• facebook
  • twitter
Thursday, 19 December, 2024

অক্ষয় তৃতীয়াতে উদ্বোধন হবে দিঘার জগন্নাথ মন্দির, জানালেন মমতা

এদিন দিঘা জগন্নাথ মন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

দিঘা সফরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: এএনআই।

দিঘায় নির্মীয়মাণ জগন্নাথ মন্দির পরিদর্শন করে উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী বছর অক্ষয় তৃতীয়ার দিন এই মন্দিরের উদ্বোধন হবে। উদ্বোধনের দিন উপস্থিত থাকবেন মমতা। বুধবার তিনি জানান, এবার থেকে দিঘার জগন্নাথ মন্দির থেকে রথযাত্রা শুরু হবে। রথযাত্রায় ব্যবহৃত সোনার ঝাড়ুর তৈরির জন্য নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে ৫ লক্ষ টাকা দেবেন মুখ্যমন্ত্রী।

এদিন দিঘা জগন্নাথ মন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে ১৩ জন সদস্য বিশিষ্ট এই বোর্ড কাজ করবে। বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে থাকছেন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক, জেলার পুলিশ সুপার, ইসকন ও সনাতন ধর্মের প্রতিনিধি এবং দিঘার জগন্নাথ দেবের মন্দিরের পুরোহিত। তবে এই বোর্ডে মমতা থাকছেন না। তিনি জানান, দিঘায় জেলা পরিষদের ভবন পুলিশ পোস্ট হবে। সম্পূর্ণ সরকারি উদ্যোগে এই মন্দির তৈরি হচ্ছে। তাঁর কথায়, ”সমুদ্রসৈকতে একটি জগন্নাথ মন্দির তৈরি করব বলে ঠিক করেছিলাম। আমার সঙ্গে সরকারি আধিকারিকেরা ছিলেন। তিন বছর পর সেই কাজ শেষ হল।” মমতার দাবি, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে তৈরি দিঘার এই জগন্নাথ ধাম সারা ভারতের পর্যটকদের নজর কাড়বে। যদিও পুরীর মন্দিরের সঙ্গে এই মন্দিরের তুলনা করতে নারাজ মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, পুরীর মন্দির রাজাদের আমলের। আর এই মন্দির সরকার গড়েছে। মন্দিরে ভোগঘর, স্টোর রুম, গেস্ট রুম সবই আছে।

আর ৩ মাসের মধ্যে দিঘার জগন্নাথ ধাম তৈরির কাজ শেষ হবে। উদ্বোধনের ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকে শুরু হবে পুজো। মমতা জানান, মন্দিরের আশপাশে ব্যবসা করতে পারবেন সনাতন ধর্মের মানুষ। দোকানগুলিতে পাওয়া যাবে প্যাঁড়া, গুজিয়া, গজা ইত্যাদি। সেল্ফ হেল্প গ্রুপের মেয়েদের ব্যবসা করার জন্য ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। পুরীর মন্দিরের মতো এখানেও ধ্বজা তোলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দিঘার মন্দিরের প্রবেশদ্বারে থাকবে চৈতন্যদেবের মূর্তি। দিঘার জগন্নাথ ধামের মূল দরজাটি থাকবে চৈতন্যদ্বারে। সেই জায়গার নাম হবে ”চৈতন্যদ্বার জগন্নাথ ধাম”।

২০১৯ সালে দিঘায় পুরীর মন্দিরের আদলে জগন্নাথ মন্দির তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন মমতা। সেই সময় কোভিড থাকায় কাজ শুরু হতে কিছুটা দেরি হয়। অবশেষে ২০২২ সালে মন্দির তৈরির কাজ শুরু করে হিডকো। ২২ একর জমির উপর এই মন্দির তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যেই মন্দির তৈরিতে প্রায় আড়াশো কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এদিন হিডকোকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ”এখানে আমি কোনও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ চাই না। আমি কিন্তু ট্রাস্টের মেম্বার নই। এখানে যা করছি স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে করছি। বাকিটা ট্রাস্টির সদস্যেরা করবেন।”

উল্লেখ্য, ৩ দিনের সফরে মঙ্গলবার দিঘায় এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার দিঘার জগন্নাথ মন্দির পরিদর্শনে যান তিনি। তাঁর সঙ্গে প্রশাসনির আধিকারিক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কলকাতা ইসকনের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাধারমণ দাস। গোটা মন্দির চত্বর তিনি খুঁটিয়ে পরিদর্শন করেন। কীভাবে বিগ্রহ তৈরি হবে, কীভাবে দর্শনার্থীদের ভিড় সামাল দেওয়া হবে তা নিয়ে খোঁজখবর নেন।
বুধবার দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের দিনক্ষণ ঘোষণার পর ‘ইন্ডিয়া’র একাধিক শরিক দলের নেতাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন মমতা। মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ড নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবির পর ‘ইন্ডিয়া’র নেত্রী হিসেবে মমতার নাম উঠে এসেছে। উদ্ধব ঠাকরে, লালুপ্রসাদ যাদব সহ একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতারা মমতাকে নেতৃত্বে আনার পক্ষে সওয়াল করেছেন। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মমতা বলেন, ‘আমাকে এতোটা সম্মান দেওয়ার জন্য সকল নেতৃত্বকে ধন্যবাদ। সকলে ভালো থাকুন। সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করি। সব রাজনৈতিক দল ভালো কাজ করুক। আমি চাই ইন্ডিয়া জোটও ভালো কাজ করুক। এটাই আমি চাই।’ উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগে একটি সাক্ষাৎকারে মমতা জানিয়েছিলেন, শরিকরা চাইলে কলকাতায় বসেই বিরোধী জোটকে নেতৃত্ব দিতে তিনি রাজি আছেন।

এদিন মমতার জগন্নাথ থাম পরিদর্শনের আগে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছিল দিঘা চত্বর। স্পিড বোট নামিয়ে চলেছে নজরদারি। পাশাপাশি সিভিল ডিফেন্স, নুলিয়া ও পুলিশবাহিনীর তদারকি ছিল চোখে পড়ার মতো। মমতার ৩ দিনের দিঘা সফরের জন্য সুরক্ষা বাহিনীর তিন হাজারেরও বেশি কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। বুধবার জগন্নাথ মন্দিরের সামনেও বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল।