আজ কোলকাতা প্রেস ক্লাবে অখিল ভারতীয় কিষাণ সংঘর্ষ সমন্বয় সমিতি (AIKSCC), পশ্চিমবঙ্গ শাখা আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের সব কৃষকের সব কৃষিজাত উৎপাদনের জন্য গ্যারান্টিযুক্ত লাভজনক ন্যুন্যতম সহায়ক মূল্যের আইনী নিশ্চয়তার জোরাল দাবি ওঠে। AIKSCC–র নেতৃত্ব বলেন,
পশ্চিমবঙ্গ কৃষি নির্ভর রাজ্য এবং কৃষিই রাজ্যের অর্থনীতির মূল ভিত্তি। প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষভাবে কৃষির ওপরেই অধিকাংশ মানুষ নির্ভরশীল।
রাজ্যের প্রায় ৬৮% শতাংশ ভূমি কৃষি কাজে ব্যবহৃত হয় এবং ৬০% এর বেশি মানুষ কৃষির সাথে যুক্ত। রাজ্যের জি ডি পি’র ২৭% শতাংশই আসে কৃষিক্ষেত্র থেকে।
কিন্তু সারা দেশের মত পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরা ভাল বিনিয়োগ ও ভালো ফলন সত্বেও পর্যাপ্ত আয় করতে পারছে না। তাই তাদের অবস্থা ক্রমাগত অবনতিশীল।
কৃষির খরচ ক্রমশ বেড়ে কৃষকদের স্বল্প সঙ্গতির বাইরে চলে যাচ্ছে।
কৃষকরা তাদের কৃষিজাত উৎপাদনের জন্য যে দাম পাচ্ছে তার থেকে উৎপাদন খরচ বাদ দিলে যা আয় হচ্ছে, তা দিয়ে পরিবারের মৌলিক চাহিদাগুলোও পূরন করতে পারছেনা।
এই দুর্দশার জন্য রাজ্যের কৃষক এবং কৃষি শ্রমিকরা দেনার জালে জড়িয়ে পড়ে, কৃষি থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে, ভিক্ষাবৃত্তি গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে। তা থেকে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং প্রশাসনিক সমস্যা সহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে এবং কৃষক আত্মহত্যার পথে হাঁটতে বাধ্য হচ্ছে।
আমাদের দেশের সংবিধান মোতাবেককৃষকদের ও কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষা করতে এবং কৃষিকাজকে যথাযথভাবে সুরক্ষিত করতে রাজ্য সরকার বাধ্য।
জীবন যাপনের অধিকারকে বাস্তবায়ন ও জীবিকার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য নীতি নির্ধারণ এবং উপযুক্ত আইন প্রণয়ন ও লাগু করে কৃষকদের দুর্দশা রোধ করাও রাজ্য সরকারের সাংবিধানিক কর্তব্য।
জাতীয় কৃষি কমিশন লাভজনক মূল্যের যে নীতি সুপারিশ করেছে যাতে পরিষ্কার বলা আছে যে সব খরচ ধরে উৎপাদন ব্যয়ের সাথে কমপক্ষে তার ৫০% শতাংশ যোগ করে ফসলের নুন্যতম দাম নির্ধারণ করতে হবে।
নেতৃত্ব আরও বলেন, কৃষিক্ষেত্রের এই দুরবস্থা দূর করতে ও সাংবিধানিক কর্তব্য পালন তথা জাতীয় কৃষি কমিশনের সুপারিশকে বাস্তবায়িত করতে পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত কৃষককের (অর্থাৎ যারা নিজ মালিকানার জমিতে বা অন্যের জমিতে অর্থনৈতিক কারণে এবং জীবিকা নির্বাহের জন্য কৃষি কার্যকলাপে নিযুক্ত এবং ফসল উৎপাদন বা অন্যান্য প্রাথমিক কৃষি উৎপাদন করেন এবং কৃষিকাজের যে কোন ধারায় কাজ করছে এমন ব্যাক্তি, চাষী, কৃষি শ্রমিক, ভাগ চাষী, জমি লিজ নিয়ে চাষ করা ব্যাক্তি, হাঁস-মুরগি ও পশুপালনকারী, মৎস্যজীবী, মৌমাছি পালনকারী, পশু চারণকারী, অ-কর্পোরেট প্লানটার এবং প্লান্টেশন শ্রমিক, বনজ উৎপাদন সংগ্রাহক, মহিলা কৃষক, সম্মিলিতভাবে চাষ করছে এমন কৃষক গোষ্ঠী, উৎপাদনকারী সমবায়, স্ব-সহায়ক গোষ্ঠী ইত্যাদি) ।
সমস্ত কৃষিজাত উৎপাদনের (অর্থাৎ শস্য, সব মিলেট, সব ডাল, সব তেলবীজ, সব ফাইবার ফসল, ফল ও সবজি, সব বাগানজাত ফসল, সব মসলা ফসল, সব কন্দ ফসল, সব ওষধি গাছ, সব ধরনের দুধ, সব ক্ষুদ্র বনজ উৎপাদন, ফুলের চাষ, ঘাস, পশুখাদ্য ঘাস ও গাছের উৎপাদন, নার্সারি উৎপাদন, সমস্ত প্লান্টেশন উৎপাদন, সমস্ত গবাদি পশু এবং পশুজাত দ্রব্য যেমন মাংস, ডিম এবং পোলট্রি, গেঁড়ি-গুগলি ঝিনুক, সামুদ্রিক মাছ সহ সমস্ত মৎস্যজাত উৎপাদন, মিষ্টি জলের জলজ উৎপাদন, মধু, রেশম গুটিপোকা এবং অন্যান্য সমস্ত প্রাথমিক কৃষিজাত উৎপাদন ও তার সহজাত সমস্ত উপাদানসমূহ) জন্য গ্যারান্টিযুক্ত লাভজনক ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি অধিকার পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে দিতে হবে।
এই দাবি জানিয়ে অখিল ভারতীয় কিষাণ সংঘর্ষ সমন্বয় সমিতির পক্ষ থেকে রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে এবং AIKSCC দ্বারা প্রস্তুত গ্যারান্টিযুক্ত লাভজনক ন্যুন্যতম সহায়ক মূল্যে (এম এস পি) নিশ্চয়কারী আইনের খসড়া পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অবিলম্বে রাজ্যের সব কৃষকদের সব ফসলের জন্য ঐ আইন বিধানসভায় পাশ করিয়ে দ্রুত রাজ্যে চালু করার দাবি জানানো হয়েছে। অন্যথায় রাজ্যে কৃষকরা জোরালো আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে, সে কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে।
AIKSCC–র সর্ব ভারতীয় সম্পাদক অভীক সাহা, রাজ্য সম্পাদক কার্ত্তিক পাল, রাজ্য কার্যনির্বাহী গ্রুপের সদস্য সমীর পুততুণ্ড, তুষার ঘোষ, প্রদীপ সিং ঠাকুর, সুশান্ত ঝা, সুভাষ নস্কর, সঞ্জয় পুততুণ্ড প্রভৃতি নেতৃত্ব সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন।খসড়া আইন ও মূখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠির প্রতিলিপি সংযুক্ত করা হল।