লোকসভা ভোটে গেরুয়া শিবিরের আসন সংখ্যা ১৮ থেকে কমে ১২টি হয়ে গিয়েছে।
এখন ফের রাজ্য বিজেপি-তে দিলীপ বাবুর বাধা না মানা আকস্মিক উত্থান নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে দলের ভিতরে ও বাইরে। রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি দিলীপবাবুকে ফের নতুন কোনও ভূমিকায় ব্যবহার করতে চাইছে বিজেপি? নাকি ফের তাঁকে দলের সভাপতি পদে ফিরিয়ে আনা হতে পারে? জল্পনা কিন্তু বেড়েই চলেছে।
এদিকে লোকসভা ভোটে রাজ্যে চরম বিপর্যয় এবং তাঁর জেতা কেন্দ্রে প্রার্থী না করার ফলে সেই আসনের অগ্নিমিত্রার ভরাডুবি। এমনকি দিলীপবাবুকে যে কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছিল সেখানেও তিনি জয়লাভ করতে পারেননি। এই নিয়ে বার বার সংবাদ মাধ্যমের সামনে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। দলীয় সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নাকি দিলীপবাবুকে সংযত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁকে নাকি বলা হয়েছে, লোকসভা ভোটে দল ভালো ফল করেনি। এরকম অবস্থায় সংবাদ মাধ্যমের সামনে অযথা মুখ খুলে দলকে বিব্রত না করতে। বরং সংগঠনের কাজে মনোনিবেশ করে হারানো জমি পুনরুদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছেন। আরএসএস-এর একান্ত অনুগত দিলীপবাবু বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতাদের উপদেশ মেনে বাধ্য ছেলের মতো ফের সংগঠনের কাজ করে চলেছেন।