চলতি বছরের জুন মাসে আগুন লেগে ভস্মীভূত হয়েছিল আলিপুরদুয়ারের ঐতিহ্যবাহী হলং বনবাংলো। তারপর থেকেই ওই একই জায়গায় একই ধাঁচে ফের বাংলোটি তৈরির জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ দাবি করেছিল উত্তরবঙ্গের কয়েকটি পর্যটন ব্যবসায়ী সংগঠন। বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই বাংলোটি নতুন করে তৈরির ব্যবস্থা শুরু করেছে বন দপ্তর।
ইতিমধ্যেই নবান্নে বনবাংলোটির কয়েকটি নকশা জমা পড়েছে। জানা গিয়েছে, মোট চারটি নকশা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এই চারটি নকশা খতিয়ে দেখে যে কোনও একটিকে বেছে নেবেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার বেছে নেওয়া নকশা অনুযায়ী বনবাংলোটি তৈরি করবে বন দপ্তর।
বাম জমানায় বনের অন্দরে কোনও সরকারি বাংলো বা অফিস নির্মাণের দায়িত্ব থাকত পর্যটন দপ্তরের উপর। কিন্তু হলং বনবাংলোটি আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যাওয়ার পর নতুন করে বাংলো নির্মাণের উদ্যোগ নেয় প্রশাসন। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বনের কোর এলাকায় যে কোনও নির্মাণের দায়িত্ব থাকবে বন দপ্তরের হাতে। সেই নিয়ম মেনে হলং বনবাংলোর নতুন করে তৈরির দায়িত্ব নেয় বন দপ্তর।
আগুন লাগার পর বাংলোটি নতুন করে নির্মাণের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ চেয়ে তাঁকে চিঠি পাঠিয়েছিল উত্তরবঙ্গের অন্যতম পর্যটন সংগঠন ‘হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড টুরিজ়ম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক’। চিঠিতে তারা দাবি করেছিল, হলং বনবাংলো উত্তরবঙ্গের অন্যতম হেরিটেজ বাংলো, তাই পুরোনো নির্মাণশৈলী ও নকশার আদলেই যেন তা তৈরি করা হয়। নকশা অনুমোদনের সময় উত্তরবঙ্গের এই সংগঠনটির দাবির কথা মাথায় রাখতে চাইছে নবান্ন।
হলং বনবাংলোটি ষাটের দশকের শেষের দিকে তৈরি কর হয়। মূলত কাঠ দিয়ে তৈরি এই বাংলো প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর খুবই পছন্দের ছিল। সময় পেলেই হলং বনবাংলোয় এসে ছুটি কাটাতেন তিনি। জ্যোতি বসুর পাশাপাশি রাজ্যের বহু পর্যটকের পছন্দের জায়গা ছিল এটি। চলছি বছরের ১৮ জুন তারিখে আগুনে ভস্মীভূত হয় গোটা বনবাংলোটি। আগুনে সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেটি।
বর্তমানে ফের বাংলোটিকে নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে। তবে হলং বনবাংলোর পুরোনো আভিজাত্য বজায় থাকবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পরিবেশপ্রেমীদের দাবি, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে কাঠ দিয়েই বাংলোটি নির্মাণ করা উচিত। এ বিষয়ে বনমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা বলেছেন, ‘আমাদের দপ্তর থেকে চারটি নকশা পাঠানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে। সেখান থেকে অনুমোদন এলেই আমরা কাজ শুরু করে দেব। সব ক্ষেত্রেই আমরা পরিবেশের কথা মাথায় রাখব।’