• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

বউবাজার বিপর্যয় কাণ্ডকেই দায়ী করলেন মৃত অঞ্জলি মল্লিকের পরিবার

বউবাজার বিপর্যয়ে প্রথম মৃত্যু। তবে বাড়ি ভেঙে নয়, বিপর্যয়ের শােক সহ্য করতে না পেরেই মৃত্যু হয়েছে সাকরা পাড়ার বাসিন্দা এক প্রবীনার।

বউবাজার বিপর্যয়ে প্রথম মৃত্যু। তবে বাড়ি ভেঙে নয়, বিপর্যয়ের শােক সহ্য করতে না পেরেই মৃত্যু হয়েছে সাকরা পাড়ার বাসিন্দা এক প্রবীনার। নিজের বাড়ি নিজের এলাকা ছেড়ে হােটেলের এক কামরার ঘরে উঠে আসতে হয়েছে মল্লিক পরিবারকে। পরিবারের বাকি সদস্যদের সঙ্গে অশিতীপর বৃদ্ধা অঞ্জলি মল্লিকও হােটেলের ঘরে এসে ওঠেন।

বউবাজারের দীর্ঘদিনের বাড়ির চরম ক্ষতি চোখের সামনে দেখেন প্রবীনা। শারীরিক অসুস্থতা ছাড়াও মেট্রো কাণ্ডে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি বলে দাবি তার পরিবারের। এর পাশাপাশি মেট্রো কর্তৃপক্ষের বন্দোবস্ত করা খাবারও খেতে বাধ্য হন বৃদ্ধা। ঘরেয়া রান্না খেয়ে অভ্যস্ত অঞ্জলি মল্লিকের হােটেলের রান্না করা খাবার গত এক সপ্তাহ ধরে খাচ্ছিলেন। শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েই শেষ পর্যন্ত মৃত্যু হয় ৮৫-এর অঞ্জলি মল্লিকের বলে দাবি কয়েছেন তার পরিবার পরিজন।

গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে মঙ্গলবার রাতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বুধবার সেখানেই বৃদ্ধার মুত্য হয়েছে। বউবাজার বিপর্যয়ে মায়ের মৃত্যুতে মেট্রো কর্তৃপক্ষকে কাঠগড়ায় তুলেছেন অঞ্জলি দেবীর পরিবার। তাদের আরও দাবি মেট্রো কর্তৃপক্ষ যে হােটেলে তাদের স্থানান্তরিত করে তার পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর। হােটেলের যে ঘরে বৃদ্ধাকে রাখা হয়েছিল সেখানে একটিও জানালা নেই। বদ্ধ ঘরে থেকেই অঞ্জলি মল্লিক অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন বলে অভিযােগ মৃতার পরিবারের। 

বউবাজারে বিপর্যয়ের জেরে ৬৮২ জনকে নিজের ঘর বাড়ি চেনা পরিসর, চেনা চৌহদ্দি ছেড়ে উদ্বাস্তুর মতাে হােটেলের এক চিলতে ঘরে উঠে আসতে বাধ্য হয়েছেন। তিল তিল করে গড়ে তােলা সাজানাে সংসারে ভাঙন বিপর্যস্ত বাসিন্দারা কেউই মেনে নিতে পারছেন না। তাদের মধ্যে রয়েছেন আট থেকে আশি প্রায় সব বয়সের মানুষ, স্যাকরা পাড়া লেনের অধিকাংশই দীর্ঘদিনের বাসিন্দা। শারীরিক ও মানসিক বিপর্যয়ে ক্ষতিপূরণ টাকার অঙ্কে পরিশােধ সম্ভব নয় বলে আক্ষেপ করছেন বিপর্যস্তরা।

কবে নিজেদের বাড়ি ফিরতে পারে তা নিয়ে এখনও কোনও নিশ্চিত বার্তা মেট্রো কর্তৃপক্ষ দিতে পারেনি। হয় তৈরি হবে না হলে মেরামতি করে দেওয়া হবে বাড়ির মালিককে। কিন্তু কবে হবে তা জানেন না কেউই। অঞ্জলি দেবীও ছিলেন এদের মধ্যে একজন। যাকে নিজের বাড়ি ছেড়ে শরনার্থীর মতাে হােটেলের চার দেওয়ালের মধ্যে উঠে যেতে হয়েছে। চূড়ান্ত অব্যবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে শেষ বয়সে এসে বাধ্য হয়েছিলেন অঞ্জলি মল্লিক।

প্রথমে মধ্য কলকাতার একটি হােটেল এবং পরে এস এন ব্যানার্জি রােডের হােটেলের একটি বদ্ধ ঘর অস্থায়ী ঠিকানায় পরিণত হয় অঞ্জলি দেবীর পরিবারের। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও খাবার মানিয়ে নিতে বাধ্য হন প্রবীনা। যার জেরে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

তবে মৃতার পরিবারের দাবি নাকোচ করেছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। মেট্রোর এক আধিকারিক বলেন, বউবাজারের বাসিন্দাদের হােটেলে স্থানান্তরিত করা হলেও তাদের নিয়মিত খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে। অস্বাচ্ছন্দ্য বােধ করলে অন্য হােটেল দেখে সে সব পরিবারকে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে। বিপর্যস্ত পরিবারগুলির সমস্ত সুযােগ সুবিধার দিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। মেট্রোর পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনও এই বিষয়ে একমত। এমনকী ইতিমধ্যেই ক্ষতিপূরণের পাঁচ লাখ টাকা বেশিরভাগ পরিবারের হাতেই প্রদান করা হয়েছে।