‘ফরেক্স ড্রেন অ্যান্ড ব্রেন ড্রেন’। বর্তমান সময়ে ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি দেওয়ার প্রবণতাকে এই বলেই কটাক্ষ করলেন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়। রবিবার রাজস্থানের সীকরে একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগদান করেন তিনি। সেখানেই ধনখড় এরকম মন্তব্য করেন। পাশাপাশি ধনখড় বলতে চেয়েছেন তরুণ প্রজন্মের এই প্রবণতার ফলে একইসঙ্গে দেশের অর্থনীতি ও শিক্ষাক্ষেত্রে সমৃদ্ধির সম্ভাবনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ভারতীয় পড়ুয়াদের এই প্রবণতাকে ভয়ানক বলে মন্তব্য করতে চেয়েছেন ধনখড়। অনেক সময় বিদেশের সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কে যথাযথ তথ্য সংগ্রহ না করেই পড়ুয়ারা সেখানে পড়তে চলে যান। কিন্তু সেখানে পৌঁছে তাঁদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাঁর কথায়, ‘যে বাচ্চারা বিদেশে পড়তে যাচ্ছে, তাদের মধ্যে এক নতুন রোগ দেখা যাচ্ছে। এই ছেলেমেয়েরা আন্তরিকভাবে শুধুমাত্র বিদেশেই যেতে চাইছে। তারা নতুন স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু, যে দেশে বা যে প্রতিষ্ঠানে তারা পড়তে যাচ্ছে, সেই সম্পর্কে কোনও খোঁজ নিচ্ছে না।’
চলতি বছর ভারত থেকে কতজন পড়ুয়া বিদেশে পড়তে গিয়েছেন তার একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়। তিনি জানান, চলতি বছর এখনও পর্যন্ত ভারত থেকে অন্তত ১৩ লক্ষ পড়ুয়া বিদেশে পড়তে গিয়েছেন। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যমে ভারতকে প্রায় ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার খরচ করতে হয়েছে। এই টাকা ভারতীয় শিক্ষা ক্ষেত্রে পরিকাঠামো উন্নয়নে ব্যবহার করা হলে দেশের উন্নতি হত বলে মনে করেন ধনখড়। তাঁর বার্তা, বিদেশের শিক্ষা পরিস্থিতি সম্পর্কে পড়ুয়াদের অবহিত করার জন্য ভারতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে মাঠে নামতে হবে। ভারতে থেকেই যে তাঁরা কর্মক্ষেত্রে বিরাট উন্নতি করতে পারবে সেটা বোঝানোর দায়িত্বও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকেই নিতে হবে।
তিনি মনে করেন, ভারতীয় পড়ুয়ারা কেবলমাত্র নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্ষেত্রেই কাজের চেষ্টা করেন। তাঁর কথায়, ‘তরুণরা মূলত আট থেকে ১০ ধরনের কাজের পিছনেই দৌড়য়। কিন্তু, অন্যান্য বিভিন্ন ক্ষেত্রেও উন্নতির বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। প্রত্যেক দিন সেই পরিসর আরও বড় হচ্ছে। কিন্তু, আমাদের দেশের অধিকাংশ পড়ুয়া সেই সম্পর্কে কিছুই জানে না।’ এবিষয়ে পড়ুয়াদের সঠিক তথ্য জানানোর বার্তা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে দেন জগদীপ ধনখড়।
এদিন জগদীপ ধনখড় অভিযোগ করেন, শিক্ষা বর্তমানে ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এটা দেশের ভবিষ্যতের জন্য মোটেও ভালো নয়। কর্পোরেট সামাজিত দায়িত্ব তহবিলের অর্থ শিক্ষা ক্ষেত্রের উন্নয়নে ব্যবহার করার জন্য বিভিন্ন কর্পোরেট সংখ্যাগুলির প্রতি আবেদন করেন উপরাষ্ট্রপতি। তাঁর কথায়, ‘সময়ের সঙ্গেই সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এই শিল্পের দায়িত্ব।’